somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার আঙুলে ঘণ্টার অজস্র কাঁটা: থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এইসব কিছু বলতে ভালো লাগে না, তবু-ও পথ ছেড়ে জমিনে গিয়ে দাঁড়াই। কৃষকেরা আজকের মতো করে ঘরে ফিরে গেছে; আজ দিনটি সূর্যমুখী ফুলের মতো রোদের রঙ করে ছিল।
জমিন ছেড়ে আরো হাঁটি। আশা জাগে জমিনের অইপ্রান্তে যেখানে দিগন্ত আকাশের রেইনবো হয়ে আছে সেখানে একটি নদী থাকবে। রেইনবোটি চাতক পাখি হয়ে জলে চুষে যাবে নদীস্তন! হাঁটতে হাঁটতে তার কাছে দাঁড়াব। নদীর কাছে দাঁড়ালে মানুষ পাহাড় হয়ে যায়, ভিতরে।

অনেক নদীর হাতঘেঁষে কাশবন দেখেছি। মনে একটা আড়াল-ইচ্ছে আছে কোন এক নদীর পাশে গিয়ে গেঁন্দাফুলের ফ্যারেড দেখব। তাই হাঁটি.....হাজার বছর ধরে। সে নদী না হয় হোক কোন নারী।

পৃথিবী নারী ও ঈশ্বরের খেলনাঘর- কোন এক পুরুষের (প্রেমিক-ও সম্বোধন করা যায়) চোখে।


"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;"


মন্ট্রিয়ালে অসংখ্য সড়কবাতি। শুদ্ধ করে বললে স্ট্রিটল্যাম্প। যেন সড়কের একেকটা লোম। চলতে চলতে সেসব বাতির আলোয় সমুদ্র জেগে উঠে। চশমার কাঁচে বরাবরই কুয়াশা জমে দ্রুত; ফলে মনের কাঁচে হাত লাগাই। পরিষ্কার করি। কাঁচের উপর কারো আঙুলের আঁকাআঁকি কি কোন এক সিংহল সমুদ্র? স্পর্শের সিংহল সমুদ্র? আমি জানি না।

এক স্বপ্নান্ধের মতো বেড়ে উঠি। পৃথিবীর বাতাসে; স্বপ্নের কতিপয় প্রজাপতির রঙের ডানায়, বাস্তবের উড্ডয়ন শেখার চেষ্টা করি। "আলো-অন্ধকারে যাই।" অন্ধকারে হাওয়ার সাগর খেলা করে। জীবন ফেনা হয়ে জন্মে। অন্ধকারের ঊষর সমুদ্রে কোন এক দ্বীপ জন্ম নিক। আমার জীবনের মতো। আমি তার নাম দিবো না-টোর।


আমি জীবনে দুই কী তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম, ভবিষ্যতে আরো করব। জানি শুধু চেষ্টাই করব। কারণ, ভিতরে জেনে গেছি আত্মহত্যা কাপুরুষতা। বালক বয়েসে পৃথিবীর কাছে, খুব গাঢ় করে মুখ তুলে তাকানোর মতো বালিকার কাছে পুরুষ হওয়া যখন অনেক কষ্টের উপার্জন ছিল- তখন কাপুরুষতা মানতে পারি নি। আমার আত্মহত্যা করা হয় না। তবু-ও ক্লান্তি জাগে। ক্লান্তিশীষ সুখের ক্ষেতে মেঠো ইঁদুর। ইঁদুর মারতে পারি না; তাহলে কোন পরাবাস্তবতা আমাকে টানবে না। জেনে গেছি। মানুষ জেনে থাকে, প্রকাশের দ্বিধা নিয়ে।

"বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি"

