somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু অর্থহীন স্বপ্ন নিয়ে অনন্তকাল ছুটে চলার অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার ব্যস্ততা: ১ম পর্ব

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আমি যা লিখছি তা আর কারও সাথে শেয়ার করার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না কোনদিনও । এমনকি এখনও নেই । তারপরও কেন লিখছি জানিনা ।

প্রথমেই বলে নিই, এটা আমার ভালবাসার গল্প । একমাত্র ভালবাসার গল্প । গল্প? না, না তো! গল্প তো এটা নয় । একদম সত্যি ঘটনা । আমার জীবনের সবচাইতে ইম্পর্টেন্ট এবং কষ্টদায়ক ঘটনা । তারপরও এখন মাঝে মাঝে এটাকে গল্প বলে ভ্রম হয় । কেন? কে জানে....

অনেক ছোটবেলার কথা । তখন আমার বয়স খুব বেশী হলে ৮ কিংবা ৯ । আর আমার প্রিয়তমার বয়স তখন হবে ২ কিংবা ৩ । সম্ভবতঃ ১৯৯৩ বা ৯৪ সালের ঘটনা । প্রতিদিন আমি ভাইয়া আর আপুর সাথে সকালে উঠে উঠানে বসে থাকতাম । মা উঠানের কোনের মাটির চুলাতে রুটি তৈরী করতেন । আমরা তিন ভাইবোন গোল হয়ে বসে বসে রুটি খেতাম । কখনও কখনও আব্বাও আমাদের সাথে বসতেন । তবে অধিকাংশ সময় আব্বা থাকতেন না । আগেই খেয়ে নিয়ে অফিসে চলে যেতেন । এমনই এক সকালে আমরা বসে বসে রুটি খাচ্ছি আর গল্প করছি, হঠাৎ করে একটা লোক ২/৩ বছর বয়সি একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসল । লোকটার চেহারা এখনও আমার আবছা আবছা মনে আছে । কিন্তু বড় হওয়ার পর সেই চেহারাটা আর কারও সাথে আমি মেলাতে পারিনি । সেদিন অবশ্য ওই লোকের চেহারার চেয়ে আমার আগ্রহ বেশী ছিল মেয়েটার প্রতিই । কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি তার নাম জেনে ফেললাম । অনিবার্য কারন বশতঃ এখানে তার আসল নামটা উল্লেখ করতে পারছি না বলে দুঃখিত । সেই ছোট্ট মেয়েটার একটা নাম দেওয়া যাক । ধরি তার নাম ছিল অর্ণা । মজার বিষয় হল যখন তাকে প্রথম দেখি তখন তার চোখে ছিল শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু । অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল তাকে !!

আপনারা হয়ত ভাবছেন ৮/৯ বছরের একটা ছেলে কিভাবে এত কিছু লক্ষ্য করল, আবার মনেও রাখল । সেইটা আমার নিজের কাছেও রহস্যময় । মানুষের মস্তিষ্ক বড়ই রহস্যময় এবং জটিল পদার্থ । কখন যে কোন স্মৃতিকে সযত্নে সংরক্ষন করে আর কখন কোন স্মৃতিকে মুছে ফেলে সেইটা অন্তত আমি একটুও বুঝতে পারি না ।

অর্ণাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসার কারন ছিল ও প্রচন্ড কান্নাকাটি করছিল । কিছুতেই ওর কান্না থামানো যাচ্ছিল না । তাই কান্না থামানোর জন্যই ওকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হয়ত আমাদের বাসায় চলে এসেছিলেন সেই আনআইডেন্টিফাইড লোকটা এবং আমাদের কাছে ওকে রেখে উনি চলে গিয়েছিলেন । আমি অবাক চোখে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম ছোট্ট পুতুলের মত মেয়েটাকে । কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল । ওকে কোলে নিয়ে খেলতে শুরু করলাম আমি । মজার বিষয় হল ও তখন তোতলা করে কথা বলত । অবশ্য ওই বয়সের বাচ্চারা একটু তোতলা হতেই পারে । সেটা কথা নয়, কথা হল ও সবাইকেই আপু বলে সম্বোধন করত । এমনকি ভাইয়াকে বা আব্বাকেও আপু বলত । ওর অভিধানে হয়তো 'আব্বু' আর 'আম্মু' ছাড়া আর একটা সম্বোধনই ছিল । ওর সাথে আমার প্রথম দেখার দিনটা সম্পর্কে আমার এতটুকুই মনে আছে ।

