somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যন্ত্রণা-১১

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তমার এত দুর্বল লাগতে থাকে, ও আবার ঘুমিয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে আম্মা এসে জোর করে তোলে। মাথা ধুইয়ে দেয়। গরম ভাত নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। তমা খেতে চায় না। কিন্তু ওষুধ খাওয়া লাগবে বলে জোর করে খাওয়ায়। খেয়ে-দেয়ে তমা বসে থাকে বিছানায়। আম্মা এসে বসে সামনে। জিজ্ঞেস করে, ‘'তমা কি হইছে তোর?’'
অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তমা, '‘কিছু হয় নাই আম্মা।’'
'‘মিথ্যা কথা বলিস না তমা। তোর চেহারা দেইখাই আমি কালকে বুঝতে পারছি কিছু একটা হইছে। লুকাইস না আমার কাছে।’'
‘'বুঝতে পারছো যখন জিজ্ঞেস করতেছো কেন আমাকে? কি বলবো তোমারে? কি হবে বইলা?'’
'‘কি হইছে তমা? মারুফ.....’' নামটা বলতে গিয়েও ভয়ে ভয়ে আম্মা থেমে যায়।
তমা চিৎকার করে ওঠে, '‘হ্যাঁ মারুফ। কি করছে মারুফ জানতে চাও? সহ্য করতে পারবা বললে? ধরে নেয়ে গেছিল আমাকে কালকে, বাসার সামনে থেকে। সারাদিন আটকায়ে রাখছিল আর......’' তমার গলা বুজে আসে। বলতে পারে না কথা, কাঁদতে থাকে। ভয়ে, আতঙ্কে আম্মা অস্থির হয়ে যায়, '‘কি হইছে তমা? কি করছে মারুফ?’'
‘'কি করছে বুঝ না? সবকিছু খুইলা বলতে হবে তোমারে?'’ কান্নার দমকে ছিটকে বেরোয় কথাগুলো তমার মুখ থেকে।
‘'এতকিছু ঘটছে তুই আমারে কিছু বলিস নাই। তুই নিজের মধ্যে সব হজম করতেছিস? আল্লাহ না করুক, এখন যদি কিছু হয়! তুই আমারে বলবি না আগে?’'
‘'এখন যদি কিছু হয় মানে কি আম্মা? কিছু হওয়ার কি বাকি আছে নাকি!’'
‘'কতবড় হাড়ে হারামজাদ, ওইদিন জুতার বাড়ি খাইয়াও শিক্ষা হয় নাই! ও তমা, কি হইলরে মা?’' আম্মা অধীর হয়ে কাঁদতে থাকে। তারপর হঠাৎ মনে পড়ে, '‘তোর আব্বারে তো জানানোই যাবে না। সাথে সাথে হার্ট এ্যাটাক করবে তাইলে। কি করবো আমি একা একা?’'
‘'আম্মা তোমার কিচ্ছু করা লাগবে না। তুমি যাওতো আমার রুম থেকে। যন্ত্রণা করবা না।’' তমার এত বিরক্ত লাগতে থাকে।
আম্মা আবার অস্থির হয়ে ওঠে, ‘'যদি কিছু হয়? যদি কিছু হয়ে যায়! মারে, তুই একটু শুয়্যা থাক। আমি আসতেছি।’' আম্মা তাড়াহুড়ো করে উঠে যায়, শাড়িটা কোনরকমে বদলেই বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
তমা শুধু দেখে, এখন আর অবাকও লাগে না। একদিনের মধ্যে এতকিছু ঘটে গেছে জীবনে যে বোধগুলো সব ভোঁতা হয়ে গেছে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত তমা শুয়ে থাকে বিছানায়।
আধাঘন্টার মধ্যে ফিরে আসে আম্মা। একটা পিল নিয়ে এসে তমাকে দেয়, ‘'নে, এইটা খেয়ে নে। আল্লাহ মান-ইজ্জত বাঁচানোর মালিক।’'
মান-ইজ্জত! রাগে মাথার ভেতর আগুন ধরে যায় তমার। কিন্তু কিছু বলে না। চুপচাপ পিলটা খেয়ে নেয়। আবর শুয়ে পড়ে। “"যদি কিছু হয়"” বলতে আম্মা কি বুঝাতে চেয়েছিল বুঝতে পারে। হ্যাঁ, তমা চায় না কোন অনাকাঙ্খিত বোঝা বয়ে বেড়াতে। আম্মাকেও আর কিছু বলে না। জানে, বলে লাভ নেই। জানে, আব্বাকে কিছুতেই জানানো যাবে না। লাভ হবে না, বরং উল্টো ক্ষতিই হবে। আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়বে। তমার চোখে আর পানি আসে না। শুধু ধক ধক করে জ্বলতে থাকে। অক্ষম রাগে, কষ্টে, দু:খে।

রাতে প্রিয়ন্তী ফোন করে। ওর দাদী অসুস্থ, ভোরেই রওনা হয়ে দেশের বাড়ি চলে যাচ্ছে ওরা। তমা অসহায়ভাবে বলে, ‘'তুই কেন যাচ্ছিস? আমি একা একা কিভাবে থাকবো!’'
‘'মন খারাপ করিস না তমা। আমরা দুই দিনের মধ্যে চলে আসবো। একটু শান্ত হ। এই দুইদিন কলেজে যাস না। আমি আসলে আমার সাথে যাবি।’'
‘'প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী.......তুই ছাড়া এখন কেউ বুঝবে না আমাকে। তোকে আমার খুব দরকার পাশে। তুই যাস না, প্লীজ যাস না।’'
‘'তমা, লক্ষ্মীসোনা......অস্থির হোস না। আমি তোর সাথেই আছি। সবসময়। তুই কিচ্ছু ভাবিস না। আমি ফিরে আসি। সব ঠিক হয়ে যাবে।’'
তমা কিছু বলে না। শুধু কাঁদতে থাকে চুপচাপ। প্রিয়ন্তীও নিরবে ফোন ধরে রাখে। ফোনের দুইপাশে দুই বান্ধবীর নি:শ্বাসের শব্দ শোনা যায় শুধু।

চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৫২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×