মহাভারত কিংবা রামায়ণ কিছু পড়া হয় নি আমার। ইচ্ছে আছে একদিন পড়ে ফেলব। তাই বিম্বিসারের পুত্র, অশোকের কথা ভাসাভাসা জানি; লোক মুখে শুনে। অইসব আমার কাছে ধূসর জগত! তবু-ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে এসে দাঁড়াই। পরিচিত কেউ এসে কুশল জানতে চায়- কী বই দরকার জানতে চায়। আমি দেয়ালে শুয়ে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাই। সেখানে ঝুলানো ঘণ্টার কাঁটাটা অবিকল গ্রন্থাগার পরিচালকের অনামিকার মতো! আমি তাকাই, সেখানে আমি থাকি। কারো ভিতরে ভিতরে থাকি; আমার ভিতরে অনেকে থাকে। ধূসরতা কিছু পাশাপাশি জগতে স্বপ্ন দেখিয়ে চলে।


অনুপম ঘোমটা নিয়ে সে আসে। এসব প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে বরাবরই ঈর্ষাকাতর, তাই হয়তো কারো সাথে ঝুলে পড়ি নি; হাজার বছর তো হলো! তার বাঁ হাত দিয়ে চকিতে ঘোমটা টানার মতো করে রিকশা-বাস-ট্রেন চলে যায়। আমি অইসব যাওয়া দেখি। মাঝে মাঝে, বিশেষ করে বিকালের দিকে- যখন কার্তিকের আকাশ হঠাৎ করে হলদে হয়ে আসে- সেসময় পুরানো কোন গানের সুর মনে পড়ে; ঠিক ঠাহর করতে পারি না গানের কথা, সুর- তবু-ও নিউরনে বাজতে থাকে। এরকম মনে হওয়ার মতো করে- আমাকে মনে করায়ে দেয়ার মতো করে সে সাজে! বার-মাসে-তের-পর্বণের মতো সেসব প্রতিদ্বন্দ্বী সাজ দেখতে দেখতে আমি একটি নগরীর বয়োবৃদ্ধ হওয়া টের পাই না। বিদর্ভ নগরী বিদর হয়ে যায়।

মন্ট্রিয়াল সেই কবের প্রাচীন শহর। প্রায় ৪০০ বছরের অনেক আগে ফরাসীরা ঘাঁটি ফেলেছিল- তার-ও আগে ৩০০০০ বছর আগে রেডইন্ডিয়ানরা এসেছিল। তারা অন্য নামে ডাকত। যেমন ক্যানাটা বা জেলেদের ক্ষুদ্র গ্রামসমূহ ডাকত কানাডাকে! নামগুলো পাল্টে যায়। নগর পাল্টে গেলে মানুষ পাল্টায়, কারো অনুপম খোঁপা।
দেখতে দেখতে প্রজাপতিগুলো বিবর্তন হয়; ক্লান্তি এসে যায় অবলীলাক্রমে।


"আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।"

বনলতা! সে তো সবুজ! তবে কী....হ্যাঁ, হ্যাঁ...ঠিক ঠিক চলে যাই। পাহাড়, সাগর এসব দেখতে দেখতে চোখ যখন একলা শালিক হয়ে যায় তখন ঠিকই যাই। বনলতার দেশে। দুদণ্ড সুখ। একদণ্ড নয়।

ছোটবেলায় নামতা পড়তে ভালো লাগত। কিংবা বাংলা বইয়ের মলাটে বাবার স্বপ্ন মেখে রাখা পাতা উল্টাতে। প্রিন্স মাহমুদের একটা গান আছে, জেমস (নগরবাউল) গেয়েছিল: "ছেলে আমার বড় হবে, মাকে বলতো সে কথা।" এই গানটা, যতবার শুনি মনে হয় এটি আমার লেখা কথা ছিল; অন্তত এটা আমার জীবনের গান! সে যাকগে, পূজোর অনেক দেরী; এখন নবান্নের গল্প করা যাক। আমরা সুর করে পড়তাম: 'অ তে অজগর আসছে ধেয়ে' কিংবা 'ঊ তে ঊষাবেলায় সূর্য উঠে' এই লাইনে এসে ভারী লজ্জা লাগত। ঊষা নামে আমাদের শ্রেণীতে একটা মেয়ে ছিল। শৈশবের দৃষ্টি চিরটাকাল কেমন মায়ামায়া, তাই বিরতির ফাঁকে আমরা পরষ্পরের চোখের খোরাক হয়েছিলাম; যদি-ও সেসব বোঝার বয়েস ছিল না। আমাদের যে শিক্ষিকা পড়াতেন তার মুখে হাসির ভাঁড়ার ছিল, একটু মোটার দিকে। তার আশ্চর্য দু'টি বেণী ছিল, খোলা। সেদিকে তাকিয়ে আমরা দুলতাম, নামতা পড়তে পড়তে দোলা। ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে বালকেরা যেমন রোদের চিল হয়ে যায়।
সেই ঊষা, বাংলাশিক্ষিকা, দু'গাছি বেণী, খয়রাতি সকাল- এসব আমার জীবনের ফেন। সমুদ্রে লবণ থাকে। লবণ থেকে লাবণ্য হলে অর্থ পাল্টে যায়। লবণ থেকে সফেন সমুদ্র হলে ঊষা, বাংলাশিক্ষিকা এসব উপকরণ ভুলে বনলতা সেনের মতো করে চোখ আছে এমন মেয়েদের মনে রাখা হয়। অন্যরা ফেনা জাতীয়, গোসলের সময় চোখে পড়ে। দিনের অন্য ২৩ ঘণ্টায় কেবল বনলতা সেন: দুদণ্ড সুখ দিয়েছিলো।


