somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুম রহমান
শেষ পর্যন্ত লেখাটাই থাকে। টিভি, রেডিও, ওয়েবসাইট, চলচ্চিত্র, মঞ্চ, বিজ্ঞাপণ, ব্লগ - লেখার যতো মাধ্যম সবখানেই লিখতে হবে। পৃথিবী পাল্টে গেছে - এখন আমরা দুহাতের দশ আঙুলেই লিখি।

আমার দেখা কিছু সেরা ছবি - ৯ : এন আন্দালুসিয়ান ডগ [উন চিয়েন আন্দালিউও]

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুক্তি : ১৯২৯
দৈর্ঘ : ১৬ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : ফ্রান্স
ভাষা : নির্বাক, ফরাসী ক্যাপশন
প্রযোজনা ও সম্পাদনা : লুই বুনুয়েল
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : লুই বুনুয়েল, সালভাদর দালি
অভিনয় : লুই বুনুয়েল, সালভাদর দালি, সাইমনে মারেইল, পিয়েরে বাচেফ, জাউমে মিরাভিটলেস
চিত্রগ্রহণ : এলবার্ট দুয়েভারগার, জিম্মি বার্লিয়েট

কাহিনী সংক্ষেপ : প্রচলিত অর্থে এই ছবিতে কোন গল্প নেই। ‘একদা এক সময়’থেকে ‘আট বছর পরে’ বলে একলাফে ছবির কাহিনী বদলে যায়, কিন্তু সে অর্থে ঘটনা বা চরিত্রের কোন বিকাশই নেই। কোন ধারাবাহিকতাও রক্ষা করা হয়নি ছবির কাহিনী বা চরিত্রায়ণে। খুবই আলগাভাবে সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি দৃশ্য নিয়ে নির্মিত এই ছবিতে দালির স্বপ্নের জগতের পাশাপাশি ফ্রয়েডীয় বিশ্লেষণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ‘একদা এক সময়’ টাইটেল কার্ড দিয়ে ফিল্ম শুরু হওয়ার পর দেখা যায় মধ্য বয়স্ক এক লোক [বুনুয়েল স্বয়ং] বেলকনির দরজার কাছে তার রেজরটিকে ধার দিচ্ছেন এবং নিজের বুড়ো আঙুলে এর ধার পরীক্ষা করছেন। ধার দেয়া শেষে সে দরজা খোলে, মাথার উপরে মেঘে ঢাকা চাঁদ দেখা যায়। এরপর ক্লোজআপে এক তরুণীকে দেখা যায়। তরুণিটি শান্ত, øিগ্ধ। এরপর চাঁদটিকে মেঘমুক্ত দেখা যায় আর বুনুয়েলকে দেখি রেজার দিয়ে তরুনির চোখটি কাটছে। ‘আট বছর পর’ একজ তরুণকে দেখা যায় সাইকেল চালিয়ে শান্ত রাস্তা ধরে এগুতে। তার পরনে নানদের মতো পোশাক। তারপর তরুনিটিকে দেখি দামী আসবাবে সাজানো একটা ঘরে দ্রুত বই পড়ছে। সে সাইকেলের শব্দ পায়। সে দেখে তরুণটি পড়ে যাচ্ছে, সে কাছে যায়। এরপর দেখি তরুণিটি তরুণের পোশাক গোছাচ্ছে। তারপর দেখা দুজনে দুজেনর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের হাতের তালুতে গর্ত এবং সেখান দিয়ে পিঁপড়ে বেরুচ্ছে। এরপর থেকে শুরু হয় একের পর এক অসংলগ্ন ইমেজের খেলা। বগলের লোম থেকে সমুদ্র সৈকত, পিয়ানোর সাথে মৃত-পচা গাধার শরীর, বইয়ের পিস্তল হয়ে যাওয়া, রাস্তার সমুদ্র হয়ে যাওয়া এমনি সব ঘটনা ও দৃশ্যকল্পে ভরপুর মাত্র ষোল মিনিটের এই ছবিটি।


বিশেষত্ব : স্যুরিয়ালিস্ট মাস্টারপিস হিসাবে এটি আজও বিখ্যাত। স্প্যানিশ চিত্রকর সালভাদর দালি আর প্রতিশ্র“তিশীল স্প্যানিশ তরুণ নির্মাতা লুই বুনুয়েল ফ্রান্সে এসে মাত্র ১৬ মিনিটের এই ছবি বানিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। বুনুয়েল ও দালির প্রথম এই ছবি প্যারিসে মুক্তির পর টানা আট মাস হলে চলেছিলো। এখন পর্যন্ত আভা গার্দ আন্দোলনের সেরা সুরিয়ালিস্ট ছবি হিসাবে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে এটি আদৃত। বুনুয়েল ফ্রান্সে জ্যাঁ এপস্টেনের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করার সময় তার মাথায় এ ছবির ভাবনাটি আসে। বুনুয়েল একদিন রেঁস্তোরায় দালি এমন এক স্বপ্নের কথা বলে যেখানে মেঘ চাঁদকে টুকরো করছে যেন রেজর ব্লেড চোখকে টুকরো করছে। জবাবে দালিও পিঁপড়ার হেঁটে যাওয়া হাতের কথা বলে। দুজনেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে মনোজগোতিক এক ছবির কথা ভেবে। এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় মানুষের অবদমিত আবেগ নিয়ে একটি চিত্রনাট্য রচনা করার। এবং ফলাফল এই বৈপ্লবিক ছবি।


