somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লার নিয়মে রুটি ভাগ

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাসিরউদ্দিন হোজ্জা নিজের মতো করেই পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাত দেখলেন পথের পাশেই একদল ছেলে জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে। নাসিরউদ্দিন হোজ্জা ছেলেদের দলটার আরো একটু কাছাকাছি আসতেই ছেলেরা তাকে হাত উচিঁয়ে ডাক দিলো। তাদের কাছে যাওয়ার অনুরোধ করলো। হোজ্জা সাহেব পন্ডিত ব্যক্তি হিসাবে সবার কাছেই পরিচিত। তাই ছেলেগুলোও হোজ্জা সাহেবের সহায়তা নিতে চাইলো।
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা ছেলেগুলোর কাছে গেলেন। ছেলেগুলোকে জিজ্ঞেস করলেন, কি সমস্যা তোমাদের? আমাকে ডাকলে কেন?
ছেলেরা তাদের রুটিগুলো দেখালো। বললো, তারা গ্রামের এক লোককে সবাই মিলে কাজে সাহায্য করেছে। লোকটা খুশি হয়ে তাদের কিছু পয়সা দিয়েছে। সেই পয়সা দিয়ে তারা দোকান থেকে রুটি কিনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রুটি ভাগকরা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছে তারা। লোকের চেয়ে রুটির পরিমাণ কম। লোক আট জন অথচ রুটি ৭টি। সবাইকে খুশি করে কিভাবে রুটি ভাগ করা যায় তা তারা বুঝতে পারছে না। এই কঠিন কাজটাই তারা নাসিরউদ্দিন হোজ্জাকে করতে অনুরোধ করলো।
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা বেশ খুশিই হলেন ছেলেদের কথা শুনে। বললেন, এ তো খুব সোজা কাজ। ৭টি রুটি ৮ জনে ভাগ করে খাবে। সমস্যা কোথায়?
ছেলেরা বললো, না! ভাগটা আপনিই করেন। তাহলে আর কারো কোন আপত্তি থাকবে না। আমরা সবাই শ্রম দিয়েছি, তাই এই ইনামও সবারই প্রাপ্য।
নাসিরউদ্দিন একটু চিন্তা করলেন! তারপর বললেন, আচ্ছা! ভাগ করার দু’টি নিয়ম প্রচলিত আছে। একটা আল্লার নিয়ম! অন্যটা মানুষের নিয়ম। তোমাদের রুটি আমি কি আল্লার নিয়মে ভাগ করবো? না মানুষের নিয়মে?
ছেলেরা উত্তর দিতে একটু ইতস্তত বোধ করলো! এ ওর দিকে একটু মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো! এর মধ্যে একজন বলে উঠলো আল্লার নিয়মে ভাগ করাই তো ভালো। তারপর সবাই একসাথে বললো- হ্যা হোজ্জা সাহেব আপনি আল্লার নিয়মেই রুটিগুলো ভাগ করেন!
হোজ্জা ৭টি রুটি নিজের হাতে নিয়ে নিলো। তারপর প্রথমে যে ছেলেটা আল্লার নিয়মে ভাগ করার পক্ষে কথা বলেছিলো তাকে আস্তো তিনটা রুটি দিয়ে দিলো। ছেলেটার চোখ তো ছানাবড়া। সে যদি তিনটা পায় অন্যরা কি পাবে!