"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;"

আমার দিদির চুলগুলো একটু লালচে কালো। অনেকদিন তেল না দিলে এরকম হয়; যদি-ও দিদি রোজ চুলের যত্ন নেয়। তবু-ও চুলগুলো লালচে-কালো। একটা বৈজ্ঞানিক সত্য হলো যে ছেলেরা (কিংবা মেয়েরা) পরিবারের অন্য সদস্যদের শারীরিক বা সৌন্দর্যগত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে সঙ্গী খুঁজে। এটা অবচেতন মনে বাস করে। যেমন ধরুন আমার কথাই বলি। লালচে-কালো চুলের মেয়েদের আমার ভালো লাগে। বড়দিদির এই রূপটা অবচেতন মনে ঢুকে গেছে!
সাংঘাতিক কথাবার্তা। তবে আশাজাগানিয়া। বিদিশার দিশা। অন্ধকারে। হাজার বছর ধরে এই হাঁটার পরে মালবের প্রাচীন নগরীতে এসে যাই। অন্ধকার এখানে কারো চুলের খোঁপা!

শিল্পবিজ্ঞান নামে একটা শব্দজোড় বানালাম। দরকার আছে। শ্রাবস্তীর কারুকার্য যেমন দরকার ছিল। বনলতার সেনের মুখকে ফুটিয়ে তুলতে। আচ্ছা, কে আগে এসেছিল? বনলতা না শ্রাবস্তী?


শিল্প মানুষকে অনেক দেয়, তবে জীবনটুকু চুষে নেয়। একবার যে ফাঁদে পড়েছে সে জানে। তখন বৈঠা হারানো মাঝির মতো করে জলে অক্ষর খোঁজা চলে, এক চিলতে মাটির, লাবণ্যঘাসের সন্ধান চলে।

"অতিদূর সমুদ্রের 'পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে;"

দারুচিনি-দ্বীপ? মশলার দ্বীপ। শালার ইংরেজরা, ফরাসীরা সর্বোপরি ইউরোপিয়রা মশলার খোঁজ করতে গিয়ে একবার যে সমুদ্রে নামল- পৃথিরীর ভৌগোলিক মানচিত্র মানুষ জেনে গেল। তবে? কলম্বাস যদি আমেরিকা আবিষ্কার না করত? যদি দিশা হারিয়ে কেবলই হারিয়ে যেত?
হারায় নি। এখানে অন্ধকারে তার চুল, অস্তিত্ব মশলার দ্বীপে সবুজঘাস।


"'এতোদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।"

অবসাদে ভুগলে খরগোশ হয়ে যাই। ঘুমখরগোশ। কারো বিছানা যখন ঘাসের সমারোহ কিংবা কারো আঁচলে জলে বোনা শীতলপাটি।
জানি, কোন বস্তু থেকে আলো এসে পড়লে আমরা তা দেখতে পাই। পদার্থবিদ্যা মোটেই রসকসহীন নয়; দেখার দৃষ্টিই আসল। এই যে এত দৃষ্টিপাখি এসে এসে লুকিয়ে যায় আমার চক্ষুনীড়ে, আমি সেসবে কারো সম্মতি টের পাই।


