somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০২৫ সালে গ্লোবাল অর্থনৈতিক শক্তিগুলো কে কোথায় থাকবে?

২০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথা শুরু হয়েছিল আমেরিকান Forbes ম্যাগাজিনের একটা আগাম পূর্বাভাসকে কেন্দ্র করে। Forbes নেহায়েতই একটা ম্যাগাজিন নয়, ষ্টাটিসটিক্যাল তথ্যের এন্যালাইসিস থেকে প্রজেকশন করে বিভিন্ন রিপোর্ট সবসময়ই সে করে থাকে। ষ্টাটিসটিক্যাল প্রজেকশন মানে বিগত ১০-২০ বছর বা সম্ভব হলে এরও বেশি বছরের ডাটা ব্যবহার করে প্রথমে তা দিয়ে একটা গ্রাফ তৈরি করা; এরপর ঐ গ্রাফের গতি-প্রকৃতি, অভিমুখ নজর করে এর বর্ধিত দিক কী হতে পারে তা এঁকে ফেলা। এতে আগামীদিনের কোন ডাটা বা তথ্য ছাড়াই বরং উল্টা পথে ডাটার একটা আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। উল্টা পথে আন্দাজ করে পাওয়া বলে একে আমরা সরাসরি ডাটা না বলে প্রজেকটেড বা সম্ভাব্য ডাটা বলি। তো Forbes এর ঐ কাজ ছিল আগামী দিনে ৫০ বছর পর গ্লোবাল শক্তিগুলোর ক্ষমতা বিন্যাসের চিত্রটা কেমন হতে পারে - এর একটা প্রজেকটেড ধারণা তৈরি করা। সেটা সম্ভবত ২০০৫ সালের ঘটনা। ওর লব্দ ফলের সারকথা ছিল, আমেরিকা একক সুপার পাওয়ারের জায়গায় আর থাকছে না, আর নতুন অন্তর্ভুক্তি ঘটছে ব্রাজিল, চীন ও ভারতের - এর ফলে কেউই আর একক ক্ষমতার অধিকারী নয়, নতুন ক্ষমতার বিন্যাসে অন্তত আট-দশ জনের মধ্যে প্রত্যেকে অন্যতম একজন মাত্র।
প্রজেকটেড এই চিত্র দেখে ভয় পেয়ে করণীয় নির্ধারণে বসে যায় আমেরিকান নীতি নির্ধারকেরা। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে কি হতে যাচ্ছে তার একটা চিত্র পেতে আরও ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট করে বুঝবার জন্য এক বিশাল গবেষণার কাজ হাতে নেয়া হয়। কাজটা দেয়া হয় আমেরিকার সরকারী নীতিনির্ধারক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, National Intelligence Council (NIC) কে। নভেম্বর ২০০৮ সালে NIC তার কাজ শেষ করে রিপোর্ট প্রকাশ করে। সরকারী এই ডকুমেন্ট পাবলিকলি ওপেন করা হয়েছে, আগ্রহীরা PDF ফরম্যাটে তা নামিয়ে নিতে পারেন, Click This Link এই লিঙ্ক থেকে।

ঐ রিপোর্টের কিছু অবজারভেশন, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব কোথায় কিভাবে তা বুঝার জন্য যা গুরুত্ত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়ে সীমিত আকারে কিছু কথা এখানে বলব।
রিপোর্টে ছড়িয়ে থাকা কিছু অবজারভেশন এখানে তুলে এনেছি, যেমন লিখছে:
১. গ্লোবাল পরিসরে ২০২৫ সালের মধ্যে আমেরিকা গুরুত্ত্বপূর্ণ খেলোয়ারদের মধ্যে একজন বলে নিজেকে আবিস্কার করব, যদিও তখন ওদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীই থাকবে।
২. পুরা আন্তর্জাতিক ব্যবস্হাদি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু বিকশিত ও গড়ে উঠেছে তা একেবারে বিপ্লবায়িত কায়দায় বদলে যাবে। শুধু Brazil, Russia, India and China, (সংক্ষেপে BRIC) - এই নতুন খেলোয়ারেরা আন্তর্জাতিক উচু টেবিলে বসবার জন্য জায়গা পেয়ে যাবে তাইই নয়, তাঁদের এই হাজির হওয়ার মানে হবে এদের আরও বড় বড় ভাগীদার হয়ে উঠা এবং খেলায় নতুন নতুন নিয়মও চালু করে ফেলা।
৩. আগে দেখা যায়নি এমন এক ঘটনা হলো, পশ্চিম থেকে পূর্বে সম্পদের স্হানান্তর, আমরা এখন তা ঘটতে দেখছি; সামনে যতদূর দেখা যায় এমন আগামী দিনগুলোতেও এটা ঘটতেই থাকবে।
