somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যন্ত্রণা-৩

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link
Click This Link



বই নিয়ে বসে আছে তমা। কিন্তু পড়া হচ্ছে না। মাথাটা একদম কাজ করছে না। কেমন ভোতা হয়ে আছে। পরশুদিন পরীক্ষা। নিজের ওপরই বিরক্ত লাগছে। কি দরকার ছিল? খামোখা! আম্মা একবার এসে বলে গেছে, ‘এখন আর পড়তে হবে না। শুয়ে পড়, ঘুমা। সকাল সকাল উঠে তারপর পড়িস।’
কিন্তু তমা বসেই আছে। ভয় লাগছে। আগের পরীক্ষাটা খারাপ হয়েছে। এটাতে ভাল করতেই হবে। নয়তো গ্রেড অনেক নেমে যাবে। না পড়া হচ্ছে, না ঘুম। কেমন একটা আধ-খেচড়া অবস্থা। হঠাৎ চমকে উঠল তমা। ফোন এসেছে। এত অন্যমনস্ক ছিল যে একটু শব্দেই প্রায় লাফিয়ে উঠেছে। স্বর্ণার ফোন। তমার তেমন কোন বন্ধু-বান্ধব নেই। ও চুপচাপ থাকে, কারো সাথে মিশতে পারে না, নিজের কথা বলতে পারে না, কারো সাথে তেমন কথা বলতেও পছন্দ করে না। সবাই ভাবে ও বুঝি অনেক অহংকারী। তাই দূরে দূরে থাকে। কিন্তু স্বর্ণা কেন যে ওকে এত পছন্দ করে তমা বুঝে না। ফোন বাজছে, তমা ধরছে না, এখন স্বর্ণার বকবক শুনতে ইচ্ছা করছে না। লাইন কেটে গেল। স্বর্ণা নাছোড়বান্দা, ও আবার ফোন করেছে। আবার...আবার...পর পর তিনবার। রিসিভ করতেই হল।
-‘হ্যালো।’
ফোন ধরেই স্বর্ণার চিৎকার, ‘এই তমা, কোথায় ছিলি? কখন থেকে ফোন করছি। কি করছিস?’
‘আমি পড়ছি। তুই কি জরুরী কিছু বলবি?’
‘হ্যাঁ, শোন না কি হইছে! সবুজ ফোন করছে আজকে।’
‘ফোন করছে? কি চায় বদমাশটা?’
‘এই তমা, বদমাশ বলতেছিস কেন? হাজার হইলেও I love him & he loves me.
Love? He is just playing with you. বুঝিস তুই গাধা? ও খেলতেছে তোকে নিয়ে।’
‘তমা, কেন তোর এত রাগ বলতো? কি করছে ও? একটা ভুল করছিল। ভুল তো মানুষই করে। আর ও স্যরি এর জন্য।’
‘স্যরি বলছে যখন, ভাল তো। মাফ করে দে। আমাকে ফোন করছিস কেন?’
‘তমা, আমার মনটা আজকে অনেক ভাল। আমার সবচেয়ে খুশির কথাটা আমি তোর সাথে শেয়ার করবো না? অথচ তুই এইভাবে কথা বলতেছিস! মন খারাপ করে দিচ্ছিস।’
‘আমি এইরকমই। বিনা কারণে তোকে দোষারোপ করল, পুরা দুই সপ্তাহ যোগাযোগ বন্ধ রাখল, ফোন করে না, ফোন করলে ধরে না। আর আজকে ফোন করে স্যরি বলছে বলেই তুই গলে গেলি! তুই কি করে জানিস এই দুই সপ্তাহে ও কি করে বেড়াইছে? ও তোরই ছিল কিনা না আর কারো কাছে গেছে। এত সহজে বিশ্বাস করিস কেন? ছেলেদের কখনো বিশ্বাস করতে হয় না। তারা সব সুবিধাবাদী। ওদের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা থাকে।’
‘তমা... তমা...শোন তমা...সবাই একরকম না। কখনো না। সবুজ আমাকে ভালবাসে, আমাকে চায়। আমি জানি এর মধ্যে কোন অন্যায় নাই। তুই যদি শুনতি আজকে ফোন করে ও কিভাবে কাঁদতেছিল। ছেলেমানুষ এমন করে কাঁদতে পারে আমি কখনো ভাবি নাই। আমি ওকে বিশ্বাস করি তমা।’
ক্লান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তমার বুক থেকে। ও হতাশ গলায় বলে, ‘ আমি জানি না স্বর্ণা। তুই যদি এভাবেই ভাল থাকতে পারিস তো থাক। আমার কিছু বলার নাই। আমি রাখি এখন। শরীর ভাল নাই।’
‘কি হইছে শরীরের?’ উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চায় স্বর্ণা।
‘তেমন কিছু না। মাথা ব্যথা। আচ্ছা রাখি এখন। বাই।’

ফোন রেখে দেয় তমা। নিষ্প্রাণ চোখে তাকায় বারান্দার দিকে। একটা হাল্কা সাদাটে আলো দেখতে পায়। উঠে লাইট নিভিয়ে দেয় তমা। এবার আলোটা স্পষ্ট হয়। চাঁদের আলো। পুরো বারান্দা, বারান্দা পার হয়ে ঘরের কিছুটা পর্যন্ত আলো এসে পড়েছে। তমা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। চাঁদটা অনেকটা উপরে উঠে গেছে, এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আকাশটা আলো হয়ে আছে। ধবধবে জোছনায় তারাগুলোও ম্লান হয়ে আছে। কি অপার্থিব একটা সৌন্দর্য!

স্বর্ণার কথা ভাবে তমা। ও এখন কত সুখী। একজন মানুষকে ভালবাসতে পারা যে কত আনন্দের একটা বিষয়। তমা ভালবাসতে পারল না কখনো, পারবেও না। ভালবাসা কি সেটা বোঝার আগেই ওর জীবনটা ভীষণ ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বিশ্বাস। কখনো ভাবে না কাউকে ভালবাসবে বা কারো সাথে জড়াবে নিজেকে। ওর মধ্যে সেই অনুভূতি বা ইচ্ছাটাই জাগে না। বরং আর কাউকে এমন অর্থহীন আবেগে ভেসে যেতে দেখলে বিরক্ত হয়। একটা অক্ষম রাগে অস্থির হয়ে উঠে। তমা কি কখনোই পারবে না একটু স্বাভাবিক হতে?

ধুর... পরীক্ষার পড়া মাথায় উঠেছে। বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তমা। দেখে রাতের সৌন্দর্য। কি যেন একটা ছায়া ছায়া উড়ে গেল সামনে দিয়ে। কোন পাখি? না বোধহয়, চামচিকা হবে। নাইট গার্ড তীক্ষè শব্দে সাইকেলের বেল বাজিয়ে চিৎকার করে উঠল,‘ হুশিয়া.......র’। দূরে একটা কুকুর ডেকে উঠল। পাশের বাসার পিচ্চিটা ঘুমের ঘোরেই কেঁদে উঠল হঠাৎ করেই। তারপর আবার থেমেও গেল। ঘোরলাগা জোছনায় ভেসে যেতে থাকল চারদিক।


চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:২০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×