somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার যাকাত ফেতরা সদকা যারা খায়, তারাই কি আপনার সন্তানকে জবাই করার হুমকি দিচ্ছে ?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মাদ্রাসা বৃত্তান্ত :
আমার বাবা ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংএ প্রতি মাসে এক মণ করে চাল দান করতেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মায়ের কাছে এসে একই দাবি করল মাদ্রাসার শিক্ষকরা। তখন আমাদের আর্থিক সমস্যা প্রবল। আমার মা অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমার মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে চলে গেল। আমার মা তাদের সেই আচরণে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। আমরাও দুঃখ পেয়েছিলাম। কারণ আমরা জানতাম, ওই মাদ্রাসার শুরু থেকে নির্মাণ কাজে প্রচুর টাকাও দান করেছিলেন আমার বাবা। তারা আমার বাবার সেই দানের কথা মনে রাখেনি।
আমার বাবা যে ধর্মপ্রাণ ছিলেন, তার প্রমাণ হল তিনি আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম, সেখানে কোন ধনী ঘরের সন্তান নাই। প্রায় সব ছাত্র হল গরীব ঘরের। এমনকি অনেকে এতিম। এদের থাকা খাওয়ার কোন জায়গা নেই। আমার সেই মাদ্রাসায় আমি ছিলাম সবচেয়ে ধনী ঘরের ছেলে।
তখনই আমি বুঝে যাই, তাদের খাই খাই স্বভাব। আমার পেছনে ঘুর ঘুর করত ছাত্ররা। আমারা পাঞ্জাবি পুরোনো হওয়ার আগেই কে নেবে তার হিসাব করত। আমার টাকা পয়সাও চুরি হত।
আমি মাদ্রাসায় বেশি দিন টিকতে পারি নি। কারণ হুজুরদের নোংরা ব্যবহার। তারা অসম্ভব ক্ষিপ্ত থাকত সব সময়। কোন কারণ ছাড়াই বেধড়ক পেটাত ছাত্রদের। কোন অপরাধ করলে ভয়ংকর মার দেয়া হত। যারা পালিয়ে যেত, তাদের অনেককে অভিভাবকরা ফেরত দিয়ে যেত। তখন তাদের শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত।
একবার আমি হুজুরের কাছে বেড়াতে যাবার জন্য ছুটি চাই। হুজুর আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তিনি আমার বাবা মা তুলেও কথা বলেন। তার আচরণ আমার খুব খারাপ লাগে। আমার বাবার দানে যেই লোক চলে, সে তো আমার বাবাকে গালি দিতে পারে না।
আমি মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে চলে আসি। মাদ্রাসায় ফেরত যাওয়ার জন্য অনেক মার খেয়েছি। কিন্তু আমি আর মাদ্রাসায় ফেরত যাই নি।সেই ছোটকালেই বুঝে গিয়েছিলাম, এরা অমানুষ।

আমাদের মসজিদ বৃত্তান্ত :

আমাদের মহল্লায় একটা মসজিদ আছে। কিভাবে সেই মসজিদ গড়ে উঠল সেই কাহিনীটা বলি। এক লোকের জায়গার মাঝখান দিয়ে মহল্লার রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার যেপাশে তার বাড়ি, তার উল্টো পাশে তার সামান্য জায়গা। আধ শতাংশের কম হবে সেই জায়গা। মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে যাওয়ায় তার ওই জায়গা কোন কাজে লাগাতে পারছিলেন না।
রাস্তার ওই পাড়ের জায়গার সঙ্গে লাগোয়া তার প্রতিবেশীর সঙ্গে ছিল শত্রুতা। তিনি তার প্রতিবেশীকে ফাসিয়ে দেয়ার জন্য রাস্তার ওই পাশের জায়গায় একটা ছাপড়া ঘর তুলে মসজিদ বানিয়ে দিলেন। মহল্লাবাসীকে বোঝালেন, তিনি মসজিদের জন্য জায়গা দান করেছেন। এখন এই মসজিদের জন্য প্রতিবেশী ভদ্রলোকেরও জায়গা দান করা দরকার। প্রতিবেশী ভদ্রলোক বাধ্য হয়ে সামান্য জায়গা দান করলেন মসজিদের জন্য। প্রথম যিনি মসজিদের জন্য জায়গা দান করেছিলেন তিনি হয়েছিলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি। তিনি কিছুদিন পর মসজিদ সম্প্রসারণ করার কথা ঘোষণা করলেন। প্রতিবেশী ভদ্রলোক এবার আর জমি দিতে রাজি হলেন না। ফলে সেই লোকের বিরুদ্ধে তিনি মহল্লাবাসীকে খেপিয়ে তুললেন। মহল্লাবাসী সবার বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক কিছুই করতে পারলেন না। তিনি বাধ্য হয়ে তার বাড়ি ঘরের জায়গা মসজিদে দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে চলে গেলেন। এভাবেই মসজিদের নাম করে প্রতিবেশীর সর্বনাশ করলেন এক ভদ্রলোক। ধর্মকে পুজি করে কিভাবে মানুষের সর্বনাশ করা যায় তার চাক্ষুস স্বাক্ষী হয়ে রইলাম।