৪. আগে উদাহরণ নাই এমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সাথে ১.৫ বিলিয়ন অতিরিক্ত জনগোষ্ঠী - সম্পদের উপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে - বিশেষত, জ্বালানী, খাদ্য ও পানিতে - এটা যোগান ছাড়ানি এক ক্রমবর্ধমান চাহিদার অস্বস্তিকর দৃশ্যাবলী তৈরি করবে।
৪. সম্ভাব্য সংঘাতের হুমকি বাড়তে থাকবে, অংশত: রাজনৈতিক ঝড়ে অস্হিরতার কারণে আর কিছু বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের কারণ।
৫. বর্তমানের এই গ্লোবাল ঝোঁক যদি অব্যাহত থাকে তবে ২০২৫ সালের মধ্যে চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে হাজির নিবে এবং সামরিক দিক থেকে শীর্ষ স্হানে উঠে আসবে।

এই হলো সারকথায় বুঝবার জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ কিছু মূল চুম্বক অংশ। এখানে এখন এর প্রতিটি পয়েন্ট ধরে আলোচনায় যাব না। সাধারণ কিছু মন্তব্য আকারে কথা জুড়ব কেবল।

মুলকথাটা হলো, চীন দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ও শীর্ষ সামরিক শক্তি হিসাবে ধেয়ে উঠে আসছে এবং আমেরিকানরা নিজেদের সাম্রাজ্যের অধঃস্হানে যাচ্ছে - এই খবর থেকে আমেরিকান নীতি নির্ধারকেরা নড়েচড়ে বসেছে, এখন তাদের করণীয় কী হবে? - এটাই রিপোর্টের এই মূল বিষয় ও তাৎপর্য।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা একটা প্রজেকশন। ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়, ঘটতে যাচ্ছে বলে একটা পূর্বাভাস। অর্থাৎ পরিস্হিতিকে এভাবে রেখে দিলে তা প্রজেকটেড দিকে যাবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্হিতিতে যদি নতুন নতুন কিছু উপাদান একন থেকেই যোগ করে দেওয়া যায় - তাহলে কি হবে? তাহলে ফলাফল কিছু ঘুরে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ফলাফল ঘুরে যায় যাতে এরকম ফ্যাক্টর বা উপাদান কী কী নীতি নির্ধারকদের হাতে আছে?
পশ্চিম থেকে পূর্বে সম্পদের স্হানান্তর হয়ে যাচ্ছে এবং আরও যাবে - এটা পশ্চিমের জন্য খুবই বেদনাদায়ক কথা। কিন্তু কী করা যায় তাতে? পূবে সস্তা শ্রমের কারণে এশিয়া নতুন নতুন বিনিয়োগ, সস্তায় অন্যদেশে রপ্তানি বাজার এবং একই কারণে নিজেই আভ্যন্তরীণভাবে বাজার - এএক বিশাল চক্র ও ক্ষেত্র হিসাবে তা হাজির হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগের জন্য, পুঁজির বেঁচেবর্তে মুনাফা খেয়ে টিকে যাওয়ার জন্য তা খুবই খুশির খবর। কিন্তু এতো পুবে, এশিয়ায় ঘটছে, সবাই ছুটছে এশিয়ার দিকে। এখন আবার ওকে পশ্চিমে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব কারণ, একে পশ্চিমে কমপিটিটিভ বিনিয়োগের জায়গা দেখিয়ে দেওয়া পশ্চিমের অসাধ্য। পশ্চিমের সীমিত বাজারে বিনিয়োগের জায়গা খুজে না পাওয়া সত্ত্বেও সেখানে ফিরে যাবার চিন্তা পুঁজির জন্য আত্মহত্যামূলক; শুকিয়ে মরা বা নিজের মাংস নিজে চিবিয়ে খাওয়ার মত অবস্হা। কাজেই সম্পদের এই স্হানান্তর মেনে না নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। বরং মেনে না নিলে আরও বড় বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। কাজেই যা কিছু করার এশিয়ায় থেকেই করতে হবে, স্রোতের অভিমুখ উল্টা করতে কেন পদক্ষেপ নেয়ার অবস্হা আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের হাতের নাগালে নাই। তাহলে আর কি অপশন তাদের হাতে আছে যাতে প্রজেকশন বা ভাগ্য উল্টানো যায়?

