ছোটবেলা থেকেই তমা শুনে এসেছে ও অনেক সুন্দর দেখতে। ফর্সা টুকটুকে গোলগাল মুখ, বড় বড় চোখ আর এক মাথা ঝাকড়া চুল, ওকে পুতুল পুতুল দেখাতো। আর সবার বাড়তি আদরও পেয়েছে অনেক সুন্দর হওয়ার জন্য। কিন্তু এই সুন্দর হওয়াটাই ওর জন্য একটা অভিশাপ ছিল। বড়দের আদরগুলো একটা সময় আর স্বাভাবিক আদরের পর্যায়ে থাকতো না। ব্যাপারটা প্রথম টের পায় যখন তমা ক্লাস ফোরে পড়ে তখন। পাশের বাসার এক আঙ্কেল ওদের বাসায় প্রায়ই আসতো। তমাকে কোলে নিয়ে অনেক আদর করতো। একদিন তমা টের পেল উনার হাত এমন সব জায়গায় যাচ্ছে! তমা বুঝতে পারেনি উনি কেন এমন করছে। কিন্তু ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। এভাবে তিন-চারদিন এমন হওয়ার পর তমা আম্মাকে বলেছে। আম্মা তখন ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিল অনেক কিছু। বলেছিল, ‘'মেয়েদের সবসময় সাবধান থাকতে হয়, কিছু কিছু ছেলে বা লোক আছে নোংরা, বিকৃত মানসিকতার। তারা মেয়েদের শরীর ছুঁয়ে আনন্দ পায়। কিন্তু এটা অন্যায়। তাই কখনো ছেলেদের এইসব অন্যায় সুযোগ দিতে হয় না, নিজেকে আড়াল রাখতে হয়, নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হয়'’ আর বলেছিল কখনো কেউ এমন করলে সাথে সাথে জানাতে।
তমার এত মন খারাপ হয়েছিল এসব কথা শুনে। কেন কেউ এমন করবে? অনেক কিছুই বোঝার মত বয়স তমার ছিল না। কিন্তু এক লাফে ওকে এই সত্যের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল যে ছেলে আর মেয়েরা আলাদা। মেয়েদের ব্যবহার করে ছেলেরা আনন্দ পায়। হয়তো সবাই না। কিন্তু তমা কাউকেই বিশ্বাস করতে পারতো না বহুদিন। ওই আঙ্কেলের কাছে আর কখনো যায়নি তমা। অন্য কারো কাছেই না। ওর এত ঘেন্না লাগতো, মাঝে মাঝে নিজেকেই! মনে হতো, ‘'হয়তো আমারই সমস্যা, তাই সবাই আমার সাথে এমন করে। কই, অন্য কেউতো বলে না এমন কিছু।'
’ তমা গুটিয়ে গিয়েছিল ভিতরে ভিতরে। কিন্তু পুরোপুরি রেহাই পায়নি। কোন আঙ্কেল, কোন ভাইয়ার কাছে কখনো আর যায়নি বটে কিন্তু এসব ঘটনা থেমে থাকেনি। কখনো কখনো রাস্তায় ভিড়ের সুযোগে অনেক ছেলে বা বয়স্ক লোকেরা ওর গায়ে হাত দিয়েছে। ও বাসায় এসে আম্মাকে বলেছে কিন্তু আম্মা কিই বা করতে পারে? শুধু বলেছে, ‘রাস্তাঘাটে একটু সাবধানে চলিস’। এইসব দেখতে দেখতে সহ্য করতে করতে বড় হয়েছে তমা। একটা সময় ছিল যখন ও কোন ছেলে বা লোকের কথাই সহ্য করতে পারতো না। তারপর বড় হতে হতে, অনেক দেখে এটা বুঝতে পেরেছিল যে সবাই একরকম না। ওই নোংরা লোকগুলোর বাইরেও কিছু মানুষ আছে। তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মেছিল তমার। একটা সময় এসে ও স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিল। কোন রাজপুত্র ওর জীবনে আসবে, ওকে ভালবাসবে, তমাও রাজপুত্রকে অনেক অনেক ভালবাসবে।
তখন তমা কলেজে ভর্তি হয়েছে কেবল। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে অনেকের কাছ থেকে চিঠি বা ভালবাসার আহ্বান তমা পেয়েছে। কিন্তু সেসবকে উপেক্ষা করতে ও শিখে গিয়েছিল। কলেজে যাওয়ার পথে একদিন একটা ছেলের সামনে পড়ে গেল তমা। একদম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। মুখে ভীষণ একটা হাসি! ছেলেটা কিছু বলেনি তমাকে, কিন্তু ও সেই চাহনি, সেই চেহারা দেখে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এখানে অশুভ কিছু আছে। ফিরে এসেছিল সেই পুরনো অনুভূতিটা।
চলবে.............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:১৪