somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান ইলেভেন (চতুর্থ পর্ব)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের গুলো পড়তে চাইলে-
ওয়ান ইলেভেন (তৃতীয় পর্ব)
ওয়ান ইলেভেন (দ্বিতীয় পর্ব)
ওয়ান ইলেভেন (প্রথম পর্ব)


কে! কে যায়!
আমি প্রায় চীৎকার করে উঠি।
ভাগ্যিস আমার অর্গান অব স্পীচ সক্রিয় না থাকায় আওয়াজ বের হয়নি। শায়েস্তা খাঁর এই তোরণের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে কেমন যেন একটা ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। অথবা বলা যায় আমার মস্তিষ্কের দুই ধরনের নিউরনের মধ্যে একটা বিশ্রাম বিশ্রাম ভাব চলে এসেছিল।

অতি সন্তর্পনে চোরের মতো করে কে একজন শায়েস্তা খাঁর এই তোরণের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। গেটের ওপাশে প্রহরীকে দেখা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের হালুয়া রুটি খেতে তোরণ ফাঁকা রেখে কোথাও গিয়েছে মনে হয়।

আমার ঝিমুনি কেটে যায়। দশ মাত্রার দৃষ্টি ফেলি আগন্তুকের উপর।

আরে!
এ যে দেখছি সেই পাপেট!

ওয়ান ইলেভেনের দিনগুলোতে বসের ল্যাবরুমে গবেষণার জন্য পাপেটটি আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয়েছিল। একটি রোডম্যাপ ধরে ধরে পাপেটটি কৌশলে বসের ল্যাবরুমে ঢুকে পড়ে। তারপর সে কী হম্বিতম্বি!
ল্যাবরুমের সংস্কার করতে হবে, রোডম্যাপ ধরে চলতে হবে, দুর্নীতিকে না বলতে হবে, লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে উঠিয়ে দিতে হবে।

তখন আমি মনে মনে হেসেছি। আমি জোরে হাসতে পারি না। কারণ নিষ্ঠুর ওয়ান ইলেভেনে আমি যখন রাজপথে মৃত গণতন্ত্রের নমুনা হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম- তখনই শেষ হাসি হেসে নিয়েছিলাম। আমার ঠোঁটের দু প্রান্ত ছুঁয়ে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছিল মানুষের এই নৃশংসতা দেখে। এটিই আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠা শেষ হাসি ছিল। সাইবর্গ ম্যান হয়ে জন্মাবার পর থেকে বস আমার প্রোগ্রামিংয়ে হাসি নামক সফটওয়্যারটি দেন নি।


পাপেটটি চোরের মতো পা টিপে টিপে তোরণের দিকে এগুচ্ছে। একবার ভিতরে উঁকি মেরে দেখে নিল ওপাশে কে আছে। আচ্ছা পাপেটটির তো বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড নেই। তাহলে সেওতো এই তোরণ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ এই ডিজিটাল আইডি কার্ড না থাকায় আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুতরাং পাপেটটিও যেতে পারবে না।

আমি মনে মনে পুলকিত হই। যাক বাবা! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে একটি কাজের কাজ হয়েছে। ডিজিটাল আইডি কার্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় আট কোটি লোককে ডিজিটাল হিসাবের আওতায় নিয়ে এসেছে। ওয়ান ইলেভেনের আগে এ কার্ড করার বিধান ছিল না। তাই আমার বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড নেই। আর পাপেটের তো থাকার প্রশ্নই আসে না। তাই এই তোরণ দিয়ে পাপেটের প্রবেশের প্রশ্নই আসে না।

স্বাগতম! স্বাগতম!!
তোরণের ওপাশ থেকে একগাল হাসি নিয়ে প্রহরী এগিয়ে আসে।

আরে ব্বাহ!
কী অদ্ভূত!!
ভোজবাজির মতো কোত্থেকে পাপেটের হাতে একটি আইডি কার্ড এসে হাজির হয়। শুধু কি আইডি কার্ড! আমি দেখতে পাই পাসপোর্ট, ভিসা, ডলার, নাগরিকত্বের সনদ, চারিত্রিক সার্টিফিকেট সহ আরও অনেক কিছু। প্রহরী পাপেটের হাতে সেগুলো গুঁজে দেয়। আর পাপেটটি কেমন রহস্যময়ী হাসি হেসে বাম হাতে একটি বড়সড় প্যাকেট ধরিয়ে দেয় প্রহরীর হাতে। তারপর বিজয়ীর ভঙ্গিতে গেটের ওপাশে পা বাড়ায়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তা দেখি।

আমার সাইবর্গ আই দুটোতে দেয়াল ভেদ করে স্ক্যান করার প্রযুক্তি সংযুক্ত আছে। আমি প্যাকেটের ভেতরের জিনিসগুলো দেখি। আর্জেস গ্রেনেড, দশ ট্রাক অস্ত্র, একে ফর্টি সেভেন রাইফেল, পিস্তল...আরও আরও অনেক কিছু। এগুলো দেখে আমার মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর মধ্যে আবারও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। ওয়ান ইলেভেনে মৃত গণতন্ত্রের নমুনা হয়ে রাজপথে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আমার ভাবনাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। জটিল সব ভাবনাগুলো থেকে বের হয়ে আমি আবারও সরলভাবে সবকিছু ভাবতে বসি।

ছয় জন ঘোড় সওয়ার শায়েস্তা খাঁর এই গেট পার হয়ে চলে গেছে সে কবে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে গণতন্ত্রের লাইনচ্যুত ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে একদল স্বপ্নদ্রষ্টা ঠিকই ট্রেনের যাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন। সেদিনই ছয় ঘোড় সওয়ার এই গেট দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দুই বৎসর ঘোড় সওয়াররা সারা বাংলাদেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তখনও আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের প্রথম অধ্যায়ের করুণ পরিণতি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম সেই পাপেট সরকারের কথা...।

চলবে...

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×