পাঠক লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়, ঘটনার ঘনঘটা সব এশিয়াতে, মূলত চীন ও ভারতকে ঘিরে। কাজেই আমেরিকার নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত এবার সহজ অপশন, একটার সাথে বন্ধুত্ত্ব পাতিয়ে পাশে দাড়িয়ে অপরটার বিরুদ্ধে জোট বেধে লড়ো, ভারতের সাথে চীনের বিরুদ্ধে।

কাজেই, এই প্রজেকশন মত যেন দুনিয়া হাজির না হয় তা যতটা পারে কমানো, বিপদ কমানো - তাতে প্রজেকশন যতটুকু যা মিথ্যা হয়ে উঠে, ঘটানি যায় - এই নীতিতে আমেরিকান ফরেন পলিসি হলো, চীন ঠেকাও, ভারতের সাথে জোট বেধে চীন ঠেকাও - এই মন বাসনার কারণে আমাদের এশিয়া সরগরম করে উঠেছে।
আমেরিকার এই সমর্থন ভারত ভালভাবেই মজা করে উপভোগ করছে। ঘটনাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভারত যতটা তার নিজের সামর্থ থেকে উদ্ভুত তার চেয়ে বেশী তার আন্তর্জাতিক ক্ষমতা সে উপভোগ করতে শুরু করেছে। নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে সত্যিসত্যিই একটা অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে দাঁড়ানোর কাজে আমেরিকার এই আশীর্বাদকে সবকিছুতে যাঁতা দেবার হাতিয়ার ব্যবহারের মজা সে টের পেয়েছে। অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে তৎপরতায় যা কিছুই সে বাধা, সমস্যা হিসাবে সামনে দেখছে - তা আগ্রাসী বল প্রয়োগই একমাত্র সহজ সমাধান মনে করার এক কুটনৈতিক পথ সে বেছে নিয়েছে।
গ্লোবাল চোখে দেখলে, আমেরিকার কুটনৈতিক পথ দাঁড়িয়েছে, এশিয়ার সবল চীনের বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত দূর্বল ভারতকে ব্যবহার করা, এবং এর প্রভাবে ভারতের কুটনীতি সবকিছুকে বল প্রয়োগ, চাপ দিয়ে আদায় করিয়ে নেবার লাইন - এটা কি শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক লড়াই প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি সামরিক দিকেও গড়াতে পারে?
