বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন মেধাবী ছাত্র। উনাকে প্রশ্ন করলে উনিও বলবেন কোন না কোন মেস এ থাকার কথা। এভাবে এ দেশের সব মেধাবী ছাত্রদের যারা নিজ এলাকার বাইরে পড়লেখা করতে যায় সবার পড়ালেখার করতে থাকার বড় ব্যাবস্তা হচ্ছে মেস।
মেস থাকা অনেক কষ্টের, আবার ছাত্রদের সব বাড়িওয়ালা মেস ভাড়া ও দিতে চায় না।
যা হোক আসল কথা হচ্ছে মেস এ বেশীরভাগ ছাত্ররাই থাকে আর প্রতিটি ছাত্রের অধিকার আছে কোন না কোন আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত হবার। মেসের ছাত্রদের বেশিরভাগ গ্রামের দরিদ্র মা-বাবার সন্তান যারা টিউশনি করে তাদের পড়ালেখার খরচ চালায়। হলে সিট এখন সোনার হরিন, হলের সংশ্লিষ্ট ছাত্র রাজনীতি না করলে হলে সিট পাওয়া বড়ই কষ্টকর, তাই মেধাবী ছাত্রদের এখন ভাল আবাসস্হাল হল মেস। সুতরাং মেস থাকার ব্যাবস্তা বন্ধ করে দিতে পারলে এ দেশের শিক্ষা ব্যাবস্তা ধংস করা যায়, আর সেটা করলেই রাজনীতিবিদদের লাভ। এ দেশে শিক্ষার হার কম হলেই ওরা টাকা দিয়ে ভোট কিনে, সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় গিয়ে আন্গুল ফুলে কলা গাছ হতে পারবে।
এই মেস এর ছাত্রদের উপর নির্যাতন দেখেছিলাম ১৯৯৯-২০০০ সালে যার ফল ২০০১ এর নির্বাচনে মানুষ আওয়ামিলিগকে দিয়েছিল। সারা দেশে শিবির ধরার নাম করে সমস্ত মেস থেকে ছাত্রদের ধরে নিয়ে বিভিন্ন মামলা জুড়িয়ে দিত। তার মধ্যে শিবির করত হয়ত ৫০% আর ৫০% ই ছিল নিরিহ সাধারন ছাত্র। আর শিবির করলেই ধরতে হবে এমন কোন কথা না, তহলে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল করলেও ধরতে হবে অথচ সেটা হয় না। ২০০০ সালে আওয়ামিলীগ শিবির ধরার নামে চট্রগ্রাম-রাজশাহী সহ সারা দেশে বেশিরভাগ মেস এ অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নিরিহ ছাত্রকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছিল।
বকরের মৃত্যুর পর আমরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোন অভিযান তু দেখলামই না বরং তাকে পুলিশের টিয়ারসেলে মৃত্যু বলে চালিয়ে ছাত্রলীগকে বাচানোর চেষ্টা করল, অন্যদিকে শিবির নিধন অভিযান শুরু করল যখন ছাত্রলীগের একজন মারা গেল!!
শিবির হত্যা করে থাকলে অবশ্যই শিবিরের খুনিদের গ্রেফতার করে বিচার করা দরকার যেমনি বকরের হত্যাকারীদের ও বিচার করা দরকার। কিন্তু এর মানে এই নয় রাজশাহীর হত্যার জন্য সারা দেশে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানে অভিযান চালিয়ে শিক্ষা ব্যাবস্তাকে পঙ্গু করে দেয়া। রাজশাহীর ঘটনার পরে সারাদেশে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে যাতে করে সিলেট, চট্রগ্রামে, বরিশালের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টান বণ্ধ হয়ে গেছে। এইটার দরকার ছিল না। রাজশাহীতে অভিযান চালান আর প্রমানিত খুনিদের কেউ কোথাও পালিয়ে গিয়ে থাকলে পুলিশের গোয়েন্ধা সংস্তার সাহায্যে তাদের গ্রফতার করুন, সারা দেশে শিবির নাম করে মেস এ অভিযান চালিয়ে সাধারন ছাত্রদের হয়রানী করার মানে হয় না। ঢাকার শাহবাগ থেকে ঢাবির যেই ছাত্রদের গ্রফতার করল এদের অপরাধ কি? এরা মেস এ ছিল আর শিবির-ছাত্রলীগ করা কোন অপরাধ হতে পারে না।
এভাবে করে নিরপরাধিদের হয়রানী, নির্যাতন করে এ সরকার বেশী দিন ঠিকতে পারবে না। আমার মনে পড়ে ১৯৯৯-২০০০ সালের কথা, চট্রগ্রামে মেস এ থাকা মানেই শিবির কারা আর গ্রেফতার হয়ে কয়েকটা মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া। দাড়ি-টুপি পড়লেই জামাত-শিবির বলে গ্রফতার করা হয়েছিল, ছাত্র বয়সী কেউ দাড়ি-টুপি পড়লে, নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে তাকেই গ্রফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশের অফিসারদের মাঝে প্রতিযোগিতা ছিল কে কতজন এভাবে গ্রেফতার করে নিজেকে প্রমানিত করতে পারে।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেনে দাড়ি ওয়ালা দেখে শিবির মনে করে ছাত্রলীগ খুন করেছিল এক হিন্দু ছাত্র কে। এ সমস্ত নির্যাতন এর মানে হচ্ছে ক্ষমতার দিন শেষ, এখন যা করার করে নেই, আর তার জবাব পাইছিল ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামিলীগ। ২০০৯ এ মানুষ আওয়ামিলীগকে ভোট দেয় নাই, ভোট দিয়েছে চারদলের দুর্নীতি আর লুটতরাজের বিরুদ্ধে।
অতএব আওয়ামিলীগ এইটাকে ভুল বুঝলে আবারও ১৯৭৫' এর ক্ষেত্র তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না, এরপর হয়ত আর ২১বছর নয় চিরজীবনের জন্য আওয়ামিলীগ হারিয়ে যাবে।
নিজেদের ছাত্র সংঘটন ছাত্রলীগকে বাঁচানুর জন্য শিবির নাম করে সাধারন ছাত্রদের উপর নির্যাতন করে পার পাওয়া যাবে না, এই ছাত্ররাই ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯১ এর নায়ক। বরং নিজেদের ছাত্র সংঘটন ছাত্রলীগকে সংশোধন করাই ভাল, আর তা নাহলে পতন দুয়ারে কড়া নাড়বে তখন পালানোর পথ খুঁজে পাবে না এরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:০৯