somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : সরকারপক্ষ যা বলে তা-ই হয় : খান সাইফুর

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে রিভিউ পিটিশন শুনানি করতে সময় প্রার্থনার বিষয়ে নিবেদনকালে সিনিয়র অ্যাডভোকেট খান সাইফুর রহমান বলেন, সরকার পক্ষ যা বলে তা-ই হয়। আমাদের কোনোকিছুই মঞ্জুর হয় না।
লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ আর্টিলারির পক্ষে দায়ের করা রিভিউ পিটিশন শুনানি করতে খান সাইফুর রহমান গতকাল ৩ সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেছিলেন। এতে সরকার পক্ষে এই মামলার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিরোধিতা করেন। তখন আদালত সময় না দিয়ে আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করলে খান সাইফুর রহমান ওই মন্তব্য করেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চে কারাগারের কনডেম সেলে আটক পাঁচ আসামির পক্ষে দায়ের করা রিভিউ পিটিশনের শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিল। শুরুতেই অ্যাডভোকেট খান সাইফুর রহমান দাঁড়িয়ে সময়ের আবেদন করেন। কর্নের (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের পক্ষে নিবেদন করেন অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান।
অ্যাডভোকেট খান সাইফুর রহমান বলেন, ১৯ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন ফাইল করেছি। ৪ দিন পর আজ শুনানির তালিকায় এসেছে। এটা বেশি দ্রুত হয়ে গেছে। এছাড়া শুনানির সময় নির্ধারণ করার কথা চেম্বার জজের। কিন্তু চেম্বার জজের আদালতের নির্দেশ ছাড়াই সরাসরি শুনানির তালিকায় চলে এসেছে। সেই বিধানটিও পালন করা হলো না। প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, একই রায় যেহেতু আরও রিভিউ ২৪ জানুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সে কারণে একসঙ্গেই তালিকাভুক্ত করা হলো। চেম্বার জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন তখন বলেন, এ বিষয়ে একটি রিভিউ পিটিশন ২৪ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য করার সময় বলা হয়েছিল অন্যগুলো ফুলকোর্টে একসঙ্গে আসবে। খান সাইফুর রহমান তখন আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, আমাদের অবস্থাটাও দেখতে হবে। এত বড় একটি জাজমেন্ট। এটা ভালোভাবে পাঠ করে খুঁটিনাটি বিষয় খুঁজে বের করতেও সময়ের প্রয়োজন। এ সময় একজন বিচারপতি বলেন, আপনার পিটিশন দেখেই মনে হচ্ছে পুরো জাজমেন্ট ভালো করে পড়া হয়েছে।
আবদুর রেজাক দাঁড়িয়ে একই কারণ দেখিয়ে সময় চান।
সরকার পক্ষে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিরোধিতা করে বলেন, তারা দীর্ঘদিন সময় পেয়েছেন। এই মামলা আপিল বিভাগে ৭ বছরের বেশি বিচারাধীন ছিল। এখনও জাজমেন্ট পাওয়ার পর এক মাস সময় পেয়েছেন।
আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিনের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি শুনানি শুরু করতে পারেন।
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন শুনানির শুরুতেই জানান, বিচার বিভাগীয় বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই রায় কার্যকরের প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। তিনি জানান, রিভিউ পিটিশন ফাইল করার বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরকে স্পেশাল ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তারপরও প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলো সমাপ্ত করা হয়ে গেছে। শুনানিতে তিনি মোট ১২টি পয়েন্ট আদালতে উপস্থাপন করেন। তিনি আদালতকে জানান, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে, ১৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িতরা দায়মুক্তি পাবেন। আদালত তখন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলায় বিচারপতি মোস্তাফা কামাল, বিচারপতি এটিএম আফজালসহ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের রায় পাঠ করার জন্য ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনকে নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, ইনডেমনিটির বিষয়ে এই রায়েই বলে দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আইন বাতিল করা হলেও কজ অব অ্যাকশন রয়ে গেছে। সরকার পরিবর্তনের কোনো বিচার কারও হয়নি। একজন বিচারপতি তখন বলেন, আপনার এই যুক্তি গ্রহণ করা গেল না।
আবদুল্লাহ আল মামুনের দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল বিদ্রোহ প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, আইনে আছে সফল অভ্যুত্থানের কোনো বিচার করা হবে না। আদালত তখন বলেন, রায় প্রদানের সময় আমরা ধরে নিয়েছি ১৫ আগস্টের ঘটনাটি বিদ্রোহের আওতায় পড়ে না। এটা সরাসরি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন তখন সেনা বিদ্রোহের সংজ্ঞা আদালতের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে একজন বিচারপতি ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জুডিশিয়ারির ফিলোসোফার হিসেবে যাকে মনে করা হয়েছে সেই বিচারপতি বলেছেন, রিভিউ হচ্ছে চাঁদে হাত দেয়া। সুতরাং সেভাবে পয়েন্ট ও আইনের যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।
শুনানি শেষে গণমাধ্যমে ব্রিফিংকালে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৯৭৫ সালের ইনডেমনিটি ছিল সরকার পরিবর্তনের জন্য। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য ইনডেমনিটি নয়। তিনি বলেন, আইনে আছে সফল সামরিক অভ্যুত্থান হলে বিচার হবে না। তিনি বলেন, এই দুটি গ্রাউন্ডেই পুরো মামলাটি বাতিলযোগ্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর লোক ছিলেন কি ছিলেন না, এটা বড় কথা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি হলেন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি উপস্থাপন করে বলেন, এই আদালতই বিডিআরের ঘটনায় বলে দিয়েছে, যে আইনের আওতায় ঘটনা ঘটবে সেই আইনে বিচার করতে হবে। এজন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার সেনা আইনে করা সম্ভব হলো না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কর্মরত সদস্যরা আরেক সশস্ত্র বাহিনীর কাউকে হত্যা করলে বিচার হবে সেনা আইনে। সাধারণ আইনে নয়। এই গ্রাউন্ডেও মামলাটি বাতিলযোগ্য। তিনি বলেন, সব শেষে আদালতকে নিবেদন করেছি কোনো গ্রাউন্ডই গ্রহণ করা না হলে আসামিরা দীর্ঘদিন কনডেমসেলে আটক থাকায় যেন শাস্তি কমিয়ে দেয়া হয়।

Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×