সারারাত আমার জানালার কাছে দেবদারুর পাতাগুলো তারার গান ভজন করে চলে। এসব রাতে নিজের কাঁথায় কয়েকটি কমনীয় বৃক্ষের হাত নেমে আসে, তোমরা তাকে বৃক্ষের পাতা বলো। আমি বলি বৃক্ষের হাত। এই ভিন্ন কিছু দেখাই শিল্প হয়ে উঠার সম্ভবনা।


যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন তবে তিনি হবেন যৌক্তিক ও সৌন্দর্যের অবতার। তাই বলি, শিল্প ও বিজ্ঞানের সম্বন্বয়ই ঈশ্বরের আলোতে আনবে! আমরা জেনে যাব তার থাকা না থাকার আদিঅন্তকথা।


সাদা একটি বৃষ্টির ঘুঙুর এনেছি বন্ধু
শাঙনের প্রথম বকুলপ্রহর
লাল সিঁদুরে অকুল ভাসে নদীবিন্দু
ডাকে অই বানভাসি অধর
সাদা লাল মিলে উড়ে উড়ে রঙপাখি
শুধু চুলের কালো চিনতে শুধু বাকি

অনুতাপে চোখ দু'টি সাদা সাদা
বুকের মাঠে ফুরায় সবুজ
নোলকে দেখে অশ্রু গড়ায় একা
কাছে গেলে অধর অবুঝ


"সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;"

এই চিলটা কি আমি? হাজার বছরের হাঁটাহাঁটিতে আমার অশোক হাতে, পায়ে, চোখে অনেক প্রত্নরোদ লেগে গেছে। যাই, সেসব রোদ মুছে কারো সন্ধ্যেচুলে মুখ রাখি। কোন এক বনলতার দেহপাতায়। এই মুখগুঁজে সুখ নেয়াটুকু শিশির হয়ে ঝরে যাবে ফাল্গুনের রাতে, অলক্ষ্য রূপালি মাঠে।


Rain in my head

Your molded eyes: the epic of subaltern
or fossil of love

I lost something
smashed shedding tears
rain in my head
soaks the hares of epicyclic garden


"পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;"

সব রঙ নিভে গেলে আমি বর্ণান্ধ। রঙ কি নিভে যায়? জ্বলে? এই রঙ মুছে গেলে-ও পৃথিবীর পাণ্ডুলিপিতে, কারো স্পর্শের পাণ্ডুলিপিতে আমাদের ঘ্রাণগুলো বরাবরই রঙিন গল্প। কেউ এসে পড়ে যাবে দ্বিতীয় গল্প।

"সব পাখি ঘরে আসে--সব নদী--ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।"

এগুলো আর শিল্প নেই, বিজ্ঞান হয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে চলা পথিকের থলেতে অসংখ্যা অভিজ্ঞতার বিড়াল। তাই 'সব পাখি ঘরে ফিরবে' এরকম অনিশ্চয়তা না নিয়ে সে বলে 'সব পাখি ঘরে আসে।' এসব বস্তুত জীবন বিষয়ক সিদ্ধান্ত। সব নদী একদিন ফুরায়। জলসিঁড়ি অথবা শুভালক্ষ্মী। এই ফুরানো দেখা সম্ভব যে হাজার বছর হেঁটেছে। জীবনের লেনদেন মাছের হাঁটে বিকোয়; কোমলগান্ধারে ঝুপ করে আসে ধূম্র রাত।
না, কয়েকজন থেকে যাবেন। অন্ধকার ও ভালবাসা। পরষ্পরের বিপরীত। ঈশ্বর ও সৃষ্টি বিপরীত হলে-ও থেকে যাবে অনন্তকাল: আলো অন্ধকারের সবটুকু চিনি না বলে সেই অনন্তকালের দের্ঘ্য, প্রস্থ জানা নেই।
তবু-ও আশ্রয় অনেক কৃতজ্ঞতা। এই দীঘল জীবন একঘেঁয়ে নয় কারণ "নাটোরের বনলতা সেন" বারবার "পাখির নীড়ের মতো চোখ" তুলে তাকায়।


