somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রের কাছে

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কেমন আছিস বান্ধবী?
ভাল আছিস নিশ্চয়ই......ভাল তোকে থাকতেই হবে......আমার জন্য.......
সেই কবে গিয়েছিস বলতো, পাঁ.....চদিন হয়ে গেল। ভীষণ মিস করছি তোকে। কত কথা জমে আছে জানিস? ফিরে আয়....একটা একটা করে সব বলবো তোকে।

যাকগে, এখন তোর কথা বল। আমি বলেছিলাম বারবার, 'ঘুরে আয়, ভাল লাগবে'। মানতেই চাসনি আমার কথা। এখন? এখন তো ফিরেই আসতে চাচ্ছিস না।আমি জানতে চাই না কেমন লেগেছে সমুদ্র। ফোন ধরে যখন তুই চিতকার করেছিলি 'কি সুন্দর! কি সুন্দর!' বলে আমি বুঝতে পেরেছি। আর বাকিটুকু আমি দেখতে চাই যখন তোর সাথে দেখা হবে....তোর চোখে,মুখে, হাসিতে......।

মনে আছে যেবার আমরা গেলাম ভার্সিটি থেকে, পাঁচদিনে ঘুরেছিলাম চারটা জেলায়। কক্সবাজারে একদিন ছিলাম। তাড়াহুড়ো করে আমার সমুদ্র দেখা হয়েছিল। সকালে গেলাম লাবণী বীচে। যখন দূর থেকে সমুদ্রটা দেখতে পেলাম, জীবনে প্রথমবার, ধক করে উঠেছিল বুকের ভিতর। পাশ থেকে হাত খামচে ধরেছিল মুন। কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ বলার মত।

পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়ালাম ঢেউয়ের কাছে। পায়ের পাতায় সিরসিরে অনুভূতি তুলে ঢেউয়ের সাথে বালি সরে গেল। সারা গা শিউড়ে উঠল। দ্বিধা-সংকোচ-ভয় কাটিয়ে নেমে গেলাম পানিতে। একটা-দুটো ঢেউ সংকোচ কাটিয়ে দিল আস্তে আস্তে। হাবুডুবু খেয়ে, কিছুটা লবন পানি গিলে বুঝে নিলাম ঢেউয়ের খেলা। ভাব হয়ে গেল। ঘন্টাদুয়েক দাপাদাপি করে উঠে এলাম পানি থেকে। হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে ফিরে গেলাম হোটেলে।

কিন্তু কেন যেন মন ভরল না। সমুদ্র কি এমন! মনে হচ্ছিল ঠকানো হল, টিভিতে তো এমন দেখায় না। ঘোলা, সাদাটে পানি.....আর ঢেউয়ের সেই গর্জনতো নেই-ই।

বিকালে হিমছড়ি যাওয়ার প্ল্যান। আগেই ঘুরে গেছে এমন একজন বলল হিমছড়িতে দেখার কিছু নাই। শুধু পাহাড়ে চড়া। তারচেয়ে বার্মিজ মার্কেটে যাই। মেয়েরা তাতেই বেশি উৎসাহী ছিলাম। কিন্তু টিচারদের কথা হল সবাই একসাথে থাকতে হবে, আলাদা হওয়া যাবে না। যা প্ল্যান আছে তাই করতে হবে। সুতরাং গেলাম হিমছড়ি।

যাওয়ার পর মানতে হল হিমছড়ি না এলে সমুদ্রই দেখা হতো না। প্রথমে উঠে গেলাম পাহাড়ে। ঘুরলাম, দেখলাম, ছবি তুললাম। কিন্তু সাগরটা আমাকে ভীষণ টানছিল। সূর্যাস্তের আগ মূহুর্তে সবাইকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে আনলাম সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখবো বলে। জায়গাটা কেমন ফাঁকা, ভিড়ভাট্টা নেই। কেবল আমরা ক'জন। আর সাগরের সেই গর্জন! প্রতিটা ঢেউ যেন বুকে গিয়ে ধাক্কা দিচ্ছিল। ফাঁকা হয়ে গেল বুকের ভেতরটা। নিজেকে এত ক্ষুদ্র আর অসহায় মনে হচ্ছিল ওই বিশাল, অসীম সমুদ্রের সামনে। কতটুকু পন্ডিত তার মধ্যেই ছবি তুলছিল। সূর্য ডুবে যাচ্ছে, সেই ডুবু ডুবু সূর্যকে তালের তালুতে ধরে রাখা। উহ্, এত বিরক্ত লাগছিল! মনে হচ্ছিল কারো সাথে শেয়ার করতে হবে। তোকে ফোন করলাম। কিন্তু কি নিয়ে যেন বিজি ছিলি তুই। কথা হল না।

