somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সমুদ্র কন্যা
সুন্দরতর ও শ্রেষ্ঠতর আগামীকালের অপেক্ষায়...

যন্ত্রণা-৫

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই তমা শুনে এসেছে ও অনেক সুন্দর দেখতে। ফর্সা টুকটুকে গোলগাল মুখ, বড় বড় চোখ আর এক মাথা ঝাকড়া চুল, ওকে পুতুল পুতুল দেখাতো। আর সবার বাড়তি আদরও পেয়েছে অনেক সুন্দর হওয়ার জন্য। কিন্তু এই সুন্দর হওয়াটাই ওর জন্য একটা অভিশাপ ছিল। বড়দের আদরগুলো একটা সময় আর স্বাভাবিক আদরের পর্যায়ে থাকতো না। ব্যাপারটা প্রথম টের পায় যখন তমা ক্লাস ফোরে পড়ে তখন। পাশের বাসার এক আঙ্কেল ওদের বাসায় প্রায়ই আসতো। তমাকে কোলে নিয়ে অনেক আদর করতো। একদিন তমা টের পেল উনার হাত এমন সব জায়গায় যাচ্ছে! তমা বুঝতে পারেনি উনি কেন এমন করছে। কিন্তু ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। এভাবে তিন-চারদিন এমন হওয়ার পর তমা আম্মাকে বলেছে। আম্মা তখন ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিল অনেক কিছু। বলেছিল, ‘‌‌‌'মেয়েদের সবসময় সাবধান থাকতে হয়, কিছু কিছু ছেলে বা লোক আছে নোংরা, বিকৃত মানসিকতার। তারা মেয়েদের শরীর ছুঁয়ে আনন্দ পায়। কিন্তু এটা অন্যায়। তাই কখনো ছেলেদের এইসব অন্যায় সুযোগ দিতে হয় না, নিজেকে আড়াল রাখতে হয়, নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হয়'’ আর বলেছিল কখনো কেউ এমন করলে সাথে সাথে জানাতে।

তমার এত মন খারাপ হয়েছিল এসব কথা শুনে। কেন কেউ এমন করবে? অনেক কিছুই বোঝার মত বয়স তমার ছিল না। কিন্তু এক লাফে ওকে এই সত্যের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল যে ছেলে আর মেয়েরা আলাদা। মেয়েদের ব্যবহার করে ছেলেরা আনন্দ পায়। হয়তো সবাই না। কিন্তু তমা কাউকেই বিশ্বাস করতে পারতো না বহুদিন। ওই আঙ্কেলের কাছে আর কখনো যায়নি তমা। অন্য কারো কাছেই না। ওর এত ঘেন্না লাগতো, মাঝে মাঝে নিজেকেই! মনে হতো, ‘'হয়তো আমারই সমস্যা, তাই সবাই আমার সাথে এমন করে। কই, অন্য কেউতো বলে না এমন কিছু।'

’ তমা গুটিয়ে গিয়েছিল ভিতরে ভিতরে। কিন্তু পুরোপুরি রেহাই পায়নি। কোন আঙ্কেল, কোন ভাইয়ার কাছে কখনো আর যায়নি বটে কিন্তু এসব ঘটনা থেমে থাকেনি। কখনো কখনো রাস্তায় ভিড়ের সুযোগে অনেক ছেলে বা বয়স্ক লোকেরা ওর গায়ে হাত দিয়েছে। ও বাসায় এসে আম্মাকে বলেছে কিন্তু আম্মা কিই বা করতে পারে? শুধু বলেছে, ‘রাস্তাঘাটে একটু সাবধানে চলিস’। এইসব দেখতে দেখতে সহ্য করতে করতে বড় হয়েছে তমা। একটা সময় ছিল যখন ও কোন ছেলে বা লোকের কথাই সহ্য করতে পারতো না। তারপর বড় হতে হতে, অনেক দেখে এটা বুঝতে পেরেছিল যে সবাই একরকম না। ওই নোংরা লোকগুলোর বাইরেও কিছু মানুষ আছে। তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মেছিল তমার। একটা সময় এসে ও স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিল। কোন রাজপুত্র ওর জীবনে আসবে, ওকে ভালবাসবে, তমাও রাজপুত্রকে অনেক অনেক ভালবাসবে।

তখন তমা কলেজে ভর্তি হয়েছে কেবল। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে অনেকের কাছ থেকে চিঠি বা ভালবাসার আহ্বান তমা পেয়েছে। কিন্তু সেসবকে উপেক্ষা করতে ও শিখে গিয়েছিল। কলেজে যাওয়ার পথে একদিন একটা ছেলের সামনে পড়ে গেল তমা। একদম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। মুখে ভীষণ একটা হাসি! ছেলেটা কিছু বলেনি তমাকে, কিন্তু ও সেই চাহনি, সেই চেহারা দেখে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এখানে অশুভ কিছু আছে। ফিরে এসেছিল সেই পুরনো অনুভূতিটা।



চলবে.............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:১৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×