somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান ইলেভেন (পঞ্চম পর্ব)

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ওয়ান ইলেভেন (চতুর্থ পর্ব)

দূর থেকে একটা হট্টগোলের আওয়াজ ভেসে আসছে আমার কানে। শায়েস্তা খাঁর তোরণের ও পাশ থেকে এই আওয়াজ আসছে। একসাথে অনেক মানুষের শোরগোল, হৈ-চৈ, চীৎকার, কান্নাকাটির আওয়াজ পাচ্ছি। কারও মুখ দিয়ে দোয়া-দরুদ এবং কলেমা পাঠও শুনতে পাচ্ছি। তোরণ বরাবর একসাথে অনেকগুলো কফিন এসে জড়ো হয়েছে। আমার সাইবর্গ আই দুটো দ্রুত ফোকাস ফেলতে থাকে কফিনগুলোর উপর।

আরে!
এ যে দেখি ৬ টি কফিন!
এগুলো এই তোরণের কাছে কেন!
তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাবে নাকি!

প্রশ্নগুলো আমার নিউরনে ঘুরপাক খেতে থাকে। ওয়ান ইলেভেনের পর গণতন্ত্রের বিজয় শেষে ছয় জন সামরিক উর্দি পরা ঘোড় সওয়ার এই তোরণ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। তারপর সবাই শুধু প্রবেশই করেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, দ্রব্যমূল্য সন্ত্রাসী, জেলখাটা কয়েদী, ঘুষখোর সুবিধাবাদী সবাই এই তোরণ দিয়ে প্রবেশ করেছে। এই দীর্ঘ দিনে আর কাউকে বের হতে দেখিনি। আজ অনেকদিন পর আবার বের হওয়ার জন্য ছয়টি কফিন তোরণের কাছে এসে জড়ো হয়েছে।

কিন্তু এই কফিনগুলোতে কাদের লাশ আছে?
আমার স্থায়ী মেমোরিতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে এ লাশগুলোর ব্যাপারে সমস্ত তথ্য এসে জমা হয়েছে। আমি এক নিমিষেই দৈনিক পত্রিকাগুলোর আজকের সংস্করণ উল্টেপাল্টে দেখি।
"বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর।"
বড় বড় শিরোনামে লাল অক্ষরে ছাপা সংবাদ শিরোনামটি দেখে আমি চমকে উঠি। আবারও দৃষ্টি দেই কফিনগুলোর দিকে। আচ্ছা আমার কি দৃষ্টি বিভ্রম ঘটছে? কিন্তু তা তো হওয়ার কথা নয়। কারণ আমার অর্গান অব সাইট বা দৃষ্টি শক্তি তো প্রোগ্রামিং করা। এখানে ভুল হওয়ার অবকাশ নেই। তাহলে আমি ছয়টি কফিন দেখছি কেন?

আমি আবারও গুণে দেখি।
নাহ্, ঠিকই তো আছে।
কফিনতো ছয়টি!

পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আর আমি কফিন দেখছি ছয়টি! আমার দৃষ্টি বিভ্রম না ঘটে থাকলে নিশ্চয়ই এখানে অন্য কারও কফিন আমি দেখছি। কিন্তু সেটি কার! ভাবতে গিয়ে আমার সাইবারনেটিক অর্গান গুলোর মধ্যে আবারও জট লেগে যায়। নিউরনগুলো অস্থিরভাবে ছুটোছুটি করতে থাকে।

ঠান্ডা মাথায় আমি আবারও ভাবতে বসি। প্রথম পাঁচটি কফিনের মাঝে যে পাঁচজন খুনির লাশ আছে প্রথমে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করি। আমার কাছে এটি এক মুহূর্তের ব্যাপার। প্রত্যেকের বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড স্ক্যান করে নিমিষেই সবার পরিচয় নিয়ে নেই।

প্রথম পাঁচটি কফিনে যথাক্রমে বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং একেএম মহিউদ্দিন এর লাশ। বাকি কফিনটিতে কার লাশ তা দেখার জন্য আতিপাঁতি করে খুঁজেও কোন আইডি কার্ডের সন্ধান পাই না। এবার আমি পুরো দশ মাত্রার দৃষ্টিশক্তি দেই কফিনের উপর। কিন্তু নাহ্। আমার দৃষ্টিশক্তি সর্বশেষ এই কফিনের দেয়ালে আঘাত খেয়ে ফেরত আসছে। দেয়াল ভেদ করার ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সর প্রযুক্তি আমার সাইবর্গ আই দুটোতে থাকলেও আমি কফিনের দেয়াল ভেদ করে দৃষ্টি ভিতরে দিতে পারছি না।

আমার প্রচণ্ড জেদ চেপে যায়। সর্বশেষ এই কফিনটির রহস্য আমাকে উদঘাটন করতেই হবে। কফিনগুলো কাঁধে নিয়ে খুনীদের স্বজনরা একে একে কফিন নিয়ে বের হয়ে আসছে। আমার সাইবার দৃষ্টির সামনে দিয়েই সবাই যাচ্ছে। কেমন একটা হীনম্মন্যতার মনোভাব স্বজনদের চোখে মুখে। আবার অনেকের চোখে মুখে জাতিকে ৩৪ বছরের লজ্জা থেকে নিস্কৃতি দেবার আনন্দও দেখতে পাচ্ছি।

আমি প্রতিটি কফিনের লাশের নিউরনগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাই। আমার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ক্রমাগত সংকেত পাঠিয়ে যেতে থাকে মৃত লাশগুলোর মস্তিস্কের নিউরনে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা খুনিদের মস্তিষ্কে কোন নিউরনই জীবিত নেই। তাই খুনীদের মস্তিষ্ক থেকে কোন প্রত্যুত্তর আসছে না। আমার তা দরকারও নেই। কিন্তু আমার ভাবনায় সর্বশেষ কফিনটির কথাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের লাইনচ্যুত ট্রেনটি যখন লাইনে উঠে চলতে শুরু করেছিল সেদিন এই তোরণ দিয়েই ছয় জন সামরিক উর্দি পরা ঘোড় সওয়ার বের হয়ে গিয়েছিল। আজ আবার ছয়টি কফিন তোরণ দিয়ে বের হচ্ছে।

আজ ২৯ জানুয়ারি ২০১০ সাল। খুনীদের ফাঁসিতে ঝুলানো নিথর লাশগুলো কফিনে করে এই তোরণ দিয়ে বের করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের শেষ আশ্রয়স্থল জন্মভূমিতেই তাদের দাফন করা হবে। স্বজনরা চোখের পানি মুছতে মুছতে লাশ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ছয় নাম্বার কফিনটিও আমার চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে চলে গেল। আমি কিছুতেই এই কফিনের ভিতরের রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি।

ঢাকা নগরীর পশ্চিমে শায়েস্তা খাঁর তোরণের এ পাশে থেকে আমার ভাবনায় শুধু এই বিষয়টি ঘুরতে থাকে। সর্বশেষ এই কফিনে কি আছে! কেন আমার দৃষ্টি কফিনের দেয়ালে আঘাত খেয়ে বার বার ফিরে আসছে! কি রহস্য আছে এই ছয় নাম্বার কফিনে! আমি ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসি। ভাবতে ভাবতে আমি ৩৪ বছর আগের সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। সর্বশেষ এই কফিনটির রহস্য জানতে হলে আমাকে ৩৪ বছর আগের হিসাব নিকাশগুলো খুব সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। ছয় নাম্বার কফিনের রহস্যের সন্ধানে আমি দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তে আমার ভাবনা শক্তিকে কাজে লাগাই।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×