somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুপম হাসান
শৈশব আর কৈশোর কেটেছে রংপুরে; আইএ পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল. ও পিএইচডি. ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছি।

প্রবন্ধ : ৫ । বাংলাদেশের গল্পের বাঁক পরিবর্তন

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস বলতে গেলে বিগত অর্ধ শতকের। এ সময়কালে বাংলাদেশের সাহিত্যের অর্জন কম নয়। বিশেষত কবিতায় শামসুর রাহমান আল মাহমুদ-এর মতো লেখকের জন্ম হয়েছে। বলা হয়ে থাকে কবি জীবনানন্দ দাশের পরে অনিবার্য পাঠ্য কবি শামসুর রাহমান। একইভাবে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অর্জনও চোখে পড়ার মতো। প্রয়াত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা জীবিত হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হকের মতো লেখকগণ এখনো সক্রিয় রয়েছেন। সেলিম আল দীন তো বাংলা নাটকের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তিনি একক চর্চায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলা নাটকের জন্ম ইউরোপের অনুকরণে হলেও বাঙালি জাতির নানা প্রাচীন রচনায় নাট্যগুণ বর্তমান ছিল। সেই অনাবিষ্কৃত দিক উন্মোচন করে বাংলাদেশের নাটকে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ছোটগল্পেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে

স্বাধীনতা উত্তরকাল পর্বে, বিশেষত এ সময় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হকের মতো দুজন কথাশিল্পী বাংলাদেশের গল্পের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। উল্লেখযোগ্য এই পরিবর্তনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন সদ্য প্রয়াত শহীদুল জহির। তিনি খুব বেশি লিখে যেতে পারেন নি, তথাপি অল্প কিছু গল্প ও গোটা চারেক উপন্যাস রচনা করেই বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের নব দিগন্তের উজ্জ্বল আলোয় ভরে দিয়েছেন। কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, এই কথাশিল্পী সম্পর্কে এক মন্তব্যে জানিয়েছেন, তিনি 'বিশিষ্ট লেখক'। এছাড়াও তিনি মনে করেন 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' উপন্যাস রচনার মাধ্যমে শহীদুল জহির 'কেল্লাফতে' করেছেন। এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক মূলত বোঝাতে চান-- শহীদুল জহিরের লেখনী শক্তির সবটুকু প্রকাশ পেয়েছে 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' উপন্যাসে। একজন লেখক যে সেরা লেখাটির জন্য অবিরাম লিখে যান, শহীদুল জহিররের 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' তাঁর সেরা রচনা। এ হাসান আজিজুল হক প্রসঙ্গত আরো যুক্ত করে বলেন, তাঁর পরের উপন্যাস 'মুখের দিকে দেখি'তে ম্যানারিজম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরো লিখতেন, তবে তা আদৌ আবর্তন পুনরাবর্তনের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসতে পারত কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন হাসান আজিজুল হক।

সে যাই হোক না কেন, একথা সত্য সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় গল্পের যে ধারা গড়ে উঠেছিল, তার উৎকৃষ্ট রূপ ধরা পড়েছে শহীদুল জহিরের গল্পে। তাঁর 'ইন্দুর বিলাই খেলা' কিংবা 'ডুমুর খেকো মানুষ', 'ডলু নদীর হাওয়া' প্রভৃতি গল্প সেই উৎকৃষ্টতার স্বাক্ষর বহন করে আছে। গল্পের মধ্যে অসংখ্য গল্প থাকা কিংবা ছোট্ট একটি লাইনের ঘটনাও যে গল্প হয়ে উঠতে পারে, তা শহীদুল জহিরের লেখনীতে প্রতীয়মান। একই ধারায় বাংলাদেশের সাহিত্যে আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ের গল্পকার হচ্ছেন-- ইমতিয়ার শামীম, মামুন হুসাইন, সাহাদুজ্জামান, হুমায়ুন মালিক প্রমুখ। বাংলাদেশের এই গল্পের ধারা এঁদের হাতে ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। বিশেষত, তাঁর গল্প বলার ধরনও তরুণ প্রজন্মকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইতোমধ্যে শূন্য দশকের তরুণ গল্পকারদের অনেকেই শহীদুল জহিরের গল্প বয়ন কৌশল কিংবা ভাষাগত কাঠামকেও আত্মস্থ করে নিজস্ব পথ তৈরি শুরু করেছেন।

সাহিত্য কোন বদ্ধ জলাশয় নয়; ক্রমাগত সাহিত্যের গঠনকৌশল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। হয়তো ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন ফর্ম আসবে বাংলা গল্পে, এমন প্রত্যশা এখন তরুণ প্রজন্মের গল্পকারদের নিকট করা যেতেই পারে ...
আমাদের তরুণ গল্পকারগণ হয়তো ভবিষ্যতে নির্মাণ করবেন বাংলা গল্পের আরো অভিনব কিংবা চমকপ্রদ বয়নকৌশল...

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×