তারপর হোজ্জা অন্য একটি ছেলেকে দুইটা রুটি দিলো। আর এক জনকে দিলো একটা রুটি। অবশিষ্ট একটি রুটির অর্ধেকটা দিয়ে দিলো আর একজনকে। বাকী অর্ধেক ছিড়ে ছিড়ে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম ছেলের হাতে ধরিয়ে দিলো। অষ্টম ছেলেটা পেলো খুবই ছোট একটি টুকরো।
ছেলেরা সবাই খুবই বিমর্ষ হয়ে গেলো। আরে! হোজ্জা সাহেব এটা কি করলেন? জ্ঞানী মানুষ বলে দেশে-বিদেশে নাসিরউদ্দিন হোজ্জার বেশ নামডাক আছে। কিন্তু তাই বলে আল্লার নিয়মে রুটি ভাগ করার কথা বলে এরকম করলো হোজ্জা! ছেলেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না।
তিনটা রুটি পাওয়া ছেলেটাই কথা শুরু করলো। সেই মূলত অঘোষিত নেতা এদের মধ্যে। বললো- হোজ্জা সাহেব! আপনি এ কেমন রুটি ভাগ করলেন। আমি তিনটা রুটি পেয়েও তো খুশি হতে পারি নি।
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা খুব নরম সুরে বললেন, তোমরাই তো সবাই মিলে বললে আল্লার নিয়মে ভাগ করতে??
সবাই উত্তর দিল, হ্যা! আমরা তো তাই বলেছি! কিন্তু এ কিরকম আল্লার নিয়মে রুটি ভাগ??
হোজ্জা আবারও খুব ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলেন, তোমাদের বয়স কম! কিন্তু তারপরেও তো আল্লার নিয়মের ভাগ-বাটোয়ারার মধ্যেই তোমরা বড় হচ্ছো। আচ্ছা বলতো এই গ্রামে বড়লোকের সংখ্যা কতজন?
সবাই বললো- ঐতো! চৌধুরীরাই তো শুধু বড়লোক এই গ্রামে!
নাসিরউদ্দিন আবার বললেন, হ্যা! এই গ্রামের মতো সারা দেশের অবস্থাও একই। বড়লোকের সংখ্যা হাতে গোনা, মধ্য বিত্তের সংখ্যা তার চেয়ে একটু বেশি, গরীবের সংখ্যা সেখানে অগণিত। আল্লার নিয়মে তাই গরীবরা খেতে পায়না আর বড়লোকরা খাবার নষ্ট করে। আমিও তোমাদের সেই আল্লার নিয়মেই ভাগ করে দিয়েছি। বড়লোক, মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত, আর বাকীসব গরীব ও নিস্ব। আল্লার করা শ্রেণীবিভাগই অনুসরণ করতে চেয়েছি।
ছেলেরা আবার বিরক্তির সুরেই জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা মানুষের নিয়মটা কি?
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা বললেন, মানুষের নিয়মটাই অনেক বেশি মানবিক নিয়ম! সবাই সমান ভাগ পাওয়াটাই মানুষের নিয়ম।
ছেলেদের মুখে এবার হাসির রেখা দেখা গেলো। বললো- আমাদের আল্লার নিয়মের দরকার নাই। আপনি মানুষের নিয়মেই আমাদের রুটি ভাগ করে দেন। বলেই সবাই নিজ নিজ হাতের রুটি আবার হোজ্জার হাতে তুলে দিলো।
হোজ্জা রুটিগুলো নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লো। নিজের কাঁধের চাদরখানা ঘাসের উপর বিছিনে নিলো। তারপর রুটিগুলো ছোট ছোট টুকরো করে যতদুর সম্ভব সমান আট ভাগে ভাগ করে চাঁদরের উপর রাখলো। আর বললো- যার যে ভাগ পছন্দ নিয়ে নাও! মানুষের নিয়মে ভাগে কোন সমস্যা নাই।
ছেলেরা তখন মহাখুশি!!
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা মিষ্টি সুরে আবার বললেন, তুমি না বললে, তিনটা রুটি পেয়েও তুমি খুশি হতে পারো নি! খুবই মানুষের মতো ভাবনা! আর ঐ বড়লোকগুলো দেখো! এত পেয়েছে! তারপরও আরো পেতে চায়! আরো পেতে চায়! আর গরীবরা না খেয়ে মরে! আল্লার নিয়মে ভাগ-বাটোয়ারা!!

(বেশ আগে পড়া নাসিরউদ্দিন হোজ্জার গল্প অবলম্বনে লেখা)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×