somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলম্বিত প্রহরে কিছু ঘুম ছোটা প্রশ্ন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মহত্যা করতে যাবার ঠিক পূর্বের অনুভূতিটা ভাষাতীত। একটা ছেলেকে বহুদিন ভালবেসে যাবার পর একটা কুমারী মেয়ে যখন ছেলেটির লম্পট ব্যাভিচারী জীবনাচারের কথা জেনে যায়, তখন একটা ভীষণ আঘাত পায়। কিন্তু কোন এক অলৌকিক কারণে অস্পৃশ্য জীবটির ব্যাপারে নিজের ভাল লাগার মাত্রাটি কমাতে পারেনা। কাছের মানুষকে ভুল ভাবে চেনার শূণ্যতাবোধ থেকে জেগে ওঠে, "না! আমিই পারবো ওকে ভাল করে তুলতে। তবুও হারাতে চাইনা।"তারপর নিজেকে চরিত্রহীন দেখিয়ে ছেলেটি একদিন কেটে পড়ে নতুন কোন সঙ্গিনীর খোঁজে।

কিংবা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোন এক দৃশ্যের পর চূড়ান্তভাবে প্রস্তরীভূত হয়ে যায় মন। মার সাথে রিক্সায় করে ঈদের শপিং করে ফিরছিল। পথিমধ্যে চলন্ত মটর সাইকেলে ছিনতাইকারী মায়ের হাতের ব্যাগ ধরে টান দিয়ে চলে যায়। পিচ ঢালা রাস্তায় ছিটকে পড়ে মা। মাথায় ভীষণ আঘাতের নিয়ে আই সি ইউতে কিছুদিন কাটানোর পরে ঠিক ঈদের দিন সকালে মারা যায় মা টি।

মাঝে মাঝে মনে পড়ে বাবার কথা, ফোনে কথা হয়না বহুদিন। হ্যা কেমন আছো? ভাল আছি বলার পর আর কিছু বলার থাকেনা। প্রচন্ড পরিশ্র্রমী বাবার ভীষণ কার্পণ্য ও অসামাজিকতা আমাকে আর দশজনের সামনে বিব্রত করতো ভীষণ। বাবার টাকা পয়সা আর উপার্জনের খোটা দেয়াটা সে সময় ভয়ংকর শোনাতো, বাপের হোটেলে বসে বাপের অন্ন ধ্বংস করছি এমন একটা অপরাধবোধ গ্রাস করতো সব সময়। তাই, বাবার সামনে কখনও খেতে বসতাম না। পঞ্চম ও অষ্টম দুটোতেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া বাবদ সব টাকা মার হাতে তুলে দিতাম। মার ছিড়ে যাওয়া পুরনো শাড়ির আচলে রান্নার ঝোল লেগে থাকত প্রায়শই, ওটা দিয়েই চোখ মুছতেন। ঈদের নামায পড়ে এসেই লেখক বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সাদা কাগজে কলম পিষার কাজে , বাসায় কোন মেহমান আসতোনা। এ বয়সে বাবা কাগজ কলম নিয়ে পড়ে আছেন, আমাদের মত ছাত্রদের কি করা উচিৎ? উপার্জনরত পরিশ্রমী বাবার সামনে আনন্দ করে বেড়ানো তো অসভ্যতা হয়ে যায়।

মন খারাপ কাটাতে মাঝে মাঝে রেল লাইনের ধারে একা একা হটাতে চলে যেতাম, বাসায় ফিরলেই বাবার প্রশ্ন, "কোথায় গিয়েছিলি? নিজে ইনকাম করবি, নিজের পয়সায় নিজের মত চলবি।" বাপের অন্ন হালাল করতে নিজেকে অনুভূতি শূণ্য যান্ত্রিক পশু বানিয়ে ফেলি। সেই বাপ এখন তার মানসিক রোগী, অসামাজিক জীব ছেলেটিকে নিয়ে গর্ব করে, যাক ছেলেটা আমার মতই পরিশ্রমী হয়েছে। আমি আমার সমস্ত বন্ধু সঙ্গ, শৈশব-কৈশোরের খেলার মুহূর্ত গুলো , কিংবা পরীক্ষা শেষে ঈদ আনন্দ গুলোর বিনিময়ে এখন বাপের দোয়া পাই, বাবা আমাকে স্মরণ করেন। সেই দোয়ার জোরে হয়ত আমি আজ তার কথা মত নিজের কামাই করে নিজেরটা খাই। কিন্তু বাবার বাড়িতে গিয়ে বাবার সামনে বসে সেই পুরনো অপ্রস্তুত, বিব্রত সন্তান কী বাপের অসামাজিকতার মূল্যে কেনা ভাত গুলো খেতে পারবে, বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে চারটা কথা বলতে পারবে? বাপের টাকা, সম্পত্তিকে অন্যের মনে করে সেদিকে কোন লোভ বা অধিকারের আশা রাখিনা, এ অনুভূতির অর্জনটাই বা গর্ব ভরে ক'জন বলতে পারে?

বাস্তবতা জ্ঞান শূণ্য হবার কারণে জানিনা অন্যের বাবারা কেমন, হয়ত কম বেশি আমার বাবার মতই। বাবাদের হয়ত এমন হওয়াটাই বেশি মানায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৪
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×