somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গিবাদ এবং গরীবের বউ

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জঙ্গিবাদ এবং গরীবের বউ
সরকারের শেষ সময়ে এসে হঠাৎ জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। পত্র-পত্রিকার পাতার পর পাতা লেখা হচ্ছে জঙ্গি-কাহিনী। বিদেশী দূতদের ঘন ঘন সভা-সেমিনার হচ্ছে। রাজনীতিবিদগণ মাঝে মাঝেই তাদের সাথে আহারে মিলিত হচ্ছেন। এমন কি বিচারকগণও আগ্রহ সহকারে মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছেন। বাতাসে ভাসছে অন্যরকম গন্ধ, ভিন্ন ধরনের গুঞ্জণ। সচেতন মহল মনে করছেন এর পেছনে অন্য কোন খেলা কাজ করছে। প্রভুদের কথা আমাদের কাছে বেদবাক্যের মত। আর হবেই না কেন? আমরা যে গরীব! তাদের টাকায় দান-খয়রাতে আমাদের অর্থনীতি চলে। কথায় আছে গরীবের বউ সকলের ভাবী। বাঙ্গালী কালচারে ভাবীর সাথে সবারই একটু আধটু রসিকতা করার অধিকার আছে। তবে বাংলাদেশের অবস্থা মনে হয় আরো করুণ। মোড়ল রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক এমন- যেমনটা হয় ঋণগ্রস্ত খাতক আর মহাজনের। বৃদ্ধ মহাজনকে খুশি করতে যেমন নিজের নাবালিকা কন্যাকে মহাজনের কাছে তুলে দিতে হয়, তেমনি আমাদেরকেও তাদের অনেক অনৈতিক আব্দার মেনে নিতে হয়, তাদের মুখনিসৃত বেদবাক্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত বিচারকদের উদ্দেশ্যে যে নসীহতনামা উপস্থাপন করেছেন সে প্রসঙ্গে দু’চার কথা না বললেই নয়।

গত সোমবার সার্ক আঞ্চলিক জুডিশিয়াল কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ যদি মুদ্রার একপিঠ হয়, তাহলে এর অন্য পিঠেই আছে অর্থ। “অর্থই সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক, অর্থই সন্ত্রাসবাদকে সম্ভব করে, অর্থই সন্ত্রাসবাদের অক্সিজেন।” এসব বক্তব্য থেকে বিচারকগণ যে প্রভাবিত হবেন তা খুবই সাধারণ জ্ঞান। তিলকে তাল বানিয়ে শত্রুকে ধ্বংস করার সাম্রাজ্যবাদী নীতি আমাদের অজানা নয়। ষাটের দশকে শুরু হওয়া ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান হয় নব্বইয়ের দশকে এসে সোভিয়েট ইউনিয়নের ভাঙ্গনের মধ্য দিয়ে। তবে আগ্রাসী রাশিয়ার চূড়ান্ত অধঃপতন হয় মূলত ১৯৭৯ সালে আফগান দখলকে কেন্দ্র করে। এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য আফগানিদের পক্ষ হয়ে অর্থ, অস্ত্র, সামরিক প্রশিক্ষণ, মোজাহেদীনদের রিক্রুট, প্রচার-প্রচারণার কাজগুলো করে দিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েট সাম্রাজ্য তথা সমাজতন্ত্রের মাজা ভেঙ্গে যায়। পৃথিবীর বুকে তখন একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের অতীত কার্যকলাপের ফল কিছুটা বুমেরাং হয়ে ধরা দেয়। তাদেরই অর্থ ও সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেহাদীরা হয়ে উঠে তাদের প্রধান শত্রু। দুঃখের বিষয় এই যে তারা ছিল ইসলাম ধর্মের দাবিদার। দুঃখের বিষয় বললাম এই জন্য যে তারা যদি ইসলাম না হয়ে খ্রিস্ট ধর্মের বা অন্য কোন ধর্মের হোত, তবে তাদের কপালে জঙ্গী শব্দটা জুড়ত না

জং শব্দটা ফারসী, এর অর্থ হোল যুদ্ধ( War)। আর জঙ্গী শব্দের অর্থ যে বা যারা যুদ্ধ করে, অর্থাৎ যোদ্ধা, ইংরেজিতে Warior, Fighter. অর্থগত হিসেবে বিবেচনা করলে জঙ্গী শব্দের অর্থ হোল যোদ্ধা। এই হিসেবে গত একশত বছরে শুধু আমেরিকা, বৃটেন, ইসরাইল এই সম্মিলিত শক্তি সারা দুনিয়া জুড়ে কতটি যুদ্ধ করেছে, কত দেশ ধ্বংস করেছে, কত জায়গায় তাদের সামরিক ঘাটি গঠন করে কি পরিমাণ সামরিক অস্ত্রের মজুদ এবং সেসব মোতায়েন করেছে সেই পরিসংখ্যান দাঁড় করালে পৃথিবীর সবচাইতে বড় জঙ্গি দেশ যে তারাই তা অস্বীকার করা হবে সত্যের অপালাপ।

