somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে সর্বজনাব বদরুদ্দীন উমরের কলাম

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের দৈনিক যুগান্তরেই সর্বজনাব বদরুদ্দীন উমরের উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে । তাঁর কলামের পয়েন্টগুলি মোটাদাগে নিম্নরুপঃ

১। বাংলাদেশের তুলনায় ভারত একটি শক্তিশালী দেশ, অনেক বেশি শক্তিশালী। অর্থাৎ এ দুই দেশের শক্তি এমনিতেই অসম। এই অসমতা যে উভয়ের সম্পর্ক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

২। ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ । সাম্রাজ্যবাদের নীতি হচ্ছে নিজেদের পুঁজির স্বার্থে তুলনায় অনুন্নত যে কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে নিজেদের জন্য ফায়দা ওঠানো। এই ফায়দা যেমন হতে পারে অন্য দেশে তাদের স্বার্থের সঙ্গে গাঁটছড়ায় বাঁধা সরকারের নানা অসম চুক্তির মাধ্যমে, তেমনি হতে পারে কিছুটা অবাধ্য সরকারের হাত মোচড় দিয়ে, আবার একেবারে অবাধ্য সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। আমেরিকা থেকে ভারত পর্যন্ত সব সাম্রাজ্যবাদী দেশই এটা করে থাকে অথবা করার চেষ্টা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি সাম্রাজ্যবাদী দেশ দুনিয়াজুড়ে এ কাজ করে।

৩। এ ধরনের কোন সাম্রাজ্যবাদী দেশের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের যে কোন চুক্তি ভালোবাসার শাদী মোবারক নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার ওপর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে সেটাই দেখা গেছে ।

৪। ১৫ জানুয়ারি ঢাকার এক দৈনিকে ‘শেখ হাসিনার ভারত সফর একশ’ ভাগ সফল’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ দেখা গেল। লেখক, আওয়ামী ঘরানার এক বিচক্ষণ বুদ্ধিজীবী। এই একশ’ ভাগ সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে যে মিথ্যা প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে সেই মিথ্যার ওপরই বাংলাদেশ প্রথম থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এই মিথ্যার সংস্কৃতির এমনই প্রবল প্রভাব যে, এ ধরনের মিথ্যা বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর সব অংশ এবং আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই এর বাইরে নেই।

৫। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ একেবারে কিছুই পায়নি, এই সফর ও চুক্তি ষোলআনা বা একশ’ ভাগ ব্যর্থ, এটা ঠিক নয়। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজকীয়’ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে, ইন্দিরা গান্ধী মেডেল দেয়া হয়েছে এবং ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে তাকে ভারত-বাংলাদেশ নতুন মৈত্রী সম্পর্কের স্থপতি আখ্যা দেয়া হয়েছে। এসব তো হল প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অর্জন। এছাড়া বাংলাদেশ নেপালের মধ্যে ট্রানজিটের ব্যবস্থা হয়েছে এবং ভুটানের সঙ্গেও এ ধরনের ব্যবস্থার কথা হয়েছে। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে তা পূরণের জন্য হাজারের ওপর পণ্যের মধ্যে মাত্র ৪৭টিকে শুল্কমুক্ত করার কথা হয়েছে। ভারতের ট্রানজিট ব্যবস্থা সড়ক ও রেলপথে যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য ভারত বাংলাদেশকে একশ’ কোটি ডলার ঋণ প্রদান করবে। এছাড়া বাংলাদেশের সব থেকে বড় ‘অর্জন’ হল, ভারতের দেয়া এক ঝুড়ি আশ্বাস। এই আশ্বাসের ঝুড়ি এখন বাংলাদেশের মাথায়।

৬। এই চুক্তির লেনদেন উভয় দেশের পারস্পরিক শক্তির মাপকাঠিতেই হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ যা পেয়েছে তার থেকে অনেক অনেক বেশি তাকে দিতে হয়েছে ভারতকে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার ও সেই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। ভারতকে এখন এই সুবিধা পুরোপুরি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় পণ্য অন্যান্য মালামাল এ দুই বন্দর ও আশুগঞ্জ থেকে আগরতলাসহ তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেয়া হবে। এতে অবশ্য বাংলাদেশ বাণিজ্যিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এজন্য যে, এতদিন ভারতীয় পণ্য পরিবহন ব্যয়ের কারণে তাদের ওই অঞ্চলে যাওয়ার অসুবিধা থাকায় সেখানে বাংলাদেশী অনেক পণ্যের বড় বাজার ছিল। এ বাজার এখন অনেক সংকুচিত হবে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি পরিস্থিতির কোন উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে না।

৭। বাংলাদেশের তেল-গ্যাসসম্পদ রক্ষা এবং অন্যান্য কারণে ভারত বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করার বিষয়েও চুক্তিতে কোন কিছুই করা হয়নি।

৮। ট্রানজিট সুবিধা লাভ করে ভারত বিভিন্ন ধরনের পণ্য তাদের দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই সঙ্গে তারা সামরিক সরঞ্জামও উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যাবে কিনা সে বিষয়ে কোন নিষেধের কথা চুক্তিতে নেই। কাজেই ভারত এখন সামরিক সরঞ্জাম অবাধে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সেই অঞ্চলে নিয়ে যাবে এবং সেখানকার জনগণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।

৯। দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী বিনিময়ের চুক্তিও হয়েছে। এই চুক্তির আগেও বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকজন নেতাকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে গোপনে হস্তান্তর করেছে। এখন খোলাখুলিভাবেই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ এই খেদমত ভারতের জন্য করতে পারবে।

১০। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সব থেকে বড় কেলেংকারি হল, ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সম্মতি প্রদান করা এবং এর দ্বারা বাংলাদেশের কোন ক্ষতি ভারত করবে না এই আশ্বাস শিরোধার্য করে একে দুই দেশের মধ্যে বন্ধ দরজা খোলার ব্যাপার হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থা করবেন বলে সফরের আগে যা বলেছিলেন তার কিছুই হয়নি।

গালাগালি বা ট্যাগিং নয় , আলোচনা চলুক ।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×