somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুত্তার বাচ্চা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিক্সাটা অন্ধকার মত একটা যায়গায় থামিয়ে রিক্সাঅলা বলল,
'আর পারলাম না'
এই বলে তরিঘরি করে দেয়ালটা ঘেঁসে বসে পরল সে।
'আপনে একটু দাড়ান আমি পেশাবটা কইরা লই।'
আমি থতমত খেয়ে যাই,
ঠিক আছে আমি যাইগা।
এই বলে পকেট হাতরে খুজে পাই তিনটা দশ টাকার নোট বাদ বাকী সব পাঁচশো। ভাড়া হইল চল্লিশ টাকা।

দাড়িয়ে থেকে এই দৃশ্য দেখার চে পেছনের দোকানে ফ্লেক্সি লোড করতে গেলাম। আজকাল ফ্লেক্সি অলা পোলাটা দশটা না বাজতেই দোকানের ঝাপ ফেলে দেয়! ফিরে এসে আবার রিক্সায় উঠি, গলির শেষ মাথায় ছয় তলা সাদা বিল্ডিংটার পাঁচ তলায় আমার এপার্টমেন্ট। শীতের রাত, দারোয়ান ছেলেটা তারাতারি তালা লাগিয়ে শুয়ে পড়েছে। আমি গেটে দুইটা থাপ্পর দিলাম। গ্যারাজের কোনায় রফিকের ঘরে বাতি জ্বলে। রফিক চাবি হাতে চোখ ডলতে ডলতে গেইট খুলে দেয়।

... সিড়ির সামনে পাপশটায় একটা কুকুরের বাচ্চা শুয়ে থাকত প্রতিদিন। আমি সিড়িতে পা রাখলেই আমার পিছু নিয়ে পাঁচ তলায় উঠে আসত। সারাটা রাত আমার এপার্টমেন্টের দরজার সামনেই শুয়ে থাকত। দিনে যখন আমি বেরিয়ে যাই গলির মাথা পর্যন্ত আমার পিছু পিছু আসে। আমি রিক্সায় ওঠার আগে বলি, হইছে এইবার বাড়ী যাও। কি বুঝত কে জানে, উল্টা দিকে ঘুরে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিত রোলার।

মাস ছয়েক আগে রাতে বাড়ী ফিরেছি, সিড়ি ভাংতে শুনি একটা বাচ্চা কুকুরের কাঁই কুই। বিল্ডিং এর দারোয়ান দু'জন আর তাদের সাথে এক ড্রাইভার তিন জন মিলে কুকুরের বাচ্চা একটাকে এনে সিড়ির ঘরের কোনায় রেখেছে। ক'দিন পর দেখি কুকুরের গলায় একটা চামড়ার বেল্ট লাগিয়ে দিয়েছে ওরা সাথে একটা ঝুমঝুমি বেধে দিয়েছে। রফিক কে জিজ্ঞেস করি, এইটার নাম কি রফিক! রফিক বলে, নাম রাখছি স্যার 'রোলার'। আমি বলি, বাহ্ সুন্দর নাম। হ্যালো রোলার! রোলার আমার দিকে তাকায়। কুকুরের বাচ্চা বরাবরই দেখতে আমার ভীষন আদর লাগে!

এবার ঢাকায় যখন কইষা শীত পরতে ছিল মাঝে মাঝে রাতে এসে দেখতাম আমি ফেরার আগেই রোলার আমার দরজার সামনের পাপশটায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে! আমি আস্তে আস্তে দরজায় চাবি গলিয়ে টুক করে দরজাটা খুলতে খুলতে রোলার কে ফিস ফিস করে বলি, এক্সকিউজমি রোলার। একটু সাইড দিবা বাবা! রোলার ঘুম জড়ানো চোখে শরীরটা একটু সরিয়ে আমাকে ভেতরে ঢুকার যায়গা করে আবার ঘুমিয়ে যায়। ঘরের ভেতর একা আমি রাত জাগি। আমার দরজায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে একটি শিশু কুকুর।

অটোয়ায় ফোন করি। তখন কানাডায় সকাল দশটা ছোট মেয়েটা ফোন ধরে,
ববা তুমি কি কর!
টিভি দেখি।
মা কোথায় বাবা?
মা কাজে।
আপা?
আপা ঘুমায়।

শনিবার সকাল সকাল। বাচ্চা দুইটাকে বাড়ীতে একা রেখে জীবন যুদ্ধে বেরিয়ে পরেছে মীরা। বড় মেয়েটা ওর রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে। ছোট মেয়েটা একা একা নীচে সোফায় শুয়ে শুয়ে টিভি'র দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চই।

বাবা, কিছু খাইছ?
হ্যা, দুদু দিয়ে ছিল মা।
বাবা, গায়ে জামা পড়েছ?
না, কাথা গায়ে দিয়েছি।

লাইনটা কেটে যায়। আমার ফোনে আর কোন ব্যালেন্স নাই! ঢাকায় শহরে গভীর রাত। মনটা খারাপ হয়ে গেল খু্ব। কে জানে ঘরের দরজাটা ঠিক মত লাগানো আছে কিনা!

অস্থির লাগতে থাকে, ভীষন একা বোধ করতে থাকি। ঢাকা শহরে এবার ভীষন শীত পড়েছে। ঘরের দরজাটা খুলে এক টুকরা কাপড় রোলারের গায়ে চাপিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরে আসি। ...

আজ ক'দিন ধরেই আসতে যেতে রোলারকে আর দেখি না। এই ক'মাসেই রোলার কেমন বড় হয়ে উঠছিল। আমার এক হাতে স্টারের একটা কাচ্চি বিরিয়ানীর প্যাকেট আরেক হাতে পানি, রুটি আর কলা। সিড়ি দিয়ে ঊঠতে উঠতে রফিক কে জিজ্ঞেস করি,

রফিক কুত্তাটা কইরে, কয় দিন ধইরা দেখি না?
কুত্তাটা ত স্যার হেই দিন গাড়ীর তলে পরছিল।
মানে!
কুত্তাটারে একটা গাড়ী হেইদিন চাপা দিয়া মাইরা হালাইসে স্যার।

পাঁচ তলার সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল রোলারের কথা। দরজায় এসে কিচ্ছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম।

একাকী এই শহরে তবুও দরজায়
কেউ ত এক জন,
অন্তত আমার জন্য অপেক্ষয় থাকত!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪৭
১৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×