গ্লোবাল পূঁজির স্বার্থের দিক চেয়ে বললে, অর্থনৈতিক লড়াই প্রতিযোগিতার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকুক এটাই তার গ্লোবাল ইচ্ছা। কিন্তু পুঁজি নৈর্ব্যক্তিক বলে এটা গ্লোবাল পুঁজির নৈর্ব্যক্তিক স্বার্থ। বাস্তবের দুনিয়ায় এর ভাগ্য নির্ধারিত হবে দেশ, রাষ্ট্রের অথবা এদেরই কোন জোট, গ্রুপ এধরণের স্হানীয় স্বার্থগুলোর লড়াই, প্রতিযোগিতার নীট ফলাফলে দিয়ে। এতে স্হানীয় স্বার্থগুলোর হাতে পড়ে গ্লোবাল স্বার্থ কোথায় কতটুকু নিজের জায়গা পাচ্ছে ততটুকই হবে পুঁজির গ্লোবাল স্বার্থের বাস্তবায়ন। প্রকৃত দুনিয়ার স্বার্থ লড়াইয়েই এর ফয়সালা হবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এশিয়ান কুটনীতিতে আমেরিকার ওজন যাঁতা দেবার কাজে ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে ভারত আশেপাশের পড়শী থেকে শুরু করে সব প্রয়োজনে সে আগ্রাসী ভুমিকা নিচ্ছে, তুলনায় আমেরিকা এতদূর নয়; একে প্রতীকিভাবে বলা যায় ভারত রথ চালাচ্ছে আর আমেরিকা তাতে সওয়ারী। এশিয়ার এই প্রতীককে বুঝবার জন্য একটু অন্দরে যাব।
আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এক মজার দ্বৈততার। আমেরিকান রাষ্ট্র ও এর ক্ষমতা - এসবের দিক থেকে এই রাষ্ট্রের দরকার চীনের উপর একটা ডোমিনেশন, কর্তৃত্ত্ব ও প্রভাব, পারলে যেন ওকে চূর্ণ করে দেওয়া। কারণ দুনিয়ায় আমেরিকার যে প্রভাব আজ আছে চীনের উত্থান একে ক্ষয়িষ্ণু, এলোমেলো করে তুলছে; আবার, আমেরিকান বিনিয়োগ পুঁজির স্বার্থের দিক থেকে দেখলে চীনের ধ্বংস মানে তো তার মরণ। এটা চীনের ধ্বংস নয় যেন নিজেরই ধ্বংস। ফলে এই অদ্ভুত দ্বৈততাকে সাথে নিয়ে আমেরিকান রাষ্ট্রকে একটা ভারসাম্যের লাইন টেনেই চলতে হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে চীন সফরে এসে ওবামাকে বলতে হয়েছে, যার যার স্বার্থের ভিতরে থেকেই পরস্পরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই লক্ষ্য এই সফরের উদ্দেশ্য।
এই দৃশ্যের সাথে তুলনায়, ভারতের চীনের কাছে সেসব দায় নেই। এজন্য অরুনাচল প্রসঙ্গে বিতর্কিত ভূমিতে এডিবির ঋণ নিয়ে উন্নয়ন তৎপরতা জবরদস্তি চালাতে গিয়ে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করে হলেও সেই আগ্রাসী ভাবের পদক্ষেপ সে নেয়। যতদূর সর্বশেষ জানা যায় আমেরিকার এর মধ্যে নিজের বিপদ টের পেয়ে এই ইস্যুতে হাত সরিয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার কথা চীন ও ভারতকে জানাতে বাধ্য হয়েছে। এরকম আরও অনেক ইস্যু আছে যেগুলোতে ভারত ও আমেরিকান অবস্হান মিল অমিল নিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু এখানে যা গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো, আমেরিকার এশিয়ার শক্তিগুলোকে এভাবে ভাগ করে রেখে এদেরকে মোকাবিলার নীতি স্হানীয় স্বার্থগুলোর লড়াই, প্রতিযোগিতাকে কেবল অর্থনৈতিক জায়গায় রাখতে পারবে মনে হয় না, কারণ, চীনকে একঘরে করে বাকি সবাইকে আমেরিকা-ভারতের জোট স্বার্থের জড়ো করার ভারতীয় চেষ্টার মধ্যেই সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এবং তা বাড়ছে। সম্প্রতি বার্মাকে নিজেদের কক্ষপুটের জোটে টেনে নিয়ে বার্মাকে দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক হুমকির অবস্হা তৈরি করা, চাপ সৃষ্টি করা এরই সবচেয়ে কাছের উদাহরণ। বার্মার সামরিক সরকারও নিজেদের স্বীকৃতি, এবছরের নির্বাচন, অবরোধের ভিতরেও ভারতীয় অস্ত্রের চালান পাওয়া ইত্যাদির নানান কারণে ঐ কক্ষপুটে জোটে যাওয়াকে সুবিধা হিসাবে দেখেছে।
