somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিষ্টি পাগল স্বদেশী!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেটপুরে মিষ্টি খাওয়া হয়না অনেকদিন। কলেজ জীবনে পলটন মোড় হতে নিউমার্কেটগামী বাসটা ধরে ঢাকা কলেজের সামনে নামতেই হাতের ডানে পরত মরণচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডারটা। প্রিয় জায়গাটায় ঢুঁ মারতে শনি মংগলবারের প্রয়োজন হতনা। সকালের নাস্তাতেও মিষ্টি যোগ করতাম অনেকটা বাধ্য হয়ে। বিদেশে মিষ্টি পাওয়া যায়না এমন একটা তথ্য দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে চাইনা, কিন্তূ মাছির ভন ভন সূরে কোলাহলপূর্ণ ময়রার দোকানে বসে মিষ্টি খাওয়ার ভেতর কি যে তৃপ্তি তা কি আর বিদেশের ছিমছাম, সাহেবী কায়দায় মিষ্টি খাওয়ার ভেতর পাওয়া যায়! এ জন্যেই বোধহয় যথেষ্ট খেলেও বিদেশী মিষ্টিতে পেটপুরেনা!

দেশের এই মিষ্টি কালচারটাকে খুব মিস করি। শিশুর জন্ম, সন্তানের পরীক্ষা পাশ, চাকরীতে প্রমোশন, বিয়ের কথাবার্তা; উপলক্ষ ছাড়াও সময় অসময় মিষ্টি আদান-প্রদান আমাদের সমাজে একটি স্বীকৃত কালচার, যার শেকড় টানলে আমাদের হয়ত ফিরে যেতে হবে হাজার বছর আগে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলেছে মিষ্টির প্রয়োজনীয়তা, গ্রহনযোগ্যতা ও এর ব্যবহার। গত কয়েক দশকে মিষ্টির রাজত্ব কতটা প্রসারিত হয়েছে তার একটা উদাহরন পাঠকদের সাথে ভাগাভাগি না করে শান্তি পাচ্ছিনা। দেশে গেছি বেশ ক’বছর পর। ঢাকা হতে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছি ছোট বোনের বাসায় বেড়াতে, হাতে বেশ ক’প্যাকেট বনফুলের মিষ্টি। বাস ফতুল্লার কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম খেলা ফাইনাল! ট্রাফিক আর মানুষের সমুদ্রে সায়লাব যতদূর চোখ যায়! নিশ্চয় ভাংচুরের শিকার হতে যাচ্ছি, এমনটা মনে হতে ডিফেন্সিভ মুডে গিয়ে মনে মনে প্রস্তূতি নিলাম সম্ভাব্য আভিজ্ঞতার। কিন্তূ কিছুই হচ্ছেনা দেখে একটু দমে গেলাম। ব্যাপারটা জানতে বাস হতে বেরুতেই দেখি একদল মানুষ উল্লাস করছে, শ্লোগান দিচ্ছে আর চারদিকে বয়ে যাচ্ছে মিষ্টি বিতরনের বন্যা। কেমন যেন নন-বাংলাদেশী মনে হল পুরো দৃশ্যটা, অন্তত আমার কাছে। আসল ঘটনাটা জেনে একটু আর্শ্চয্য হলাম। আগের রাতে এলাকার দুই ’সন্ত্রাষী’ নিহত হয়েছে র‌্যাবের ’ক্রসফায়ারে’। স্বস্তির বন্যা বয়ে যাচ্ছে এলাকায়। সন্ত্রাষীদ্বয় যে দোকান হতে নিয়মিত চাঁদা আর বিনা পয়সায় মিষ্টি খেত তাঁরাও আজ আনন্দিত, এ কারণেই খুলে দিয়েছে তাঁদের মিষ্টির ভান্ডার। আমার এই ওয়াচডগী মগজে ব্যাপারটা মেনে নিতে কেমন যেন কষ্ট হল।

মিষ্টি প্রসংগটা হঠাৎ করেই মাথায় আসেনি, আসছি সে প্রসংগে। আজকের একটা দৈনিকে দেখলাম যাত্রাবাড়ি এলাকার বিশেষ রাজনৈতিক দলের অতি বিশেষ একটা অংশ গতকাল দিনভর উল্লাস করেছে, রাস্তায় নৃত্য করেছে এবং সাথে বয়ে গেছে মিষ্টি বিতরনের বন্যা। কারণটা শুনে খুশি হব না দুঃখ পাব বুঝে উঠতে বেশ সময় লেগে গেল। জনৈক ’দৌঁড়‘ সালাউদ্দিন নামের রাজনীতিবিদ্‌কে বেয়াদবীর কারণে দল হতে বহিস্কার করেছেন উনার পরম পূঁজনীয় নেত্রী। আর যায় কোথা! নির্বাচনী মাঠে স্বদলীয় প্রতিপক্ষের শিবিরে এ ধরনের বহিস্কার বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। দৌঁড়াদৌঁড়ি আর নৃত্যের খবর আমাকে সাধারণ আকৃষ্ট করেনা, আমার চোখ ঘুরে বেড়ায় এক মিষ্টিকে কেন্দ্র করেই, অভ্যাস! একই দিনে আরও একটা চমকপ্রদ খবর একটু হলেও আমাকে বিভ্রান্ত করেছে, মুজিব হত্যার পাঁচ আসামীর লাশ ফাঁসিমঞ্চ হতে কবরস্থান পর্যন্ত যাত্রা পথে অনেকেই জুতা ও থু থু ছুঁড়ে নিজদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। খবরটা নিশ্চিত করতে আমার এক ভাইকে দেশে ফোন করতেই পাওয়া গেল মিষ্টি বিষয়ক আরও একটা খবর, আমাদের ছোট জেলা শহরটার ময়রার দোকানগুলোতে গতকাল মিষ্টি বিক্রীর ঝড় বয়ে গেছে। অনেকের কাছে শুনেছি '৭৫ সালে মুজিব হত্যার পরও নাকি শালা ময়রা গুষ্টি চুটিয়ে ব্যবসা করেছিল!

মিষ্টি শিল্পের এতটা বহুমূখী প্রসার ঘট্‌বে জানা থাকলে এ শিল্পে বিনিয়োগ করেই হয়ত ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলতে পারতাম! কেন যে কষ্টের জীবন নিয়ে বিদেশে পরে আছি হঠাৎ করে তার সমীকরন মেলাতে কষ্ট হচ্ছে! ফ্রী মিষ্টি, তাও আবার মৃত্যু সেলিব্রেশনের! আই মিস মাই কান্ট্রি!!!
http://amibangladeshi.org/
বিদ্রঃ বানান ভুলের জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×