somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তা সত্যিই মুক্তা। দেখেই প্রাণটা ভরে গেল।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ঐ তুই কই রে?"
"আমি বাসায় দাদি"
"বাসায় কী করস?"
"কম্পিউটারে মুভি দেখতাছি।"
" কী বলছিস এইসব, দুই দিন পর না তোর পরীক্ষা"
"পড়তে ভালো লাগছে না দাদি।"
"দাদু না ভালো, পড়তে বস। আর শোন, তোকে একজন দেখতে চাচ্ছে, তোর লেখার বেশ ভক্ত।"
"আমাকে দেখতে চাচ্ছে, আমার লেখার ভক্ত, কে বলো তো?"
"আমার বাড়িঅলার মেয়ে, আমি ওকে কথা দিছি তোকে নিয়ে আসবো- তুই কবে আসবি বল?"
মেয়ে ভক্তের কথা শুনে ভেতরটা চিলিক মাইরা উঠল।
"কখন গেলে সুবিধা হয় বলো তো?"
"সময় থাকলে আজ সন্ধ্যার দিকে আয়। চিইনা আসতে পারবি তো?"
"হুম পারবো। ঠিক আছে, আজই আসবো। তুমি কথা দিছ, তা তো রাখতেই হয়। আর শুন, তোমার কী খাইতে ইচ্ছা করে বলো তো?"
" আমার কিছুই খাইতে ভাল্লাগে না, বেশি টাকা পয়সা নষ্ট করিস না, পারলে কয়টা আঙুর নিয়া আসিস।"

আমার গাড়ি-চালক সালাম ঠিক ঠাক মতো কল্যাণপুরে একেবারে দাদির বাসার সামনে নিয়েই আমাকে নামিয়ে দিল।
আমাকে রিসিভ করার জন্য দাদি গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি গাড়ি হতে নামতেই 'দাদু ভাই আমার' বলে পরম মমতায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, চল ভিতরে চল।
"তুমি এইখানে এই খুপড়ির ভিতরে থাক কি কইরা দাদি?"
"আর বলিস না, এই খানে ওরা সবাই আমার দেখা-শুনা করে, আমাকে অনেক ভালোবাসে রে।"
দাদি তার বাড়িঅলার মেয়েকে আনতে চলে গেলেন। আমি দাদির বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
দাদির মাঝ-বয়সের সাদা-কালো বহু পুরনো একটা ছবি দেয়ালের এক পাশে ঝুলে আছে।
আমি পলকহীন চোখে বেশ কিছু সময় সেই ছবির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কিছু সময় পর দাদি আমার ভক্ত পাঠিকাকে নিয়ে হাজির। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, "ওর নাম মুক্তা।"
মুক্তা সত্যিই মুক্তা। দেখেই প্রাণটা ভরে গেল।
মুক্তা এক পলক আমার চোখের দিকে তাকিয়েই দৃষ্টি নামিয়ে নিল। লজ্জায় মরে যাচ্ছে সে।
"আমার লেখা তোমার ভালো লাগে?"
সে মাথা উপর নিচ করল- জ্বি।
"কোন ক্লাসে পড় তুমি?"
"ক্লাস টেইন-এ।"
"গুড, ঠিক মতো লেখা পড়া করবে।"
দাদি মুক্তার হাতে ফলের প্যাকেটগুলো দিয়ে বললেন, যা, ধুয়ে কেটে-কুটে নিয়ে আয়।
মুক্তা কয়েকটি প্লেটে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে কয়েক প্রকারের ফল আমার সামনে নিয়ে এলো।
একটু পর এলো মুক্তার মা। তার পর আরও কয়েকজন। একের পর এক গল্প চলছে।
.....সেদিন ফিরতে রাত দশটা হলো। বিদায় বেলায় দাদি আমার মাথা মুখমণ্ডল-এ পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মুক্তা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দাদি আমাকে গাড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে গেলেন।

একদিন লেকচার থিয়েটারের সামনে দাদির সাথে দেখা। আমাকে ধমকের সুরে বললেন, তুই কই থাকিস বল তো, তোকে ফোন দিলেই বিজি পাই। শুন, তোর জন্য একটা কলম এনেছি, তোর আগামী লেখাটা এই কলম দিয়ে লিখবি।
আমি হাত বাড়িয়ে দাদির দেয়া কলমটি হাতে নিলাম। পকেট থেকে টাকা বের করে বললাম, "নাও, দাম রাখো।"
"মারবো এক চড়, এটা তোকে আমি গিফট দিয়েছি। তোর পরবর্তী লেখা আমার এই কলম দিয়ে লিখবি।"
-প্রতিদিন ক্যাম্পাসে গেলে একবারের জন্য হলেও দাদির সাথে দেখা হতো আমার। হয়, দাদি আমাকে ফোন দিতেন, নয় তো আমি ফোন দিতাম তাকে। বলতেন- তোকে না দেখলে ভালো লাগে না রে দাদু। তুই যত কষ্টই হোক ক্যাম্পাসে এলে আমার সাথে একটু দেখা করে যাইস। তোদের নিয়েই তো আমি বেঁচে আছি রে দাদু। তোরা না থাকলে আরও অনেক আগেই চলে যেতাম। তোরা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার তো আর কেউই নেই।
দাদির চোখে জল চলে এসেছে। এসেছে আমার চোখেও...........

হায় কলম দাদি, প্রিয় কলম দাদি আমার, এই পৃথিবীতে যে ক'জন মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহে সিক্ত হয়েছি, আপনি তাদের একজন। দোয়া করি পরপারে শান্তিতে থাকুন। ভালো থাকুন। আমরা আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে যাবো চিরকাল।.......
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×