আশপাশে তাকালাম। প্রায় সবাই কেমন নিরব, স্থির হয়ে গেছে। মুন কথা বলছিল ওর হবু বরের সাথে, দেখলাম চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সোহেল একা নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাগরের দিকে মুখ করে। বাকিরাও যে যার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিন্তু বিষন্ন। সবার মধ্যেই যেন একটা হাহাকার। কি যে হয়ে গেল! মনে হল সব ছেড়ে পালাতে হবে। আচ্ছন্নের মত ঢেউয়ের পার ধরে হাঁটতে লাগলাম সামনের দিকে। যেতেই থাকলাম........যেতেই থাকলাম। জানি না কতক্ষণ হেঁটেছি..........কতদূর গিয়েছি। অনেকক্ষণ পর পিছনে শুনলাম সোহেল ডাকছে। ফিরতে হবে। অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিল, না শোনায় হেঁটে এসেছিল নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, 'তোর কি মন খারাপ?' আমি কথা বলতে পারছিলাম না। নিজের ভেতরের শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে নিয়েছিল। কোনরকমে মাথা নেড়ে না বললাম। ও হাসানোর চেষ্টা করল, 'তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবি'। চোখ তুলে তাকালাম ওর দিকে। আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে এল চোখ। গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা পানি। আর তারপর পড়তেই থাকল। আমি কাঁদতে থাকলাম। সোহেল আমাকে থামাতে চাইল, কিন্তু কিছু বলতে পারল না। আমরা বাসে উঠলাম। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। তুই তো জানিস সোহেল ভাল গান গায়। ও একটার পর একটা গান গেয়ে গেল পুরো রাস্তা। আর আমি অঝোরে কেঁদে গেলাম। মুন এক হাতে জড়িয়ে ছিল আমাকে। আমার ভেতরটাকে ধুয়ে মুছে নিয়ে যেন বেরিয়ে আসছিল নোনা জল। বুক ভেঙে যাচ্ছিল। এত নি:স্ব এত অসহায় কখনো মনে হয়নি নিজেকে।

কিন্তু যখন ফিরে এলাম আমি ছিলাম নতুন এক মানুষ। একদম অন্যরকম। এ যেন পুনর্জন্ম! নিজেকে হারিয়ে ফেলার....আবার একটু একটু করে ফিরে পাবার.....মনের সব কষ্ট-গ্লানি ধুয়ে ফেলার........শুদ্ধ-পবিত্র-নতুন এক মানুষের জন্ম দেয়ার নাম হল সমুদ্র। তোর মাঝে নতুন এক মানুষকে দেখতে চাই আমি।

ভাল থাকিস................. আমার জন্য নিয়ে আসিস সমুদ্রের এক ঝলক নোনতা বাতাস আর বুক কাঁপানো ঢেউয়ের গর্জন.................................



***তিন বছর আগে আমরা বন্ধুরা গিয়েছিলাম কক্সবাজার। সমুদ্র আজও আমাকে ভীষণভাবে ডাকে। রোজ নয়, কিন্তু কোন কোন একলা, নিস্তব্ধ রাতে কিংবা বিষন্ন সোনালী বিকেলে.................
প্রিয় বান্ধবী যখন সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে উচ্ছসিত হয়ে অনুভূতির কথা জানাচ্ছিল মনে হচ্ছিল আমি বুঝি ফিরে গেছি সেই তিন বছর আগে। আরেকবার যেতে হবে সাগরের কাছে........খুব শীগগিরই......সাগর যে আমাকে ভীষণ ডাকে!***

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৫৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×