somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য: সাইক্লপ্স এবং আমাকে ঘিরে তেরোশো হলুদ প্রজাপতি ধীরে ধীরে উড়ছে

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
আমি আর প্রেত শুয়ে থাকি বিছানার 'পর,
চুরুটে আগুন ধরাই আর তাকাই পরস্পর।
সে পুনরায় ফিরে যায় তার স্বপ্নের ঘোরে। একটা সিগারেট ধরায়, আলগোছে টেনে নেয় কল্পনার হাত। এইখানে কল্পনা কোনো মানবী নয়, শুধুই কল্পনা।
তার স্বপ্ন পুরনের কথা ছিলো বৃষ্টির দিনে। সে হাওয়ার ঠোঁটে একটা চুমো খেলো। হাওয়া বললো, বিদায়।
এই সুর গ্রীষ্মের উত্তাপ ধরে ছিলো গত রৌদ্রে। রৌদ্র ছিলো বর্ষণপক্ষ, ডানার পূর্বশর্ত। সেই শর্তে রথ যে নিয়ে এলো, তার ত্বকের রঙ হালকা নীল, শিশ্নস্থানে মৃণাল, টকটকে লাল...
রথের চাকায় মরুরঙ ঝালর। সে রথে আরোহণ করলো। আর রথ উড়ে চললো। মাঝপথে সারথি পড়ে গেলো ভূমিমধ্যে। এখন সেইই সারথি। তারপর ঘোরভাঙা চোখে দেখলো আকাশের মৃত্যু। কী নীল!

০২.
আমি তার কাছে গিয়ে গভীর কণ্ঠে বললাম, আয় তোকে সমস্ত শূন্য করে দিই।
লবণ বললো, ভালোবাসা হলো শূন্যতাবোধ।
কে বললো তোকে?
প্লাতুন।
অ! মহামান্য প্লেটো বলেছেন এই কথা? কথা সত্যি। আমার মনে হয়ে বুদ্ধিবৃত্তি কামস্পৃহাকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করেছে। তাই এটা অভ্যাসগত, প্রবৃত্তি নয়। প্রবৃত্তি হলো কাম।
আর মমতা অন্যজিনিশ-- নির্ভরতা আর অধিকারবোধের প্রকাশ।
প্রাথমিক যুগে ভালোবাসা ব্যাপারটা ছিলো না। এমনকি মমতাও। সবই মানুষ সভ্যতার সাথে অর্জন করেছে।

০৩.
শিল্প হলো চোখের বিপরীতে দেখা। মানে চোখের উল্টো দিকে। সমুখের দৃশ্যাবলি কিছু নয়। শিল্পের কথা আজ থাক। অন্যদিন বলবো। আজ একটা গানের কথা বলি।
স্বাতী! একটা গানের বেদনা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সেই কবে গানটা বাজতো আমাদের ঘরে সন্ধ্যাবেলা! ইদানীং শুনছি খুব। কেনো যে শুনছি? হৃদয় আমার সুন্দর তব পায় বকুলের মতো ঝরিয়া মরিতে চায়... গানটা সাগরিকা সিনেমায় ছিলো। আল্পনা ব্যানার্জির গাওয়া।

০৪.
কোনো আগুন ছিলো না। ছিলো না আগুনের ধ্যান। শ্যামল রূপসীরা পাশ কেটে যাচ্ছিলো অরণ্য ও আরণ্যক সমাধি। দ্রিম দ্রিম শব্দে বজ্র আর বিজলি বেজে যাচ্ছিলো শূন্যে। আমি আঙুর আর নাশপাতির খাঁচা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। কে যেনো আমার কাঁধে হাত রাখলো। তার রূপ বর্ণনাতীত। আমি বললাম, তুই কে?
কোনো উত্তর নাই। সুতরাং আমি তাকে স্বীকার করলাম না। আমি মনে মনে বললাম, ঝড়।
ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলো আঙুরের বন, নাশপাতির বন। কেবল আমার কাছে কিছুটা সংরক্ষিত আছে। এইবার সে বললো, আমি সময়।
আর আমি তাকে স্বীকার করলাম। এবং আঙুর আর নাশপাতির বীজ তার হাতে দিলাম।
সে আমাকে নতজানু হয়ে সম্মান জানালো। আর বয়ে চলে গেলো।

০৫.
আমি কেবল দরজা জানলা এইসব বানাই। ঘরটর এইসব আপনারা বানাবেন। ঘরের ভিতর একফালি শীত অথবা গ্রীষ্ম বুনে দেবেন। ফলন ভালো হলে আপনারাই খাবেন, পান করবেন, হাসাহাসি করবেন, খুনসুটি করবেন।
সাইক্লপ্স যদি আসে তবে কী করবেন তা আমি বলে দেবো না। পসিডনের কাছে যেতে পারেন। তাতে কোনো লাভ নেই।
একার্থে ঈশ্বর আর সাইক্লপ্সের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

০৬.
কেউ যদি প্রতিশ্রুতি করে-- পুনর্ববার আমাকে জীবন দেবে, তবে একবার আমি মরে যাবো। পরের জন্মে গণিতের ছাত্র হবো। তিনটে টিয়্যুশনি করবো। একটা প্রেম করবো।
আর কবিতা শব্দটির সাথে পরিচিত হবো না।

০৭.
স্বপ্নের থাকে দুইটি ডানা। ঝলমলে। ঝিরিঝিরি। রুমঝুম। যদি ডানাদুটি চাকায় পরিণত হয় তবে তা আর স্বপ্ন থাকে না-- পরিকল্পনা হয়ে যায়। স্বপ্নের সাথে ভাবের সম্পর্ক। বস্তুসাপেক্ষ ভাব। আর পরিকল্পনার সাথে থাকে বিষয়ের সম্পর্ক।
মুহূর্তের একটি স্বপ্নের কথা যদি বলি-- আমাকে ঘিরে তেরোশো হলুদ প্রজাপতি উড়ছে...
অভিমান বললো, তারপর?
জনহীন পথ ধরে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে একটা সোনালুগাছের নিচে দাঁড়াতেই একহাজারটা প্রজাপতি একহাজার সোনালুফুল হয়ে ঝরে পড়লো আমার চুলের বনে, কাঁধে, বুকপকেটে। আমাকে ঘিরে বিস্তারিত হলো পৃথিবীর রূপ।
অভিমান বললো, সুন্দর।
একহাজারটা হলুদ প্রজাপতি ঝলমলে, ঝিরিঝিরি, রুমঝুম-ঝুমঝুম...
সাথে চকচকে রোদ, নিকেলমাখা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:১৯
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×