তারপর ওর সাথের আরও অনেক অনেক রঙিন স্মৃতি ভীড় করে আসছে আমার মনের ভিতরে । প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার প্রথম কাজ ছিল অর্ণাদের বাসায় গিয়ে ওকে ঘুম থেকে জাগানো । তারপর ওর আম্মু ওকে রেডি করিয়ে আমার কোলে তুলে দিতেন । আমি ওকে কোলে করে নাচতে নাচতে বের হতাম । অর্ণাও আমাদের বাসাতেই বেশী সাচ্ছন্দ বোধ করত । ওকে রেখে স্কুলে যেতাম । তখন স্কুলে ক্লাস হত সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত । স্কুল থেকে ফিরে আবার মেতে উঠতাম খেলায় । বলতে গেলে আমার অধিকাংশ সময় কাটত ওর সাথে খেলা করে । প্রায় প্রতিদিনই ওর আব্বু অনেক রাত্রে এসে ঘুমন্ত অর্ণাকে নিয়ে যেত আমাদের বাসা থেকে । তখনকার প্রতিটা দিনই ছিল রঙিন, ওর সাথের প্রতিটা মূহুর্ত ছিল আনন্দদায়ক । অদ্ভুত একটা টান ছিল ওর প্রতি । কিরকম একটা টান!! আমি ঠিক বলে বুঝাতে পারব না । আসলে ওই বয়সের এই টানটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় না । আবার অন্য কিছুও বলা যায় না । কি ভাবে সংজ্ঞায়িত করব এটাকে? আদৌ সংজ্ঞায়িত করা যাবে কি?

সব কিছুরই একটা শেষ আছে । তাছাড়া সুখের সময় কেন জানি বেশীক্ষন স্থায়ি হয় না । কিছুদিন পরেই ওদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের ফ্যামিলির কি যেন একটা গন্ডগোল হল । এই বিষয়টা আমার মস্তিস্ক মুছে ফেলেছে । কিছুতেই মনে করতে পারি না কি বিষয়ে গন্ডগোলটা হয়েছিল । কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারি না, অন্য একটা কারনে । অর্ণাকে আর আমাদের বাসায় আসতে দেওয়া হত না । কিন্তু আমাদের অপরিপক্ক কচি মন কি পারিবারিক গন্ডগোল মানতে চায়? যথারীতি আমি প্রতিদিন ওকে নিয়ে আসতাম । ওর আম্মু হয়ত আসতে দিতে চাইতো না । কিন্তু ওর কান্নার কাছে হার মানতেই হত । ঝামেলা হত আমাদের বাসায় এসে । সবাই আমাকে বকাঝকা করত ওকে নিয়ে আসার অপরাধে । এমনই একটা দিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে পড়ে । আমি অর্ণাকে কোলে করে নিয়ে এসে দরজা দিয়ে ঢুকছি, ভাইয়া আমাকে দেখে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বকা দিচ্ছে । বজ্রকন্ঠে জিজ্ঞাসা করছে 'ওকে এনেছিস কেন?' আমি অর্ণাকে কোলে নিয়ে শক্ত করে ধরে আছি আর অর্ণা আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে । ওর চোখের কোনে অশ্রু । আমিও কাঁদছি । দৃশ্যটা এতটা স্পষ্ট যে আমার মনে হয় এই কিছুক্ষন আগের ঘটনা ।

শেষে দু'জনে মিলে একটা বুদ্ধি বের করেছিলাম । ওকে দরজার সামনে দাড় করিয়ে রেখে আমি আগে বাসায় ঢুকতাম । কিছুক্ষন পরে ও ঢুকত । কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলত ও একা একা এসেছে । কিন্তু বড়রা তো আর আমাদের মত বোকা ছিল না । সবাই ঠিকই ঘটনা বুঝে ফেলত । তারপর আবার অর্ণাকে ওদের বাসায় রেখে আসত । আমাদের দু'জনের কান্নাকে মোটেও পাত্তা দিত না । প্রথম দিকে খুব কষ্ট হত । কিন্তু সময় এমন একটা শক্তি যে সকল দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে । আর আমাদের ঘটনা তো সামান্যই ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই ছিল না । তারপর একসময় ভুলে গেলাম দু'জনেই দু'জনকে । অর্ণা হারিয়ে গেল আমার কাছ থেকে । তবে হৃদয়ের মনিকোঠায় যে আবদ্ধ হয়ে ছিল সেটা বুঝেছি আরও অনেক পরে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×