somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় বিশ্বাসের অধঃপতন ১

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পরিচ্ছেদ
একটি কথিত সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে মিঠুনের জন্ম, আজি হইতে একুশ বৎছর পূর্বে। তাহার ঠাকুরদাদার একটি কণ্যা ও পাঁচটি পুত্র। উক্ত পুত্র কণ্যাদিগকে ষড় ইন্দ্রিয় বলা বাহুল্য নহে। কারণ, তাহারা কেহই কাহারো মত ছিলেন না। ইহাদের মধ্যে পঞ্চম ভ্রাতা সুশান্তের পুত্রই হইল উক্ত গল্পের নায়ক মিঠুন। আজি সে কেন নাস্তিকতার পথ অনুসরণ করিল তাহাই বর্ণনার বিষয়।
মিঠুনের বয়স এক এক করিয়া পনের বৎসর পূর্ণ হইয়াছে। এমনি সময়ে এক শুভ কি অশুভ দিনে তাহার ঠাকুরমা গত হইলেন। তখনও তাহার মাধ্যমিক চুড়ান্ত পরীক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি। মৃত্যুর হইবার পর, শেষ দেখা দেখিবার জন্য দলে দলে যে সমস্ত আত্নীয়েরা আসিল তাহাদের মধ্যে একজন ছিল সৌমিত্র। মিঠুনের মেঝজেঠা দুলাল চক্রবর্তীর জ্যেষ্ঠ পুত্র।
সৌমিত্র পারিবারিক সম্পর্কের ব্যাপারে কিঞ্চিত (আসলে অনেকখানি) উদাসীন। তাহা নাহইলে, যখন সৎকার করিবার উদ্দেশ্যে উহাদের মৃত ঠাকুরমাকে নিয়ে যাওয়া হইল, তখন ফেলুদার কাহিনী পড়িতে পারে! যাহাহোউক, সৎকারকার্য সমাপ্ত হইল। ফিরিয়া আসিয়া মিঠুন উহার দাদা সৌমিত্রের সাথে কহিল, দাদা, ঠাকুরমা নিশ্চয় খুবই পুণ্যবতী ছিলেন। তাহা না হইলে অবশ্যই তাহার সৎকারে কোন না কোন সমস্যা ঘটিত। সৌমিত্র তাহার প্রত্যুত্তরে কহিল, যদি তিনি পাপিষ্ঠা হইতেন তাহা হইলে তুমি এইকথা এইভাবে না বলিয়া বলিতে, ঠাকুরমা পাপিষ্ঠা বলিয়াই তাহার ছবি তুলিতে যাওয়া মাত্রই ছবি তুলিবার যন্ত্রটি নষ্ট হইল (উল্লেখ্য যে ছবি তুলিবার যন্ত্রটি সত্যই নষ্ট হইয়াছিল)। কথাটি মিঠুনের মনে খুবই ধরিল। মনে ডাকিয়া কহিল ঠিকইতো কহিয়াছে সে। সত্যইতো, আমরা যখন কাহারো গুণ গাইতে শুরু করি তখন তাহার কোনো দোষই আমাদিগের মনে ধরে না। আবার যখন দোষ গাইতে শুরু করি তখন কোনো গুণই আমাদিগের মনে ধরেনা। ঐ সময় হইতেই মিঠুন উহার ঐ দাদাকে মনে মনে গুরুক্ত দিতে আরম্ভ করিল। যদিও কারণটা জনসাধারণের নিকট অতি তুচ্ছ হইতেই পারে। রাতে সৌমিত্র উহার সাথে অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ জমাইতে থাকে। বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়ই প্রাধান্য পায় উক্ত আলোচনায়। মিঠুন যতই শোনে ততই মুগ্ধ হয়। পরদিন সকালেও চলে আলোচনা। তাহারপর হইতে ১০ দিনের জন্য উহাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ঐ সময়টায় সৌমিত্রের কথাগুলো মিঠুন ভাবিতে থাকে।