"বনলতা সেন" কবিতা পাঠ করলে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান চোখে পড়ে। শ্রাবস্তী, বিম্বিসার অশোক; চোখে পড়ে বিশাল, ব্যাপকতা বোঝাতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ: মালয় সমুদ্র, সিংহল সমুদ্র। এসব মূলত হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা যুবকের কথন। সে সড়কের ক্ষয় দেখেছে, নদীর ফুরিয়ে যাওয়া দেখেছে, জীবনের সফেন সমুদ্রে সে হয়তো বা দিশেহারা মাঝি।
জীবনানন্দের দাশের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি শহর ও গ্রামের মাঝে মিলবন্ধন সৃষ্টি করতে পেরেছেন। কলকাতার আগ্রাসনের পাশাপাশি তিনি কাব্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবুজ প্রকৃতিজল। তাই পাখির নীড়, পাণ্ডুলিপি বিষয়ক উপমা বিভ্রান্তকর নয়। ব্যক্তি, প্রকৃতি, ও চেতনা নিয়ে গড়ে উঠে জগত।
পূর্বে বলেছিলাম যে কবিতা লিখে দুইজন: কবি নিজে ও পাঠক।
পাঠকের চিন্তার খোরাক যোগাতে না পারা কবিতাকে পদ্যরূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তবে সব পাঠক কবিতার পাঠক নয়। সব কবি কবিতা লিখেন না। অনেকে পদ্য লিখেন।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আলোচনায় কেউ অণু, পরমাণুর সংজ্ঞা না জানলে সেটা দুর্ভাগ্য। তার সাথে সময়-সংকোচন নিয়ে আলোচনা করা যায় না। তেমনি কবিতার পাঠে প্রয়োজন অসংখ্য চোখ ও দেখার মতো দৃষ্টি, উপলব্ধি করার মতো চেতনা প্রয়োজনীয়।


জগতের শ্রেষ্ঠতম শিল্প সংগীত। এরপরে কবিতা।
কবিতার বিস্তৃতি সর্বত্র। স্নানঘর থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কর্মে। একজন কৃষক-ও কবিতাচর্চা করতে পারেন: লাঙল দিয়ে জমিচাষ হয়ত তার কাছে শ্রেষ্ঠতম কবিতা; কিন্তু তিনি কবিতা লিখেন না। কবিতাচর্চা ও কবিতা লেখা এক বিষয় নয়।
তবে কবিতা কে লেখে? মানুষই লেখে, কবিই লেখেন। কবিতার সংজ্ঞা কী? কখন বুঝব এটি কবিতা হয়ে উঠেছে?
কবিতাকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে, হবে। পাঠকের ভাবনার স্থান রাখতে পারা কবিতার দাবী।
আমাদের এই বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে একদিন কবিতাকে পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করে ফেলা যাবে। যেমন একদিন সম্ভব হয়ে উঠবে চার প্রকারের মৌলিক বলকে একই সূত্রে বা প্রকারে বাঁধা।


স্বপ্ন, জীবনের আস্বাদ অন্যতম কবিতা।


বিছানায় আজ কথা বলছি
বিপুল অন্ধকারের ঝুঁনঝুঁনি বাজে- ঝুপ করে
নেমে আসে আলো: গির্জার ঘণ্টাধ্বনির গম্ভীরতায়।
বিছানায় আজ নিজেকে শুয়েছি
তোমাকে আরো বণ্টন করে দিই
অস্থিতে পাবো বলে লীনরক্তনদি

বিলিপায়ে লগ্নি দিয়ে আসে
পথ ও চলন
ঘুমভঙ্গী নিয়ে কারো বালিশ তেলচিটে

তোমার আঙুলে ঘণ্টার অজস্র কাঁটা
সময় মুছে দিয়ে আসি মৌলিক আমি

২৮/১১/২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:০৬
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×