somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যথেষ্ট দূর্নাম নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ বেশি কথা বললে তাকে দোষ দেয়া হয়। আর চুপ থেকে দোষের পাল্লায় পড়ে আমাকে যথেষ্ট দুর্নাম নিয়েই হাছন আর শাহ আবদুল করিমের সুনামগঞ্জের পথে রওনা হতে হল। প্রাণবন্ত মানুষ শওকত ভাই, এটিএনের শওকত মিল্টনের এই আন্তরিক দোষারোপ অবশ্য বেশ ভালোই লাগছিল।
খুব সকালের ঘুম ভাঙ্গা, দীর্ঘ ভ্রমণের আগে ছোটখাটো আরেক ভ্রমণ সেই গুলশান এবং তার পর পরই মাত্র পনেরো মিনিটের কথা বলে আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্টানের পরিচালকের পাক্কা সোয়া একঘন্টা একটা দীর্ঘ ব্রিফিং হজম। ভাবটা এমন ফ্রিতে যাইতেছেন একটু বাষণ শুনতেই হইবো। এসবসহ যাবতীয় ধকল শেষে শওকত ভাইয়ের চেঁচামেচি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে দিয়েছিল জীবনের প্রথম রওনা হওয়া কোনও মিডিয়া ট্যুরের।
যাত্রা শুরুর কথা সকাল আটটায়। কিন্তু বাঙ্গালী সময় জ্ঞানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে সেটা শুরু হলো সাড়ে দশটায়। তার আগে, আমাদের পৌঁছার কথা ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টায় হলেও বাঙ্গালী সময় জ্ঞানের প্রতি আরো এক্সট্রা পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি পৌঁছালাম ৯টায়।
সবাইকে নিয়ে গাড়ি রওনা হল গুলশান থেকে। বাড্ডা রামপুরা বিশ্বরোড দিয়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে গাড়ি চলে যাবে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে।
ভ্রমণের মূল শর্ত হল দেখা। তাই গাড়িতে ওঠে সবাই প্রথম কিছুক্ষণ দেখাদেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ভ্রমণের মূল শর্ত পূরণ করতে গিয়ে চেনা ঢাকাও সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে আরম্ভ করলেন। এ দেখাদেখির চোখে এসে বাদ সাধলো চোখের সামনে হঠাৎ ধরা চলতি পথের প্রথম আপ্যায়ন হিসেবে আসলো অ্যাপেল আর কমলা। বাইরে কি আছে তা দেখার চেয়ে সবাই মোটামুটি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কমলা আর আপেলের আবরণের ভেতরে কি আছে তা দেখার জন্য।
গাড়ি চলছে। যাব, গাড়ি চলে না... চলেনা উচ্চারণে দেশ কাঁপানো বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সুনামগঞ্জে। হাছন রাজার সুনামগঞ্জে। ঘরবাড়ি ভালো না যে হাছনের তার বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। আমরা যাচ্ছি সেই দিকে, যেখানে এক সময় শাহ আবদুল করিম সুন্দর দিন কাটাতেন। তবে তার এলাকায় কেমন কাটবে তা এখনও শিওর না হলেও আমাদের এ যাত্রায়, এই মাইক্রোবাসের ভেতরে দিনটা সুন্দরই কাটতে লাগল। গাড়ির ভেতরে ছিলেন বেশিরভাগই মিডিয়াকর্মী। শওকত ভাইয়ের কথাতো আগেই বললাম। সঙ্গে ছিলেন অগ্রজ সাংবাদিক বিপ্লব মোস্তাফিজ। ছিলেন আরটিভির ঝুমুর বারি, চ্যানেল আইয়ের পান্থ রহমান, ডেইলি স্টারের ইমরান। সঙ্গে তিন চ্যানেলের তিন সাংবাদিকের সহকারী স্বজন, রানা এবং রফিক। ছিলেন আমন্ত্রণ জানানো প্রতিষ্ঠানের দুই সুহৃদ মাসুম ভাই এবং সুব্রত দা আর একজন অস্ট্রেলিয়ান এডুইনা এছাড়াও একটি এনজিও থেকে আসা অদৃ নামের একজন।