আসলে সৌমিত্র ছিল নাস্তিক। ঐ নাস্তিকতার গল্পই মিঠুনকে সে শুনাইয়াছিল। গল্প শুনিবার পরক্ষণে তাহার মনের ভেতর অন্য ধরনের একটা চিন্তা আসিয়া পড়িল। ঈশ্বরের উপর ক্রোধ তার ক্রমশ বাড়িতে লাগিল। কি সব কথা শ্রী। যদি কেহ কোনোকিছু তৈরি করিতে পারে তাহলে উহা অবশ্যই বলিতে পারিবে সৃষ্টের বিবরণ। কথা সত্যই। ঈশ্বর পৃথিবী তৈরি করিতে পারিলে তিনি ইহা সম্পর্কে কেনইবা ভুল (আসলে মিথ্যা) তথ্য উনি দিবেন। সবচাইতে এই কথাটিই তাহার মনের ভেতরে গাঁথিয়া রহিল। আবার মনে হইতে লাগিল যদি ঈশ্বর থাকিয়া থাকেন তাহা হইলে কি উপায় হইবে। উহা খুবই দোটানার ভিতরে বাধিয়া গেল। মাথায় অন্যকিছুই আসিল না। আবার এসব কথা অন্যের সাথে আলোচনা করিবার সাহসও যোগাইতে পারিল না। তবে মনে মনে সৌমিত্রের উপরে কিঞ্চিত রাগ আসিতে লাগিল। মনে ভাবিতে লাগিল এবার আসিলেই উহাকে প্রশ্নে প্রশ্নে বিদ্ধ করিয়া ফেলিবে। কিছু প্রশ্ন যোগাড় করিয়াও ফেলিল এবং ভাবিল ইহার উত্তর সে কিছুতেই করিতে পারিবে না।
উহাদের পরবর্তী দেখা হইল উহার ঠাকুরমার শ্রাদ্ধের দিনে। সৌমিত্রকে বাগে পাইয়াই মিঠুন প্রশ্ন করিয়া বসিল, তাহা হইলে কি সব এমনি করিয়া আসিয়াছে? ইহা কি সম্ভবপর হইতে পারে? আমি তাহা হইলে কিরুপে সৃষ্ট? ধর্মগ্রন্থগুলো কিভাবে আসিল? শ্রীকৃষ্ণ কি কেহই নহে? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু উক্ত প্রশ্নের উত্তর সে আশানুরুপ পাইল না। সৌমিত্র কহিল, এমনি করিয়া আসে নাই, আসিয়াছে অন্য কোনো উপায়ে। যাহার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিয়াছে। যখন ধর্ম উল্টাপাল্টা বুঝাইয়াছে, তখন উহাকে বিশ্বাস কিভাবে করি। তোমাকে পরে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সম্পর্কে জানিবার জন্য পুস্তক দিব। তাহা হইতে জানিয়া নিও। তবে আপাতত এটাতো বিশ্বাস করিতেই হইতেছে যে অন্তত ঈশ্বর উক্ত ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেনাই! আমাদিগের সৃষ্টির কথাও বিজ্ঞান দিয়াছে। প্রমান সহ। যাহাতে কিঞ্চিত পরিমান ভুল নাই। কবিরা যেরুপ সাহিত্য লেখে সেরুপ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলো সৃষ্ট। ছোটগল্প, উপন্যাস, রুপকথা, বিশেষ করিয়া রুপকথার বই যদি পড়িয়া অভ্যাস থাকে এবং ঐ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়া ধর্মগ্রন্থগুলো পড়িলে যে কেউই ইহার ব্যাখ্যা করিতে পারে এবং নিজের ভাষায়। শ্রীকৃষ্ণ কেহ হইলেও কি তাহাকে মানা যায়? তাহা হইলে সমাজে নারী পুরুষের মেশার যে ব্যবস্থা তাহা উঠিয়া পৃথিবী বেশ্যাপল্লীর মত হইয়া যাইবে না?
মিঠুন বড় আহত চিত্তে প্রশ্ন বিধাইল, তাহা হইলে ঈশ্বরকে মানা যাইবে না? পৃথিবীতো পাপে পূর্ণ হইয়া যাইবে, কেহই পূণ্য করিতে চাহিবে না ঈশ্বরের ভয় না থাকিলে। ইহার উত্তরে সে সবচাইতে ব্যথাগ্রস্থ হইল। জানিল ধর্ম যাহারা মানে তাহারাই সবচেয়ে বেশি পাপকার্য করিতে পারে। কারণ, ধর্মেই রহিয়াছে পাপ হইতে মুক্তি পাইবার অজশ্র উপায়। যাহা যুক্তিবাদে নাই। বড় ব্যাথা পাইল মনে। ব্যাথিত চিত্তে পরের প্রশ্ন, ধর্ম বলিয়া কি তাহলে কিছুই নাই? এই প্রশ্নে সে অর্ধেক দুঃখ মোচন করিতে পারিল। সে জানিল হিন্দু-ইসলাম কাহারও ধর্ম হইতে পারে না। মানুষের ধর্ম হইল মানবতা, যাহা না থাকিলে মানুষকে আর মানুষ বলা যায় না।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×