আমাদের আশেপাশেই ঘটে চলা এই ঘটনাগুলোকে, আগে আমরা দূরে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কোথায় কে বাঘ নাকি রাজা উজীর মারছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রদের মত সে গল্প আমরা অনেক শুনেছি; শোনার সেদিন শেষ হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস - এখন এগুলো আর দূরের গল্প নয় আমাদের নিজেদের রিয়েল লাইফের বিষয়, আমাদের রক্তমাংসের শরীরের ও স্বার্থের মতই জীবন্ত বিষয় - এদিকে নজর ও সচেতন করতেই, সক্রিয়তায় ভাববার বিষয় হিসাবে নিতে সবাইকে তাগিদ দিচ্ছি। পাঠক, আশা করি কথাগুলো সেভাবে নিবেন।

এবার সুনির্দিষ্ট করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি।
আগেই বলেছি আমেরিকাকে যাঁতা দেবার কাঠি হিসাবে ব্যবহারের মজার দিকটাই ভারতের কাছে লোভনীয় উপভোগের বিষয় হিসাবে হাজির হয়েছে, এর বিপদের দিক, বিনিময়ে কী সে হারাচ্ছে, ধুলায় লুটায়ে ফেলে নজর আন্দাজ করছে - মজার খেলা ফেলে সেদিকে দেখবার মত অবস্হায় সে নাই। অনেকে বলেন, নিজের আভ্যন্তরীণ সক্ষমতার জোড়ে নয় এক্সটারনাল ফ্যাক্টরের কারণে ভারতের যাঁতা দেবার ক্ষমতা হাতে পাওয়া জনিত ভারসাম্যহীনতা এটা। এজন্য আমরা এটাকে মুই কি হনুরে হিসাবে হাজির হতে দেখছি। রাষ্ট্র বৈশিষ্টে ইসরায়েল যেমন নিজেকে আমেরিকা ভাবে, ভারতেরও সেসব বৈশিষ্ট লক্ষণ আমার দেখতে পাচ্ছি।
সে যাই হোক, নিজেকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দাঁড় করানোর কাজটা লংটার্ম চিন্তা করে নিজের স্বার্থটাকে ভুআঞ্চলিক স্বার্থের ভিতরে রেখে সেখান থেকে সবার সাথে নিজেরও স্বার্থ হাসিল করার সুযোগ ভারতের ছিল। এক বিরাট সুযোগ সে পেয়েছিল। এতে তার বিকাশ একটা শক্ত ফুটিং, একটা দীর্ঘস্হায়ী ও শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড় করিয়ে নেবার সুযোগ ভারত হাতে পেয়েছিল। কিন্তু এই কষ্টকর তবে কংক্রিট পথের চেয়ে বরং, সবার উপর বল প্রয়োগের সম্ভাবনা জারি রেখে, ভয় ও চাপ সৃষ্টি করে কাজ হাসিল করার সর্টকাট পথটাই ভারতের পছন্দ হয়েছে।
আগে দেখা যেত বাংলাদেশের মত দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা, পছন্দসই বৈশিষ্টের একটা সরকারে বদলের ব্যাপারটা কেবল পশ্চিমাদের হাতে থাকে, ঘটে। এই প্রথম ভারত টের পেয়েছে এটা একটা খুবই সহজ ও মজার কাজ বটে। বাংলাদেশে ১/১১ এর সরকার কায়েমের অপতৎপরতায় একটা বড় ক্ষমতার ষ্টেক নিয়ে ভারত সেখানে জড়িত ছিল। বাংলাদেশের উপর ছড়ি ঘুড়ানোর এই নোংরা কাজ করতে পেরে ঘটনাবলীর ফল নিজের হাতে আসাতে ভারত নিজেকে অনেক বড় ক্ষমতাবান মনে করে নিশ্চয় অনেক আত্মবিশ্বাসও পেয়েছিল। ভারত ভেবে নিয়েছে এইটাই