somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এয়ার টাইট ক্যানে করে বিশুদ্ধ বাতাস বাজারে বিক্রি হবে কি?

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুড়িল ফ্লাইওভার চালু হবার পর এলাকাটা ঘুরতে খুব মজা লাগে। যদিও এখনো রাস্তার অনেক কাজ বাকি কিন্তু ফ্লাইওভারের ওপর থেকে যখন উড়াল পথে পেঁচিয়ে থাকা গোটা এলাকাটা চোখে পড়ে, তখন বেশ লাগে এটা ভাবতে যে, বিদেশে নয়, দেশে থেকেও এমন আধুনিক শহর-সুলভ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। উড়াল-সড়কটির একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে আবার বিমানবন্দরের উড্ডয়নের রানওয়েটা চোখে পড়ে। ভাগ্যবান হলে সেই বিশেষ স্থানটি থেকে একজন দেখতে পাবে, ধাতব ডানায় ভর করে মানব নির্মিত দানবীয় পাখিটি কিভাবে ভেসে পড়ে বাতাসে। যেহেতু এই এলাকাটা হয়ে প্রতিদিন অন্তত দুইবার যাতায়াত করি, তাই জানি যে ফ্লাইওভারটি চালু হয়ে যাওয়ার পর, অনেক মানুষের কাছ থেকে তপ্ত বিকেলগুলো কাটানোর আরও একটি জায়গা কমে পেল।
ফ্লাইওভারটির কাজ যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল, তখন এটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষের কাছে। তারা সেটাতে উঠে ঘোরাফেরা করত, রেলিংয়ে বসে বাদাম চিবত আর শিশা ভরা বাতাস খেত। অনেকে অবশ্য গাড়িঘোড়ার চলাচলে ব্যস্ত হয়ে ওঠা স্বত্বেও, এখনো ফ্লাইওভারটির ডিভাইডার কিংবা পাশের রেলিংটিতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসে থাকে। জীবন-বাতাস বেরিয়ে যাবার আশঙ্কা থাকলেও, বাতাস খাওয়া চাই।

মিরপুর ফ্লাইওভার হয়ে মিরপুর ডিওএইচএস কিংবা কালশি যাওয়ার রাস্তাটার কিনারে বসেও অনেকে বিকেলটা কাটায় আর নিশ্চয়ই প্রাণপণে অদূরের দালানকোঠা দ্বারা বেষ্টিত নোংরা সবুজ পানিতে ভরে থাকা নিচু-জমিটাকে পাহাড় ঘেরা লেক হিসেবে কল্পনা করতে থাকে। ছোট ময়লা খেকো মাছ, ব্যাঙাচী, পোকামাকড়ের হুটোপুটিতে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় পানিতে, সেটা দেখতে যে পয়সা দিতে হচ্ছে না এইতো বেশি! অবশ্য আর তো কয়েকটা দিন। অচিরেই নিচু-জমিগুলো ভরে বড় বড় দালানকোঠা তৈরি করা হবে সেখানে। এটা আশ্বস্ত করে সেখানে সাইনবোর্ডও লাগানো আছে বিশাল বিশাল।

রাজধানীর উপকণ্ঠে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আরেকটা চমৎকার ঘুরতে চাওয়ার জায়গা আছে। বাউনিয়া। বাউনিয়ায় (দলিপাড়া), রানওয়ের সীমানার দেওয়াল সংলগ্ন একটা স্থানে এদিক ওদিক বসে মানুষজন বিমান অবতরণ দেখে আর চটপটি, ফুচকা খায়। গিয়ে এক বাটি ফুচকা কিনে দুই-তিন পিস মুখে দিতে না দিতেই যে অবতরণের খেলা দেখাতে বিমান চলে আসবে, তা কিন্তু না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে অনেকক্ষণ! ভাগ্য ভাল হলে কিংবা রাতের দিকে গেলে (রাতে যাওয়া নিরাপদ নয়), দানবীয় আকারের বিমানগুলোর প্রলয়ঙ্করী অবতরণের দৃশ্য দেখা যেতে পারে। যখন কোনও বিমান অবতরণ করে, তখন এত ধুলাবালি ওড়ে যে জামার ভেতর ঘর্মাক্ত শরীর বালুতে মাখামাখি হয়ে যায়। চটপটি, ফুচকা দাঁতের মাঝে বালিতে কিচকিচ করে। আবার বালিতে কিচকিচ করতে থাকা সেই দাঁতগুলোই খুশিতে চমৎকার বেরিয়ে পড়ে যখন আকাশ কোণে অবতরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকা কোনও বিমানকে তীক্ষ্ণ বাঁক নিতে দেখা যায়।

