somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেহওয়াগ অযৌক্তিক কিছু বলেননি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় ১১ বৎসর আগে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সময়টাতে বাংলাদেশকে যখন টেস্ট স্ট্যাটাস দেবার দাবি করা হচ্ছিল বা এটা নিয়ে আলোচনা চলছিল তখন বাংলাদেশ দলের কোচ গর্ডন গ্রীনিজ এক মন্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে টেস্ট স্যাটাস দেবার মতো উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। এ কথাতে তখনকার বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতোটাই তেতে ওঠেছিলেন যে তিনি জনসমক্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, গ্রীনিজ দেশে ফেরামাত্র তাঁকে শোকজ করা হবে। গ্রীনিজ হয়তো তাঁর হুমকিতে এতোটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, তিনি আর এ বঙ্গ-বদ্বীপে আসার সাহস পাননি। অথচ ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই গ্রীনিজকেই আমাদের বোর্ড এবং দেশের হর্তাকর্তারা জাতীয় হিরোতে পরিনত করেছিলেন। তাঁকে সন্মানসূচক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। এমন পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব নোবেল জয়ের পর অমর্ত্য সেনকেও প্রদান করা হয়েছিল। আমি নিশ্চিত তাঁদের দু'জনের কেউ কোনদিন এ পাসপোর্ট ব্যবহার করেননি বা করবেন না। অবশ্য এভাবে যেচে নিজের বউ বর্গা দেওয়ার আমাদের এ প্রথাটা প্রাগৈতিহাসিক। যাহোক, কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস বিষয়ে গ্রীনিজের মন্তব্য নিয়ে। তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এক সময়ের হিরো বলে বিবেচিত গ্রীনিজকে ভৎসনার হিরিক পড়ে যায়। আমাদের সংবাদপত্রগুলোতে তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক লেখার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গ্রীনিজকে অপমানজনকভাবে বিদায়ের মাধ্যমে এ অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়।

টেস্ট স্ট্যাটাসের প্রায় এক যুগ হতে চলল। এ এক যুগে বাংলাদেশের টেস্ট পারফর্মেন্স দেখলে কেউ বলবেনা যে গ্রীনিজ ভুল কিছু বলেছিলেন। বাংলাদেশের পারফর্মেন্স এর কারণে অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকার মতো দেশগুলো আমাদের সাথে টেস্ট খেলতে রীতিমত অনীহা প্রকাশ করে এবং গ্রীনিজের ধারাবহিকতায় রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন এবং ম্যাথু হেইডেনরাও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসের যৌক্তিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তবে এগুলো নিয়ে আমাদের হর্তকর্তা বা সংবাদপত্রগুলো তেমন হৈচৈ করেনি। এর কারণ সম্ভবতো পন্টিং কিংবা হেইডেন কেউই গ্রীনিজের মতো বাংলাদেশের চাকরী করেন না। চাকরী করলে এ অপ্রিয় সত্য বলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধেও হয়তো সংবাদপত্রগুলোতে ব্যাঙ্গাত্বক কলামের হিড়িক পড়ে যেত এবং অবশেষে গ্রীনিজের মতোই অপমানজনকভাবে বিদায় করা হত।

গ্রীনিজ, পন্টিং, ওয়ার্ন এবং হেইডেনের ধারাবাহিকতায় গতকালকে ভারতের মারকুটে ব্যাটসম্যান বীরেন্দর সেহওয়াগ বাংলাদেশের টেস্ট স্যাটাস নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের অতীত পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে তাঁর বক্তব্য অযৌক্তিক নয়। তবে একজন ভারতীয়ের কাছ থেকে এমন মন্তব্য হয়তো আশা করা হয়নি। কারণ ধারণা করা হয় যে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার অতিরিক্ত লবিংয়ের কারণেই অনেকটা আগেভাগে বাংলাদেশ এ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায়, ভারতের মতো একটি শুভাকাংখী দলের একজন প্রভাবশালী খেলোয়ার কেন এ ধরণের মন্তব্য করলেন তা বিশদভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে।

সেহওয়াগের এ মন্তব্যের অনেক ব্যাখা হয়তো অনেক দিবেন। তবে আমাদের সংবাদপত্রগুলো সেই পুরাতন পথেই হাটবে। তাঁরা এটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, সেহওয়াগকে তামাশার পাত্র বানাবে। তবে সত্য কথা হচ্ছে এই যে, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলংকার মতো দলকে চটানোর মতো কোন সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের পারফর্মেন্স এমন নয় যে, আমরা তাঁদের তুরি মেরে ফেলে দিব। ভাল না লাগলেও আমাদেরকে ভারতীয়দের সাথে থাকতে হবে। আমরা গ্রীনিজ, পন্টিং, হেইডেন এর বিরুদ্ধে যেমন আক্রমনাত্বক ছিলাম আমার মনে হয়না ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সে রকম হওয়ার কোন সুযোগ আমাদের আছে। কারণ নিঃসন্দেহে ভারত এখন আইসিসির সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য।
আর এটাতো সত্যি যে, অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকা কোন অবস্থায়ই আমাদের শুভাকাংখী নয়। তাঁরা কখনই ক্রীকেটে অশ্বেতাঙ্গদের মেনে নেয়নি, নেবেও না। মনে কষ্ট নিয়ে হলেও আমাদেরকে আমাদের বলয়ে থাকতে হবে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সেহওয়াগের মন্তব্যটাকে ইতিবাচকভাবে নেয়া উচিত। তিনি হয়তো আমাদের পারফর্মেন্সের উন্নতির উদ্দেশ্যেই এটা বলেছেন। তাই উচিত হবে এটা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করা এবং পারলে পরফর্মেন্সের মাধ্যমে তাঁর জবাব দেয়া।

অভিজ্ঞতার আলোকে এটা বলা যায় পারফর্মেন্সের উন্নতি বর্তমান ফর্মেটে সম্ভব নয়। আমরা যোগ্যতার ক্রম ধাপ না পেরিয়ে একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছি। আমাদের উচিত ছিল প্রতিবেশির দেশের প্রথম শ্রেণীর দলগুলোর সাথে নিয়মিত খেলা মাধ্যমে একটা ধাপ অর্জন করা। সেটা আমরা করিনি এবং এটা নিশ্চিত যে পর্যন্ত আমরা সে ধাপটা রপ্ত না করতে পারি সে পর্যন্ত আমাদের টেস্ট পারফর্মেন্সের কোন উন্নতি হবেনা। আমাদের নিয়ে এই পরিহাস, তামাশা চলতেই থাকবে। তাই উচিত হবে আপাতত টেস্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে টেস্ট খেলুরো দেশগুলোর প্রথম শ্রেণীর দলগুলোর সাথে নিয়মিত তিন, চারদিনের খেলা খেলে নিজেদের সর্বোচ্চ মানের জন্য প্রস্তুত করা। শুনতে ভাল না লাগলেও এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। যতোদিন পর্যন্ত আমরা তা অনুধাবন করতে না পারব অন্যরা আমাদের নিয়ে তামাশা করবেই।
২০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×