somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাগ্নির মৃত্যুই কি ডেকে নিলো আমাকে লালমনিরহাটে ৪ বছর পর!!

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামের বাড়িতে তেমন যাওয়া হয়না, ঈদের পর গেলাম ঠিক ৪ বছর পর সরকারী টুরে, সাথে তথ্য কমিশনের সচিব। ট্রেনেও গেলাম অন্তত ৮ বছর পর। এখন নিজেকেই মনে হয় অপরাধী? তাহলে, ৪ বছর পর আমার যাবার অপেক্ষায়ই কি ছিলো তরতাজা ও সুস্থ ভাগ্নিটার মৃত্যু?

১৫ আগস্ট বিকেলে গেলাম লালমনিরহাটে বড়বোনের বাসায়, একনজর দেখা হলেও স্বভাবসুলভভাবে ভাগ্নির সাথে কথা হলোনা। বড়বোন আমার জন্য রান্না নিয়ে মহাব্যস্ত। কারণ রাতেই আমি যাবো সার্কিট হাউসে এবং পরদিন ১৬ আগস্টে আছে মিটিং ।

সন্ধ্যার দিকে ১০/১২দিন আগে সিজার করা সম্পূর্ণ সুস্থ ভাগ্নির বুকের ব্যথা এবং অপারেশনের আশেপাশে ব্যথা দেখা দেয় এবং ভাগ্নি জামাই তাকে প্রথমে নিয়ে যায় ''শাপলা ক্লিনিক'' এ যেখানে সিজার করা হয়েছিলো। সেখানকার ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লিখে দেয় গ্যাস্ট্রিকের নানা ওষুধ!!

বাসায় এসে না কমে বরং তার অসুখ বাড়লে আবার পাঠাই সরকারী হাসপাতালে কিন্তু তাদের যন্ত্রপাতি নেই মর্মে তারা চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করে নিতে বলে ৫০ কিমি দূরের রংপুর মেডিকেলে। তাই করা হলো, রাত ২টায় ভরতি হলো এবং নানা পরীক্ষার চিকিৎসা চললো। বিকেলে খবর পেলাম কিছুটা আরাম হয়েছে এবং ভাগ্নি হাটাচলা করতে পারছে।

আমি সন্ধায় পৌছুলাম গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে, ১৭ আগস্ট সেখানেও মিটিং হবে। মিটিংশেষে দুপুরে রওনা দিলাম নীলফামারীর দিকে। হঠাত ছোটভাইর ফোনে জানলাম, এমাত্র ভাগ্নিটা মারা গেলো। স্বপ্নের মতোই মনে হতে লাগলো, বাপ-মাসহ আমরা বুড়োরা কতো জটিল ব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকলাম আর মরে গেলো ২৫/২৬বছরের ভাগ্নিটা।

এই মেঝো ভাগ্নিটা আমারই কোলে-পিঠে মানুষ শুধু নয়, তাদের ৪ ভাই-বোনের নামগুলোও আমারই দেয়া। তাকে স্কুলে ভর্তি থেকে হাইস্কুলে চাকরীর চেষ্টায়ও সরাসরি আমার ভূমিকা ছিলো। আরেকটু সুস্থ হলেই নতুন চাকরীতে যোগ দেবার কথা ছিলো। কিন্তু চারীতে তার আর জয়েন করা হলোনা!!

তার এই ২য় মেয়েটি ভূমিষ্ঠ হবার পর আমাকেই ফোন করে সে মেয়ের নতুন একটা নাম নিয়েছিলো---সারাহ কবীর মোল্লাহ। আমার দেয়া নাম ছাড়া কারো নামই সে নিতে রাজী ছিলোনা। ১ম মেয়েটির নাম জারাহ কবীর মোল্লাহ।

১২/১৩দিনের এই শিশুটির কী হবে এখন? আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন-তাই করেছেন? কিন্তু আমার দুঃখ, কেনো গেলাম এদ্দিন পর আর ৪বছর পর আমার জানাজার অপেক্ষায়ই কি ছিলো ভাগ্নিটা? আমার মা-বাবার জানাজাও আমিই পড়েছিলাম, এবার আবার ভাগ্নির পালা!! লালমনিরহাটে জানাজশেষে তাকে স্বামীর বাড়ী নামরীতে দাফন করা হলো।

আমার শুধু মনে হচ্ছিলো, শাপলা ক্লিনিকই মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে দিয়েছিলো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ!! ক্নিনিকের বিরুধে মামলা করার চিন্তাও করলাম, কিন্তু আমার বোন ছাড়া ভাগ্নিজামাই রাজি নয় বলে পারিনি। তবে শাপলা ক্লিনিকের মালিক খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেয়ে গেলাম আমারই এক বাল্যবন্ধুকে। সে জানালো, দোস্ত আমি কয়দিন হলো আমার মালিকানা শেয়ার তুলে নিয়ে এই ক্লিনিকের দায়িত্বমুক্ত হয়েছি। তাই আমাকে আগে না জড়িয়ে দেখে যাও এর সত্যতা। আমিও তোমার সাথে আছি ইত্যাদি।

দেখলাম, সে ৫লাখ টাকার মালিকানা শেয়ার লাভসহ তুলে নিয়েছে ঠিকই। কারণ হিসেবে বললো--তার মতো লোক থাকায় অনেক কষ্টে ক্লিনিককে সে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিনিত করেছিলো এবং বেশ নামডাকও হয়েছিলো এর। কিন্তু ইদানীং সেই ক্লিনিক কসাইখানায় পরিনত হয়েছে, ভাল ডাক্তার-নার্সের বদলে দালাল দিয়ে রোগীধরা আর নানা অপকর্মের দরুন তাকে দায়িত্ব থেকে বের হতে হয়েছে বিবেকের তাড়নায় ইত্যাদি।। সে আরো বললো--এই ক্লিনিক আর ২মাসের মধ্যেই বন্ধ হতে বাধ্য!! অনেকেই জানালো--এই ক্লিনিকে অনেকের অপমৃত্যু হয়েছে অবহেলায় এং ভুল অপারেশনে, এমনকি পেটে গজ ফিতা বা তুলো বা কেচিসহ সেলাইর ঘটনাও ঘটেছে।

শুনলাম ভাগ্নিও বলেছিল, তার অপারেশন নাকি ভালো হয়নি, সে মারা যাবে বলেও আশঙ্কা করে সবার কাছে মাফও চেয়েছে। তবে সবচে খারাপ লাগে যে, সে রোজার মাসেও গর্ভাবস্থায় কুরআন শরীফ খতম করে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলো এবং ওখান থেকেই খতম উপলক্ষে একটা দোয়ার অনুষ্ঠান করতে তার মাকে খুব পীড়াপীড়ি করেছিলো। তার মা তার আবদারও রেখেছিলো। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়াও এই শরীরেও রোজা রেখেছিলো, কারো বাধা মানেনি।

তবে সে নাকি বলেছিলো, সিজার করবে না বাচচা প্রসব হবে নরমালী। এতে সে যদি মরেও সে শহিদী মরণ বেচে নেবে। কিন্তু স্বামীর চাপে সিজার হয় তার। কাকে দোষ দেবো!!





সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×