somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

এগিয়ে আসুক ভারত, সুদৃঢ় হোক বাংলাদেশ-ভারত সৌহার্দ্য

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এগিয়ে আসুক ভারত, সুদৃঢ় হোক বাংলাদেশ-ভারত সৌহার্দ্য
ফকির ইলিয়াস
=======================================
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল প্রতীক্ষিত ভারত সফর সম্পন্ন হয়েছে। এ সফরকে ঘিরে নানা জল্পনা ছিল। কথা ছিল পক্ষে-বিপক্ষে। শেখ হাসিনা ভারত সফরের প্রাক্কালে বলে গিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের, বাংলাভূমির সব চাওয়া, ন্যায্য পাওনা তুলে ধরবেন। তার সফরের সময় তা তিনি তুলে ধরেছেনও। যা প্রধানত আশা জাগানিয়া যাত্রার সূত্রপাত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময়ে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় অনেক স্বার্থ নিয়ে। একটা কথা আমরা সবাই জানি ও মানি, স্বার্থ রক্ষা এক পক্ষের হয় না। স্বার্থ রক্ষা করতে হয় দুই পক্ষের। আর এজন্য উদার হতে হয় সেই পক্ষকে যারা বেশি সচ্ছল, যারা বেশি শক্তিশালী।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিবেশী সম্পর্কটা খুবই ঘনিষ্ঠ। কারণ তিন দিকেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। শক্তি, সামর্থ্যের দিক দিয়ে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে। এটি বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানেন এবং মানেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সার্বিক সহযোগিতা করেছিল। এই সত্যের দ্যুতিও বাঙালি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত ছড়াবে, সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন।
ভারত বাংলাদেশকে কেন একাত্তরে সশস্ত্র সহযোগিতা করেছিল, তা নিয়ে কিছু ক্ষোভ এখনও আমরা লক্ষ্য করি। এই যে ক্ষোভ প্রকাশকারী- তারা কারা? কী তাদের প্রকৃত পরিচয়? হ্যাঁ, এরা তারাই, যারা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে পারেনি। যারা এখন 'মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা'র নামে মূলত কিছু মৌলবাদী মতাবলম্বীদের টাকা, ক্রেস্ট তুলে দেয়। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৎপর হয়।
শেখ হাসিনার এ সফরের সময়ে ভারত বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুদান দিয়েছে। এটি ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে একটি বড় ধরনের অনুদান। তারপরও বাংলাদেশের কিছু 'পাকতোষামোদকারী' বুদ্ধিসেবীরা বলছে- এটি নাকি ভারত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ঘুষ দিয়েছে। কতটা হীনমন্য হলে এমনটি বলা যায়। তারা অন্ধ না হয়েও অন্ধেত্বের ভান কেন করে?
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে ফিরে ঢাকা আসার পর সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। এর জবাবে তিস্তা পানি বণ্টনের ইস্যুতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন-'বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলাম।' একজন প্রধানমন্ত্রী এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কি করে ভুলে যান? কেন ভুলে যান? নাকি এর নেপথ্য কোন উদ্দেশ্য ছিল?
না, শেখ হাসিনা দেশে থাকতেই বলে গেছেন, এসব ইস্যু তিনি ভুলে যাবেন না। ভুলে যানও নি। আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং স্পষ্টই বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না ভারত। আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃষ্ণা, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ইতিবাচক কথা দিয়েছেন। যা বাংলাদেশের জন্য আনন্দ সংবাদ তো বটেই।
অথচ এই সফরকে 'শূন্য', 'গতানুগতিক' বিভিন্ন অভিধায় অভিষিক্ত করছে দেশের প্রো-মৌলবাদী শক্তি। তারা পারলে যেন ভারতের নাম-নিশানা পর্যন্ত মুছে দেয়। কিন্তু কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে তো বিজেপি, লোকসভার সম্মিলিত বিরোধীদল সবাই স্বাগত জানিয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিজেপি নেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও হয়েছে। তারা সে আলোচনাগুলোকে ইতিবাচক, ফলপ্রসূ বলেই আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধীদলীয়রা এই শিক্ষাও তো ভারতের বিরোধীদলীয়দের কাছ থেকে নিতে পারেন। তা তারা নিচ্ছেন না কেন? গঠনমূলক সমালোচনা না করে, অহেতুক হুমকি-ধমকি দেয়া, আন্দোলনের ভয় দেখানোরই-বা কারণ কি?
শেখ হাসিনার ভারত সফর কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা নির্ভর করছে চুক্তি এবং ওয়াদাগুলো বাস্তবায়নের ওপর। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিকামী। তারা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু কট্টরবাদিতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন। তা বাংলাদেশে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনেও বাংলাদেশের আপামর মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গণতান্ত্রিক, উন্নয়নকামী দেশ ভারতকে মুক্ত হস্তে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন এবং সৌহার্দ্যের বিশ্বাস স্থাপনে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার তার মাঝে সীমান্ত সমস্যা সমাধান, সমানুপাতিক আমদানি-রপ্তানি নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্যে বিশ্বস্ততা স্থাপন, নদীগুলোর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান অন্যতম। বাঁধ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের যাতে কোন ক্ষতি সাধিত না হয়- তা লক্ষ্য রাখা দরকার মানবিক কারণেই। এখানে আরেকটি বিষয় যুক্ত হওয়া দরকার- তা হচ্ছে তথ্য-সংস্কৃতির আদান-প্রদান। স্যাটেলাইট টিভি, বই-পত্রপত্রিকার আদান-প্রদান এবং বিপণনেও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণীত হওয়া জরুরি।
আমি আগেই বলেছি, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিবেশী। তাই বলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিবেশী বাংলাদেশকে হেলা করা কোন মতেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদারতার যে মুক্ত হস্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ভারতের উচিত উন্নয়নশীল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের গণমানুষের কল্যাণের কথা ভেবে সেই উদারতার পথকে প্রশস্ত করা।
ইতিহাসবিদ, রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দুর্মুখেরা যাই বলুক না কেন, মহাজোটের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের এটি একটি অন্যতম সাফল্য। এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ ভারত মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে এসে এই অঞ্চলে যৌথ বাণিজ্যের সম্ভাবনা উন্মোচনে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে। ড. মাহাথির মোহাম্মদ খুব স্পষ্টভাবেই বলেছেন, বাংলাদেশের জনসম্পদ রাষ্ট্রটির অন্যতম প্রাণশক্তি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ দেশের মানুষ সর্বদাই সতর্ক এবং তৎপর সেটাও কারও অজানা নয়।
নিউইয়র্ক, ১৩ জানুয়ারি ২০১০।
-----------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৫ জানুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
৩৬টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×