বিশেষ তথ্য :
১. প্রথম দৃশ্যে তরুণের যে চোখটি কাটা হয় তা আসলে একটি বাছুরের চোখ। তীব্র আলোর খেলায় বুনুয়েল গরুর লোমশ মুখকে মানুষের ত্বকের মতো দেখাতে সক্ষম হন।
২. বুনুয়েল শেষ দৃশ্যে দেখাতে চেয়েছিলেন একটি মৃত দেহকে পোকা-মাকড় খেয়ে শেষ করছে। বাজেট সংকটের কারণে চিত্রনাট্যের এই দৃশ্যটি বাদ দিতে হয়।
৩. ছবি মুক্তির দিন দালি ও বুনুয়েল পকেটে পাথর ভর্তি থলে রেখেছিলো আত্ম-রক্ষার জন্য। তাদের ভয় ছিলো স্যুরিয়ালিস্ট এই ছবি দেখে ফরাসী দর্শক ক্ষেেেপ যাবে। কিন্তু দর্শক যখন ছবিটি উপভোগ করতে থাকলো দালি ও বুনুয়েল ভীষণ মর্মাহত হলেন। দালির মতে, এতে করে তাদের বিকালটাই উত্তেজনাহীন হয়ে গেলো। আসলে প্রচলিত ধারার চলচ্চিত্রের সব রীতি আঙ্গিক ভেঙে দর্শককে আঘাত করার জন্যেই এ ছবিবানানো হয়েছিলো। কিন্তু বানানোর পর থেকে আজ পর্যন্ত তথাকথিত অদ্ভুত, আজগুবি, ছোট্ট এই ছবিকে সবাই সাদরেই গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, এ ছবির প্রতিটি দৃশ্যে ভিন্নতর ব্যাখ্যা সৃষ্টি হয়েছে।
৪. এই ছবিতে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা থেকে শুরু করে সমকালীন অনেক সাহিত্যিকের কাজের কথাই এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মৃত গাধার ভাবনাটি তারা নিয়েছেন য়ুয়ান রেমন জিমেঞ্জের জনপ্রিয় শিশুতোষ গ্রন্থ প্লেটেরো ই ইয়ো গ্রন্থ থেকে। অবশ্য উল্লেখ্য, দালি এবং বুনুয়েল দুজনেই ই বইটিকে ঘৃণা করতেন।
৫. তরুণির বই পড়া, যুবকের অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এই দৃশ্যটির ধারণা দালি পেয়েছেন তার প্রিয় চিত্রকর ভার্মেয়ারের চিত্র থেকে। দালি তার একাধিক ছবিতে এবং বিভিন্ন বক্তব্যে ভার্মেয়ারের প্রতি তার আসক্তির কথা স্বীকার করেছেন।
৬. ছবির অন্যতম দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র বাচেফ এবং সাইমনে আত্মহত্যা করেছেন। বাচেফ প্যারিসের এক হোটেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আর সাইমনে নিজের গায়ে প্রকাশ্যে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
৭. চলচ্চিত্র বোদ্ধা কেন ডান্সিগার দাবী করেছেন যে, উন চিয়েন আন্দালিউ হয়তো আজকের আধুনিক মিউজিক ভিডিও‘র জনক। রজার রবার্ট এই ছবিকে, কম বাজেটের ছবি তৈরির প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে দেখেছেন। মুভি ম্যাগাজিন প্রিমিয়াম এই ছবির প্রথম দৃশ্যটিকে বিশ্ব চলচ্চিত্রে ইতিহাসে ২৫টি তীব্র মুহূর্তের মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেছেন।
৮. ১৯৭৬ সালে ডেভিড বোয়ি তার ওয়ার্ল্ড ট্যুর কনসার্টে প্রতিটি শো’র আগে এই ছবি দেখাতেন। তার মতে, এই ছবি ঐ সন্ধ্যার জন্য আবহ তৈরি করে দিতো, আলাদা করে আর ওয়ার্ম আপ করা লাগতো না।
৯. তথাকথিতভাবে কোন ধারাবাহিকতা, কাহিনী বিন্যাস না-থাকলেও বিশ্ব সেরা বহু সমালোচকই এ ছবিকে জীবন, মুত্যু, আকাঙ্খা, ভালবাসার বিচ্ছিন্ন আবেগের চিত্রায়ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×