somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিগ্বিজয়ী হাসি.....কবি আল মাহমুদ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঁচতে হলে অনেক কিছুই ফেলে রেখে দূরে সরে আসতে হয়। এ পর্যন্ত কী কী ফেলে রেখে চলে এসেছি তা ভাবলে অনেক সময় চিত্ত বিমর্ষ হয়ে পড়ে। আমি অতীত নিয়ে ভাবি না। কিন্তু লিখতে গেলে মাঝে-মধ্যে অতীতকে ঘুরিয়ে ধরতে হয়। আর সেটাই হয় লেখকের জন্য অনেক সময় অন্তর্জ্বালার কারণ। মানুষ আর তো ফিরে যায় না। না অতীতে না ভবিষ্যতে। কারণ, ভবিষ্যত্ হলো অজ্ঞাত রহস্যের আঁধার। সব যোগ-বিয়োগ হয়ে মানুষের হাতে থাকে কেবল বর্তমান। সে বর্তমান যিনি হজম করতে পারেন তাকে আমরা বাহবা দেই। আমি পারি না, তাই চুপ করে থাকি।

লোকে বলে ইনি অনেক জানেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লোকেরা আড়ম্বর দেখে ঘাবড়ে যায়।
কী জানি আমি? হিসাব করে দেখলে মাথা নুইয়ে বলতেই হবে আরে আমি তো কিছুই জানি না। না জেনেই এতকাল জানার ভান করে এসেছি। একজন লেখকের কাছের সবচেয়ে আপন যে মানুষ, সাধারণত তিনি লেখকের স্ত্রীই হয়ে থাকেন। আবার নাও হতে পারেন।

তিনি কিন্তু প্রায়ই লেখকের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে খোঁচা মারেন। বলেন, আরে তোমার মাথায় এই বিদ্যা নিয়ে তুমি জগত্ মাত করে বেড়াচ্ছ। অথচ আমি পরিয়ে না দিলে জুতার ফিতাও বাঁধতে জান না। এত কম জেনে দুনিয়াতে বোধ হয় লেখক ছাড়া আর কিছু হওয়া যায় না। আমি না থাকলে তোমার কী গতি হবে সেটা ভেবে আমার খুব কষ্ট হয় জান? আমি হেসে বলি এইটা জানি না বলেই তো আমি ভালো থাকি। জানলে বিরাগী হয়ে যেতাম।

আমি হিসাব করে দেখেছি পৃথিবীতে বাঁচার মানুষের যতগুলো কৌশল আছে এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ কৌশল হলো প্রিয়তমা স্ত্রীকে ঠকানো। অবশ্য অনেক স্ত্রী আছেন যিনি জেনেই ঠকেন এবং যখন সেই বিষয় নিয়ে একটি-দুটি খোঁচা দিতে থাকেন তখন মনে হয় আরে আকাশটা তো একটু কাঁত্ হয়ে আছে।
যাক লিখতে লিখতে গভীর স্মৃতির ভেতর পা পিছলে ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সামলে নেয়ার চেষ্টা করি। ফিরে আসার চেষ্টা করি। ফিরে আসি বটে। কিন্তু ফিরে আসার জায়গাটা আর চিনতে পারি না। আরে আমি এ কোথায় এসেছি। চারদিক থেকে ঝিঁঝির ঝঙ্কার ওঠে। তুমি কোথাও আসনি। কোথাও যাওনি। এ পর্যন্ত কোনো কিছু পাওনি।

আমি শূন্য হাতে ঘুরি। শূন্য হাতে লাটিম ঘুরাই। কিন্তু শূন্যে শূন্যে মিলিত হলে যে যোগফল শূন্য হওয়ার কথা তা না হয়ে যায় বহু অঙ্কের বিরাট একটা ছবি। আমি ভয়ে চিত্কার করে বলতে পারি না, পেয়েছি। আমার তো পাওয়ার কথা নয়। কেবল ফেলে চলে যাওয়ার কথা। আসলে এই জগতে ভাগ্যবান কারা সেটা ভাগ্যবানরা জানে না। কেবল টের পায় হতভাগ্যদের ঈর্ষাজনিত ফিসফাস শব্দে।

