somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুনিয়া তোমার হাত ধরে আজ সারা রাত হাঁটবো

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাতে ঘুম হয় না মোহিতের। ভার্সিটি জীবনের শেষ প্রান্তিকে এসে এরকম এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হবে তা ও ভাবতে পারেনি। অসহ্য! বার বার এপাশ ওপাশ করে ঘুমের মহড়া দিয়েও নিদ্রাদেবীর দেখা নেই। নিদ্রাদেবীরও কি মুনিয়ার মতো পাথুরে হৃদয়!
মুনিয়া, আহা মুনিয়া!

মুনিয়ার সাথে প্রথম পরিচয়ের দিনটির কথা মনে পড়ে। সেদিন ভার্সিটিরও প্রথম দিন- মনটা একধরণের প্রফুল্লতায় ভরা ছিল মোহিতের। প্রথম ক্লাসটি নিলেন ওদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ্ কামাল। সংস্কৃতি সম্পর্কে বলছিলেন স্যার। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব আমাদের জন্য ক্ষতিকর -- এ বিষয়ের উপর ক্লাসেই এক বিতর্কের আয়োজন করেন তিনি। ছেলে ও মেয়েদের দুটি গ্রুপ তৈরী হল। ছেলেদের গ্রুপের দলনেতা নির্বাচিত হয় মোহিত। মেয়েদের গ্রুপের দলনেত্রীর নাম জানানো হল- মুনিয়া হক। নাম শুনেই মুনিয়ার দিকে তাকায় মোহিত। দৃষ্টি ফেরাতে পারলো না কয়েক মূহূর্ত। সত্যিই মুনিয়ার মতোন সুন্দরী সে খুব কমই দেখেছে।

বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। পক্ষে বলবে ছেলেরা এবং বিপক্ষে মেয়েরা। বেশ ধারালো যুক্তিতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উপর গড়ে ওঠা অপসংস্কৃতির অশুভ পরিণামের কথা তুলে ধরে মোহিত পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্য তথা বাঙালী সংস্কৃতির বৈপরীত্য এবং বাঙালী সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমণের প্রয়াস পায় সে। মোহিতের পরই মুনিয়ার পালা। মোহিতের দেওয়া প্রতিটি যুক্তি খন্ডন করে সে। বক্তৃতা শেষে একটু ব্যঙ্গ করে, ".... আমার বিঞ্জ বন্ধুকে সাজেশন দিচ্ছি, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দান ঐ প্যান্ট শার্ট পড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে না এসে বরং বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধূতি কিংবা গামছা পতে সেই চোখ রাঙ্গানো টোলের খোঁজ করতে। এ বক্তব্যের পর পরই পুরো ক্লাস হৈ হুল্লোর আর হাসিতে ফেটে পড়ে। মোহিত একটু অপমানিত বোধ করে। মনে মনে এর এক কড়া জবাব খুঁজছে। এমন সময় রসিক স্যার অনেকটা বেরসিকের মতোন বলে বসেন, "আজ আর হাতে সময় নেই। বিতর্ক জমে উঠলেও চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই-- আগামী ক্লাসে তোমাদের সাথে দেখা হবে।" মোহিত এ সময়টায় মুনিয়ার দিকে তাকায়-- মুখ ভরা দুষ্টুমী হাসি ওর। মোহিত চোখ ফিরিয়ে নেয়। মনে হয় ওকে এভাবে জব্দ করতে পেরে মেয়েটি যেন খুবই খুশী।

ক্লাস শেষে মুনিয়াই এগিয়ে আসে, মিষ্টি করে বলে
-- বিতর্ক চালিয়ে গেলে আপনারাই কিন্তু জিততেন
-- আপনি বোধহয় আবারো আমাকে ইনসাল্ট করছেন
-- সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনার মাঝে সম্ভবত: র্স্পোটসম্যান স্পিরিট নেই, সবকিছুই সিরিয়াসলী নেন।
মোহিত একটু লজ্জা পায়। তবুও সে মেয়েটির ব্যক্তিত্বের কাছে হেরে যাবে না কিছুতেই। প্রসঙ্গ পাল্টে সহজভাবে বলে, আমাদের পরিচয়পর্ব কিন্তু এখনো অসম্পূর্ণ, কোন কলেজ থেকে এসেছো তুমি? ইত্যাতি প্রাসঙ্গিক কথকতা চলে কিছুটা সময়।

বাড়ি ফিরলে সেদিন ওর ভাবনায় মুনিয়া আসে বারবার। ডায়েরীর পাতাতেও মুনিয়া আসে-- আসে ওর ভাল লাগা হয়ে। মুনিয়াও কি মোহিতকে নিয়ে অমনটি করে ভাবছিল
সেদিন!