লিল্লাহ বোর্ডিং বৃত্তান্ত :
আমাদের কাছের মাদ্রাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং আছে। লিল্লাহ বোর্ডিং কী ? লিল্লাহ বোর্ডিং হল এতিমখানা। পিতৃমাতৃহীন অসহায় এতিম ছেলে মেয়েরা এই সব লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে খাওয়া এবং থাকা ফ্রি পায়। এই লিল্লাহ বোর্ডিং বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির দান দিয়ে চলে। কোরবানী ঈদে পাওয়া চামড়া তাদের একটা বড় আয়। এই জন্য কোরবানীর ঈদের আগে তারা ব্যাপক পোস্টারিংও করে।
আমার ভায়রা ভাই বিপুল টাকার মালিক। তিনি লিল্লাহ বোর্ডিংএ প্রচুর দান করেন। একদিন তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হল। আমি জানতে চাইলাম, তিনি কেন লিল্লাহ বোর্ডিংএ দান করেন। তিনি বললেন, তিনি এতিম ছাত্রদের সাহায্য করতে চান। আমি বললাম, আপনি তো তাদের সর্বনাশ করছেন। তিনি জানতে চাইলেন, কিভাবে ? আমি বললাম, আপনি কি নিজের ছেলেকে ওই লিল্লাহ বোর্ডিংএর পড়তে দিবেন ? তিনি আমার কথা শুনে ক্ষেপে উঠলেন। তিনি বললেন, এই সব লিল্লাহ বোর্ডিং এ পড়ে আমার ছেলেরা কি সারা জীবন ভিক্ষা করে বেড়াবে ?
আমি বললাম, আপনার নিজের সন্তানকে যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারবেন না, সেই রকম প্রতিষ্ঠানে আরেকজনের সন্তানকে কেন পড়তে বলবেন ? এটা কি ন্যায্য আচরণ হল ?
বুঝতে পারলাম, তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন।
আমি আরও বললাম, তারচেয়ে বরং এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যেখানে এতিম ছাত্রদের সঙ্গে আপনার সন্তানও পড়াশোনা করতে পারবে। তারা এমন শিক্ষা গ্রহণ করবে, যেই শিক্ষার কল্যাণে তারা জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা পাবে। ভিক্ষা করে খেতে হবে না। মিলাদ পড়িয়ে, কোরান পড়ে বা মোয়াজ্জিনগিরি করে অপরের অনুগ্রহে তাদের জীবন কাটাতে হবে না।
আমার ভায়রা ভাই সম্মত হয়েছেন। আমরা এমন একটি এতিমখানা গড়ে তুলব, যেখানে এতিম ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। তারা নিজের পায়ে দাড়ানোর মতো শিক্ষা পাবে। তারা কখনও অপরের গলগ্রহ হয়ে জীবনযাপন করবে না।
মাদ্রাসা শিক্ষার নাম আমাদের দেশে যা চলছে এটা জঙ্গী তৈরি করছে। এটা ভিক্ষুক তৈরি করছে। এটা এমন একটা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করছে যারা ধর্মান্ধ, গোয়ার এবং উগ্র। এই শিক্ষা ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা যায়, ততই ভালো।
আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, যারা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ইসলামী দলের শীর্ষ নেতা, তারা তাদের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ান, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য ইউরোপ আমেরিকায় পাঠান। তারা যদি মাদ্রাসা শিক্ষাকে ভালো শিক্ষা বলে মনে করতেন, তাহলে নিজের সন্তানকে কেন পড়ান না ?

আমাদের সদকা বৃত্তান্ত :

আমার এলাকায় এক লোক আছেন, যিনি মসজিদের দান সংগ্রহ করেন। দান সংগ্রহ করার নিয়ম হল, একশত টাকা সংগ্রহ করতে পারলে তিনি ২৫ টাকা পান। অর্থাৎ মসজিদের দানে তার কমিশন হল ২৫%। সুতরাং তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইক লাগিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেন, দিয়া যান ভাই, দিয়া যান। তিনি কখনও বাসে উঠে পড়েন। বাসযাত্রীদের কাছ থেকে মসজিদের নাম বলে দান গ্রহণ করেন। তিনি নানা মসজিদের জন্য কাজ করেছেন।
একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, যত বেশি মসজিদ হবে, ততই তার জন্য ভালো। এই জন্য তিনি মসজিদ করার উপযোগী জায়গা খুজে বেড়ান। রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, খেয়াঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদিতে সরকারী খাস জায়গা পেলে তিনি একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। কেউ বাধা দেয় না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলে কেউ বাধা দেয়ার কথা চিন্তাও করে না। তারপর তার ২৫% করে কমিশন আয় চলতে থাকে।

এবার আমার সিদ্ধান্ত :
জঙ্গী জামাত শিবির তৈরির প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং মসজিদে যাকাত, ফেতরা, দান সদকা করব না। আমার টাকায় খেয়ে পড়ে তারা আমার সন্তানকে জবাই করবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না। আমরা তাদের ভিক্ষা দিয়ে দিয়ে মোটাতাজা করে তুলেছি।তারা যা পড়ে, সেটা পড়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু করাও সম্ভব না। ফলে এই শিক্ষারও দরকার নাই। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে মাদ্রাসা নামে জঞ্জাল নাই। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশেও মাদ্রাসা নামে জঙ্গী তৈরির কারখানা নাই। যার ইসলাম সম্পর্কে জানার ইচ্ছা তারা ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে পড়বে।
আমি সেই দানব, সেই ফ্রাইকেনস্টাইন তৈরি করতে রাজি না, যা আমার সন্তানের জীবন কেড়ে নেবে। আজ থেকে সকল যাকাত ফেতরা সদকা নামের সকল ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ।
এবার আপনি ভেবে দেখেন, আপনার সন্তানের গলায় যারা ছুরি চালাবে, তাদেরকে যাকাত ফেতরা সদকা দিয়ে মোটাতাজা করে তুলবেন ?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৫
২৩টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×