যাই হোক, কথিত এই নতুন জঙ্গিদের ধ্বংস করার জন্য চালু করা হোল নতুন যুদ্ধ। অবশ্য তখন আর ইসলাম ছাড়া আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিও অবশিষ্ট ছিল না। এই উগ্রবাদীদের নতুন ‘ট্যাগ’ দেওয়া হোল ‘জঙ্গি’। এবার জঙ্গি দমনে শুরু হোল আরেক যুদ্ধ। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলেন তাদেরই প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ওসামা বিন লাদেন। এর পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। এই জঙ্গীদের কিন্তু কোন অস্ত্রের কারখানা ছিল না। তাদের হাতের বেশিরভাগ অস্ত্রই ছিল আমেরিকারই দেওয়া এবং কিছুটা ছিল রাশিয়ার হাত থেকে হস্তগত করা। অন্যদিকে অর্থ-বিত্তের নিয়ন্ত্রক ও মালিকতো একমাত্র আমেরিকাই। তাদের হাতেই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি। এর বাইরে আমাদের মত প্রাচ্যদেশীয়দের হাতে কিইবা আছে! Brown University এর করা এক হিসাবের তথ্য মোতাবেক উইকিপিডিয়া জানায় ইরাক, আফগান এবং পাকিস্তানে পরিচালিত যুদ্ধে পেছনে এ পর্যন্ত আমেরিকা খরচ করেছে ৩.২ ট্রিলিয়ন থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ডলারের পরিমাণ যে কি পরিমাণ তা আমাদের দেশের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। এই টাকা কোথা থেকে আসে? নিশ্চয় অন্যদেরকে মেরে অন্যায়ভাবেই এসব হস্তগত করা হয়! সেই তারাই যখন অর্থকে জঙ্গিবাদের যোগানদাতা বলে অভিহিত করেন, আর আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা যখন মাথা ঝুকিয়ে এ কথার সায় দেন, তাদের সেই কথা পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়, তখন অবাক হতেই হয়। দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা গরীব। আরো দুঃখের বিষয় এই যে আমরা প্রভুদের প্রবর্ত্তিত ‘ভাগ কর এবং শোষণ কর’ (Divide and Rule) নীতির শিকার হয়ে বহুধা বিভক্ত হয়ে আছি। এই সুযোগে তারা আমাদের যা গেলাচ্ছে আমরা তাই গিলছি। আমাদের নেতা-নেত্রীদের কোমরে জোর নেই, মনে বল নেই। তাদের কোন অনৈতিক কাজের জোরালো কোন প্রতিবাদ করতে পারছি না।

আমাদের দেশের ছেলে নাফিসকে তারা কথিত স্ট্রিং অপারেশনের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে আটক করলো, বিচার করলো, শাস্তি দিল। আর তাদের ছেলে নরওয়ের ব্রেইভিক (Anders Behring Breivik) জলজ্যান্ত ৭৭ জনকে গুলি করে হত্যা কোরল, বোমা ফাটাল, তাকে নামে মাত্র শাস্তি দিল ২১ বছর। এখন তাকে আবার বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে সভ্য করানো হচ্ছে। সবকিছু জেনে শুনেও এর প্রতিবাদে একটি কথাও আমাদের নেতারা উচ্চারণ করতে পারল না। তাদের ভালই জানা আছে নাফিস যে অপরাধ করেছে তার পেছনে উস্কানী ও ফুসলানোর কাজটি কিন্তু করেছে তাদেরই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এফবিআই। এসব অনৈতিক কর্মকা- সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সত্ত্বেও তারা আমাদেরকে জ্ঞান দিতে পারে- কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ নই। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দের মাজায় জোর নেই। আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থে দলাদলি এবং কোন্দলে ডুবে আছি। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করাতে পারলেই আমরা খুশি। কিন্তু এর ফল শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কি আমাদের নেতা-নেত্রীরা ভেবে দেখেছেন? আমাদের নেতা-নেত্রীরা কি ভেবে দেখেছেন যে জঙ্গীবাদী কর্মকার অস্ত্রের যোগান কোথা থেকে আসে? জঙ্গিদের কি অস্ত্রের কারখানা আছে? মনে রাখতে হবে এসব তারাই বিলি করছে যারা অদূর ভবিষ্যতে এসবের অজুহাতে আমাদের উপর আক্রমন করে আমাদের ধ্বংস করবে- অন্তত নিকট অতীত আমাদের তাই জানাচ্ছে। তখন আমাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন বেরিয়ে আসবে হামিদ কারজাই, একজন নুরে মালেকী হিসেবে।

আসল কথা হচ্ছে, মাজায় জোর থাকলে অন্যদের ডেকে না এনে আমরাই জঙ্গীপনা নির্মূল করতে পারতাম। তখন আমাদেরকের বাধ্য শ্রোতার মত তাদের মুখ থেকে এইসব নীতি কথা শুনতে হোত না। আমাদের নেতা-নেতৃরা সজাগ হবেন কি? না কি একজন কারজাই, একজন নুরে মালিকী হতেই তারা বেশি আগ্রহী?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×