গাড়ি চলছে। কখনও থেমে থেমে। কখনও দ্রুত গতিতে।
দুপুর নাগাদ গাড়ি হেলেদুলে পৌঁছাল অর্ধেক পথ। একটা হোটেলে নেমে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। সবাই ক্ষুধার্ত। রাতের বেলায় এ ক্ষুধা থাকলে পূর্ণিমা চাঁদকে হয়তো ঝলসানো রুটি ভেবে কিছুটা নিবারণের চেষ্টা করা যেত। কিন্তু দিনের বেলা হওয়ায় সূর্যকে নিয়ে সে কল্পনা করে নিজেই ঝলসে যাওয়ার রিস্ক নিতে কেউ রাজি হল না। কারণ, সবার চোখের সামনে ছিল হোটেলের ঝলসানো রুটি অথবা ভাতের আয়োজন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভ্রমণযাত্রী পাবদা মাছ দিয়েই সারল প্রথম খাবারায়োজন। খাওয়া শেষে আবার যাত্রা শুরু।
যাওয়ার এ অংশ ছিল আরও জমজমাট। শওকত ভাইয়ের যথারীতি মাতিয়ে তোলা। এবার তবে এক্ষেত্রে তিনি তার ভাষারীতি পাল্টে বরিশালীয় ব্যবহার করেছেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিপ্লব ভাইয়ের রাবিন্দ্রীক ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল বেশ উপভোগ্য। সঙ্গে যে যার মতো সহযোগিতা করেছে এই বাকযুদ্ধে। শুধু একজন ছাড়া। এনজিও কর্মী অদৃ। যিনি প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়েছেন। শওকত ভাইয়ের যন্ত্রণায় যার বারবার ঘুম ভাঙতে হয়েছে এবং সারাদিনই জেগে জেগে যিনি একটা কথাই বলেছেন, রাতে ঘুম হয়নি। রওয়ানা দেয়ার আগেও যিনি যথেষ্ট পেইন দিয়েছেণ। তাকে বারবার বলা হয়েছে গাড়ী যাবো রামপুরা-বাড্ডা বিশ্বরোড ধরে। সায়েদাবাদ দিয়ে বের হবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর তার প্রশ্ন, আচ্ছা এইটা কি মগবাজার দিয়ে যাবে?
সবার উত্তর না।
আবার তার প্রশ্ন এটা কী মগবাজার দিয়ে যাবে?
সবার একই উত্তর, না।
পরে জানা গেল তিনি তার বাসায় জানাবেন কোনদিক দিয়ে যাচ্ছেন। যার বাসা মগবাজার এর আশেপাশে হওয়ায় সেটা বাসায় জানালে সবার বুঝতে সুবিধা হতো। বাড্ডা রামপুরা বললে বাসায় আবার চিন্তায় পড়ে যেতে পারে।
একটা সময় অবশ্য ফাঁকে ফাঁকে সবাই কম-বেশি ঘুমিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় পৌঁছলাম আইউসিএন-এর লোকাল অফিসে। ক্লান্ত সবাই ঘুম ঘুম চোখে যখন বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিল তখন তাদের রাত্রীকালীন খাবার আয়োজন অনেকটাই ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে নিজ দায়িত্বে। আমরাও নিজ দায়িত্বে খাবার সেরে ঘুমাতে গেলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত গেস্ট হাউস সানক্র্যাডে।
ঘুমানোর আগে সেই শৈশবের রুটিনের মতো জানিয়ে দেয়া হল, সকাল ছটার মধ্যে উঠতে হবে। তাই ঘুমিয়ে তৃপ্ত হওয়ার আগেই অতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।

(চলবে)

ছবি: ১. জাদুঘাটা নদীর সামনে খাড়াইয়া আছি। ভ্রমণ কাহিনীর সাথে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়াইয়া লেখকের একটা ছবি দেয়া লাগে। এইটা সেই শর্ত পূরণের নিমিত্তে সংযোজিত।
২. এটিএন বাংলার সিনিয়র রির্পোটার, আলোচ্য ভ্রমণের প্রাণ শওকত মিল্টন
৩. ইহারা সেই পাখি, যাদের অতিথি পাখি বলা হয়। বিনা পাসপোর্টে আমাদের দেশ ভ্রমণ করিয়া যায় প্রতিবছর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×