তবে আশুলিয়ার সৌন্দর্যের কাছে, উড়াল পথ, দালানকোঠায় পরিবেষ্টিত সবুজ পানির লেক, কিংবা বাউনিয়া নামক ধাতব পাখি দেখার স্থানটি কিছুই না। উত্তরা থেকে যেতে বেড়িবাঁধ বরাবর বাম দিকের খোলা জায়গাটা, শরৎকালে কাশফুলে ভরে গিয়ে অপূর্ব এক মেঘ-শুভ্র রূপ ধারণ করে! রাস্তাটা দিয়ে দ্রুতগতির কোনও যানে চড়ে যাওয়ার সময় মনে হবে যেন উড়ে চলেছি, আর পাশে সাদা মেঘ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে! রাস্তাটার ঠিক অপর পাশটা, বর্ষাকালে নদীর পাড় ছাপিয়ে প্লাবিত হলে অদ্ভুত সুন্দর লাগে! ইটের ভাটার চিমনীগুলোকে বিবেচনায় আনা গেলে মনে হবে, যেন ভরা যৌবনা কোনও নদী! সন্ধ্যে বেলা সূর্যটা যখন পচ্চিম কোণে রঙের খেলা দেখায়, তখন আকাশটাকে প্রতিবিম্বিত করা প্লাবিত এলাকাটাকে ‘মায়াবী নদীর পাড়ের দেশ’* বলে মনে হয়। তবে রাস্তার ধারে বসে এই দৃশ্য অবলোকন করতে যাওয়ার প্রয়াস কিন্তু বিপদজনক। আমি নিজের চোখে দেখেছি মোটর বাইক চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার বাইক ও বান্ধবী সমেত কিভাবে পানিতে গিয়ে পড়েছিল। রাস্তার কিনারে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকা একজনকে সাথে নিয়ে এই চিতপটাং খাওয়াটা মোটেও অসম্ভব ছিল না। তবে এই বিপদজনক অপূর্ব সুন্দর জায়গাটাও আর থাকবে না। থাকবে না কাশফুলে ছেয়ে যাওয়া সাদা-মেঘের আকাশের মত দেখতে খালি প্রান্তরটাও। সাইনবোর্ড লাগানো আছে। এই জমি অমুক গ্রুপের, এই নদী তমুক লোকের (“নদী” কথাটা অবশ্য বলে না। একটা লজ্জা-সরমের বিষয় আছে না?)।

ভাবছি, তারপর কোথায় যাবে মানুষগুলো? ঘুরতে যাবার জায়গা গুলো কিন্তু ইতিমধ্যেই কম বিলুপ্ত হয়নি! তবুও কিছু বাকি থাকায়, কিভাবে কিভাবে যেন মানুষ সেগুলো খুঁজে নিয়েছে। ভবিষ্যতে উঁচু উঁচু দালানকোঠার পেটে চলে গিয়ে একটি জায়গাও যখন আর বাকি থাকবে না, তখন সরকারীভাবে টিকিটের বিনিময়ে হলেও, বহুতল বিশিষ্ট দালানগুলোর ছাদে ওঠার ব্যবস্থা করে দিবে তো? নইলে আমরা বাতাস খাব কিভাবে? এয়ার টাইট ক্যানে করে বিশুদ্ধ বাতাস বাজারে বিক্রি হবে কি? নদীর পাড়ের বাতাস ২০টাকা, খোলা মাঠের বাতাস ১৯ টাকা ৯৯ পয়সা?

http://www.notun-din.com/?p=6777
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×