গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান ভূমিদস্যুদের প্রতিরোধে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজের সবাই জেগে উঠলে এই গুটিকয়েক দস্যু পালানোরও পথ পাবে না।
‘ঢাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা নাগরিক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব খোলামেলা কথা বলি। এই বয়সে এসে নিজেকে বদলানো সম্ভব না।’ তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপর সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন করা না যায়, সে জন্য একটি বর্বর আইন করা হয়। খুনি আর দস্যুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এর পর থেকেই দেশে লুটপাট, খুন, হত্যা আর সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে দেশে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়, সে দেশ তো অন্ধকারেই থাকবে। কিন্তু আজ খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের সময় এসেছে। এখন থেকে দুর্নীতিবাজ, খুনিদেরও বিচার হবে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে দস্যুরাও আর পালানোর সুযোগ পাবে না।’
পূর্ত প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন শিল্পের সবাই ভূমিদস্যু নয়। আমি একাধিকবার বলেছি, আমি তাদের শিল্পী বলতে চাই। এখানে দস্যুতা থাকতে পারে না। এখানে দস্যু আছে মাত্র কয়েকজন। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণ তাদের ভূমিদস্যু বলেনি। তারাই তাদের দুর্বৃত্তপনার মধ্য দিয়ে অর্জিত গণমাধ্যমে পরস্পর পরস্পরকে ভূমিদস্যু লিখেছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে শুধু কথা বললে চলবে না। তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, কীভাবে তারা টাকা পানিতে ঢালার বিজ্ঞাপন দেওয়ার সাহস পায়? কেন মানুষ তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে? কেন মানুষ কালো টাকার বদৌলতে মালিক বনে যাওয়া তাদের টয়লেট পেপার কিংবা টিস্যু পেপার পড়ে। কেন মানুষ ভূমিদস্যুদের পত্রিকা বর্জন করে না? কিছু টাকার লোভে কেন ওই ভূমিদস্যুদের পত্রিকায় কেউ কেউ নিবন্ধ লেখেন?
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ধানমন্ডি এলাকায় শাহনাজ নূর নামে একজন এক বিঘা জমির মালিক। কিন্তু একই নাম দিয়ে চারজন ওই জমির মালিকানা দাবি করছে। ডাকলে তারা কেউ আসে না। তারা আদালতে যায়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে আদালত-আইনজীবী পর্যন্ত আজ দুর্নীতির রাহুগ্রাসে।
গৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক নিয়ে সভা-সেমিনার করলেই চলবে না। নাগরিকদের জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তাহলে অন্যায়কারীরা কোনো দিন জয়ী হতে পারবে না। মানুষ জেগে উঠলে অসাধ্য সাধন হবে। জনগণ ঘুরে দাঁড়ালে তারা পালাবার পথ পাবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা আবাসন সংকটের সমাধানের কথা বলেছি। রাজধানী ঢাকা থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে হবে। ঢাকার চারপাশে চারটি স্যাটেলাইট শহর করা হবে। আমি বলেছি, আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। রিহ্যাব ও বিএলডিএর সঙ্গে বৈঠকে আমি বলেছি, সংগঠন থেকে দস্যুদের বহিষ্কার করতে হবে। আপনারা ওদের বহিষ্কার করে আসুন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভেজালুমক্ত জমি নিয়ে আপনারা আসুন। আমরা জমি দেব। আপনারা খাঁটি ইট, খাঁটি রড, খাঁটি বালু—এগুলো নিয়ে আসুন। ভেজাল নিয়ে আসবেন না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে মাছ আর ফল না, রড আর ইটের ভেজালও ধরা হবে।
আবুদল মান্নান খান বলেন, ‘জনগণকে বলছি, এই দস্যুদের প্রতিরোধ করুন। ওদের দু-একটি সংবাদমাধ্যম আছে। সেসব টয়লেট পেপারও বর্জন করুন। আর সাংবাদিকদেরও উচিত এদের মুখোশ উন্মোচন করা।’
প্রতিমন্ত্রী আবাসন শিল্পের সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে কাজ করুন। মানুষের সম্পদ নিয়ে হঠকারিতা করবেন না। প্রতারণামূলক ব্যবসা করবেন না। শৈল্পিক কাজে অংশ নিন। মর্যাদা নিয়ে সমাজে বাস করতে পারবেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নদী-নালা-খাল-বিল দখলমুক্ত করবই। দু-একজন দস্যুর কাছে আমি আত্মসমর্পণ করব না। খাল-বিল-জলাশয় দখল করে কোনো প্রকল্প হতে দেব না।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা নাগরিকের সভাপতি আবদুল মতিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘হাইতির ভূমিকম্প আমরা দেখলাম। বড় বিপদ হওয়ার আগেই সব ভবনে অগ্নিনির্বাপক, জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থা করা হোক। ভবনগুলোর সুরক্ষা করতে না পারলে ভেঙে ফেলা হোক। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা ঠিক না।’
ইকবাল হাবিব বলেন, অবৈধ হাউজিং প্রকল্পের অনুমতি বাতিল করতে হবে। মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। তারা যেসব জমি দখল করেছে, সেগুলো উদ্ধার করা দরকার।