পথ। নিজেকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দাঁড় করাতে বাঁধা, সমস্যা অপসারণে, কেমন বাংলাদেশ সে চায়, বাংলাদেশ থেকে যা নিতে চায়, যেমন সাইজে রাখতে চায় - সেভাবে পেতে একটা ১/১১ এর সরকার কায়েম থেকে শুরু করে সর্বশেষ হাসিনার সফরের প্রাপ্তি - এগুলো এত সহজে করতে পেরেছে দেখে নিশ্চয় নিজের কুটনীতি পরিচালনার পথের উপর ভারতের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে; এই পথ বল প্রয়োগের সম্ভাবনা জারি রেখে, ভয় ও চাপ সৃষ্টি করে কাজ হাসিল করার, সর্টাকট বাজি মারার পথ। আমেরিকান চাঁড় কাঠি বা যাঁতা কাঠির যে এত গুণ তা দেখে ভারত নিশ্চয় যারপরনাই আহ্লাদিত।
এই অর্জন আসলেই তার অর্জন কিনা তা নিশ্চিত হবার সময় কিন্তু এখনও আসেনি। আমি সেদিকে যাব না। কেবল নজর দিতে বলব ইতোমধ্যেই একাজে বাংলাদেশের জনগণের যে ঘৃণা সে ইতোমধ্যেই কামিয়েছে, যেভাবে এটা বাড়ছে এবং এটা আরও বাড়বে বৈ কমবে না - শুধু এটা দেখে ভারতের অর্জন, না কী হয়েছে আগামী দিনে এটা কী রূপ নিবে সে আন্দাজ করতে চাইলে পাওয়া সম্ভব। সর্টকার্ট পথের পরিণতি তো এমনই হবার কথা - নয় কি? চোরের প্রতিদিন তো গৃহস্হের একদিন।

আমরা ছোট্ট বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশী চীন ও ভারতের এবং সহযোগী আমেরিকার এসব প্রস্তুতির হুঙ্কার, টানাটানি - সবই এখন আমাদের উপরে এসে পড়ছে, আমাদের রাজনীতির উপর দিয়ে এর প্রভাব, টেনশনের টের পেতে শুরু করেছি আমরা। যদিও সে প্রভাবের খবর আমাদের রাজনীতির যারা খবর রাখেন বলে মনে করি এদের কাছেও এসে পৌচেছে বলে মনে হয় না। বরং উল্টা, হাসিনার ভারত সফর নিয়ে এখনই যে তোলপাড় সমাজে চলছে একে ৫০ এর দশকের কায়দায় ভারত বিরোধিতা বলেই মনে করে অনেকেই আরামে নিদ্রা দিচ্ছে। এই ব্লগেও আমরা অনেককে দেখেছি, এটা "পাকিস্তানি মনের ভারত বিরোধিতা" বলেই নিজে বুঝেছে, অন্যকেও বুঝার জন্য তাগিদ রেখেছে।
আমাদের রাজনীতিকে আজ ২০১০ সালে এভাবে বুঝতে চাওয়া শুধু নাদানিই নয়, রীতিমত অপরাধও বটে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন একমাত্র এই গ্লোবাল নতুন গতিপ্রকৃতি, ঝোঁক মাথায় রেখেই বুঝা সম্ভব, এবং সে যোগ্যতা, পরিপক্কতা আমাদের অর্জন করতেই হবে।

একটা সর্বশেষ তথ্য যোগ করতে চাই।
পুরুষ ক্লিনটন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারতে এসেছিলেন। তিনি ভারতকে এক চাবিকাঠির খোঁজ পরামর্শ রেখে গেছেন, বলেছেন,"পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নই হলো চায়নাকে টেক্কা দেয়ার এবং একুশ শতককে বিপ্লবায়িত করে ভারতের গ্লোবাল শক্তি হিসাবে হাজির হওয়ার চাবিকাঠি"।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি, বিশেষ করে আমার আগের পোষ্টর মন্তব্যকারী এস এইচ খান, উনার মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এখানকার অনেক কথা সেখানেই বলেছি। উনার উস্কানিতে কথাগুলো নিয়ে ভাবতে বসে এই পোষ্টের উৎপত্তি ঘটেছে, তাই লিখে ফেলতে পারলাম।

[শেখ হাসিনার সফর প্রসঙ্গে আর এক পর্বের কথা ভুলি নাই। নিরাপত্তার দিক থেকে সে প্রসঙ্গে ফিরে আসব পরের পোষ্টে।]
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×