আমি যখনই নিজের কথা ভাবি তখন কেবল দেখি ফেলে চলে যাচ্ছি। কাকে ফেলে যাচ্ছি কী ফেলে গেলাম তা আমার মনে থাকে না। আমার স্মৃতি দুর্বল বলেই আমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আনন্দ উপভোগ করেছি। শুধু ঋণ করেছি আর ঘি খেয়েছি। একটা কথা আছে না, যাবত্ জিবেত্ সুখং জিবেত্/ঋণং কৃত্যা ঘৃতং পিবেত্। এখন মনে হচ্ছে আমি সঠিক কাজ করিনি। কারণ, পাওনাদারদের ঠেলে সরিয়ে দিলেও ঋণ তো আর ঠেলে সরানো যায় না। মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হলে ঋণ শোধ করে নিতে হয়। এ কথা বলা যাবে না আমি ঋণ শোধ করে নিয়েছি। পুরুষের ঋণ, নারীর ঋণ আর সমাজের ঋণ একদিকে শোধ হলে অন্যদিকে আপনা থেকেই বেড়ে যায়। এতে আর টাকা খাটাতে হয় না। পুঁজির দরকার নেই। এর মধ্যেই শ্বাস নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে একদিন দেখা যাবে আমি সংসারে সমাজে সর্বত্র সবচেয়ে ভালো ছিলাম। যখন ভালো ছিলাম তখন নিজের ভালোটা বুঝতে পারিনি। অনেকে আছেন ঋণ নিয়ে মেয়েদের ঠকাতে ভালোবাসে। মেয়েরাও যেন মনে হয় সর্বক্ষণ ঠকার জন্য ঠাট বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই যে ঋণ শোধের তাগাদা না দেয়া এটা একটা মস্ত বড় কৌশল। যখন দেখা যায় ঋণের বোঝা অপরিশোধ্য হয়ে উঠেছে তখন ঋণগ্রহীতা একটি অতি ক্ষীণ হাসির শব্দ শুনতে পায় এবং এই হাসিটি উত্সারিত হয় এমন এক রমনীরত্নের মুখাবয়ব থেকে যাকে তিরস্কার করলেও হাসির শব্দটা থেকেই যায়। ওই হাসি মিছরির ছুরির মতো কেবল হৃদয়ের ভেতরে রক্ত ঝরাতে থাকে।
তবু আমরা নারীকে বিশ্বাস না করে থাকতে পারি না। কারণ, অবিশ্বাসী নারীর চেয়ে বিশ্বাসী নারীর হাতে নিজেকে সমর্পণ করে পুরুষ চিরকাল স্বস্তি পেয়েছে। ছেড়ে দেয়ার মধ্যেই হলো আনন্দ, তৃপ্তি, তৃষ্ণা নিবারণ। নারীর সামনে জিদ ধরতে নেই। যেহেতু নারী কোনো জবাব দিতে জানে না সে কারণে প্রভু তাকে দখলের ক্ষমতা ষোলআনাই দখলে রাখার শক্তি দিয়ে গড়েছেন।

মেয়েদের ঠকাতে হলে তাকে ষোলআনা বুঝিয়ে ঠকাতে হবে। কারণ, মেয়েরা বুঝেই ঠকে। না বুঝেও ঠকে। তবে আমরা সেই না বুঝে ঠকার নাম দিয়েছি প্রতারণা। মেয়েরা ঠকলেও তার মধ্যে কোনো প্রতিরোধের প্রতিহিংসা নেই। আর জেনেবুঝে যারা ঠকে, মনে রাখতে হবে তারা জেতার জন্যই ঠকে। জেনে ঠকে মেনে ঠকে এবং দেখা যায় ঠকাতে ঠকাতে একদা জিতে যায়। তার মুখের হাসিটি দিগ্বিজয়ী হাসি।
লেখক : কবি
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×