দিন যায়। দুজনের আন্তরিকতাতেই ওদের বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতর হয়। মোহিত প্রায়ই মুনিয়ার বাসায় যায়, মুনিয়াও আসে। ক্লাসের অন্যান্য ছেলেমেয়েরাও ওদেরকে নিয়ে মজা করে, কেউ কেউ ঈর্ষাও করে। ওরা পাত্তা দেয় না।

আরো একটা বিশেষ দিনের কথা মনে পড়ে মোহিতের। অফ পিরিওডে ফাঁকা ক্লাসে বসে ওরা দুজন গল্প করছে। নীল সিল্কের শাড়ী পড়ে এসেছিল ও। ফর্সা মুনিয়াকে বেশ মানিয়েছে। গল্পের ফাকেঁ ওর শাড়ী ছাপিয়ে ঝলসে ওঠা স্তনভূমির দিকে তাকায় মোহিত। কমলার কোয়ার মতোন টসটসে ঠোঁটদুটোতে রহস্যময় হাসি লেপ্টে আসে যেন। সেদিকে তাকাতে তাকাতেই আচমকা মোহিতে ঠোঁট এগিয়ে আসে। বয়সের দোষ কিংবা ক্ষণিক আবেগে মুনিয়াও বাধা দিতে পারে না। মিশে যাওয়া দুজোড়া ঠোঁট তির তির করে কাঁপতে থাকে কয়েক মিনিট। একসময় দুজনই সম্বিত ফিরে পায়। লজ্জায় লাল মুনিয়া একটু সংযত হয়ে বলে ওঠে
-- ছি:, কি ছেলেমানুষীই না করলাম।
মোহিত কথা বলে না। স্বর্গ সুখে আচ্ছন্ন সে।

ঐদিনের পর থেকেই মুনিয়ার সাথে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুজেঁ মোহিত। দুদিন পর অনেক রোমান্টিকতা নিয়েই মুনিয়াকে সে রঙ্গীন স্বপ্নের কথা শোনায়। মুনিয়ার মুখ থম থম, স্তব্ধ থাকে কিছুক্ষণ। ধরা গলায় বলে,
-- সে হয় না মোহিত। আমি যে একজনকে কথা দিয়ে রেখেছি। রুবেলের কথা তোমাকে বলিনি কখনো। আমার খালাতো ভাই। ব্রিষ্টল ইউনিভার্সিটিতে এম এস করছে, এ বছরই ফিরবে। আমাদের দুজনের মাঝে সেই স্কুল জীবন থেকেই অ্যাফেয়ার্স। দেশে এলে ওর সাথে তোমাদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সারপ্রাইজ দেব বলেই একথা বলিনি এ্যাদ্দিন। এই দেখো রুবেল আর আমার অঙ্গীকার...

এগিয়ে দেওয়া অনামিকার দিকে তাকিয়ে থাকে মোহিত। এর আগেও আংটিটা বহুবার দেখেছে সে। ছোট্ট চুণী বসানো আংটিটি রেড সিগনালের মতোন জ্বলে ওঠে আজ। আংটির প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মুনিয়ার কাছে যাওয়ার সাধ্যি নেই ওর। ফিরে আসে মোহিত।

স্মৃতি রোমন্থনে মোহিতের প্রৌঢ় রাত প্রৌঢ়তর হয়। প্রতিটি মূহূর্ত ওর কাছে বিস্বাদ লাগে। হঠাৎ এক সময় এই নি:শব্দ নিশুতি রাতে মুনিয়াকে স্বপ্নীল নারী বলেই মনে হতে থাকে। সমুদ্র উথ্থিত ভেনাসের মতোন মোহিতের ভাবনায় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে মুনিয়া। মুনিয়ার ঠোটেঁ মদির হাসি- নেশাধরা চোখে তাকিয়ে আসে সে। কিছু কি বলতে চায় সে! মুনিয়া কি নি:শব্দ কথায় ঘুম পাড়ানিয়া গান শোনাবে। না, মোহিত এখন আর ঘুমুবে না-- মুনিয়ার সাথে জেগে থাকবে সে। ওর কবি বন্ধু সঞ্জীব চৌধুরীর কবিতার একটি লাইন একটু বদলে বলে ওঠে মোহিত-- মুনিয়া তোমার হাত ধরে আজ সারা রাত হাঁটবো।









সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×