somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গদ্য কবিতা: সূচনা, বিকাশ ও সম্ভবনা ( বিকাশ পর্ব-০১)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গদ্য কবিতা: সূচনা, বিকাশ ও সম্ভবনা ( সূচনা পর্ব)

এই পর্বে যা পাবেন:

গদ্য কবিতা কি?

গদ্য কবিতা কি কবিতা?

হুইট ম্যানের সংক্ষিপ্ত জীবনী।


রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক অনুবাদকৃত হুইটম্যানের একটি কবিতা ও পদটিকা।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি প্রতিভা পাবলো নেরুদা।


গদ্য কবিতা কি ?

গদ্য কবিতা সে-ই কবিতা যা গদ্যে লিখিত হয়; অন্য কথায় পদ্য ও গদ্যের সংমিশ্রত উৎকৃষ্ট জাতীয় কবিতার নাম গদ্য কবিতা। প্রকৃতির বাস্তবতার কাব্যিক ব্যঞ্জনার নাম গদ্য কবিতা। গদ্য কবিতা প্রচীন যুগে হিব্রু স্কলারদের দ্বারা প্রথম লিখিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে নাম-না-জানা কয়েকজন লেখক ইংরেজীতে গ্রীক ও হিব্রু বাইবেল অনুবাদ করেছিলেন। স্বীকার না করে উপায় নেই যে, সলোমনের গান ডেভিডের গাথা সত্যিকার কাব্য। এই অনুবাদের ভাষায় আশ্চর্য শক্তি এদের মধ্যে কাব্যের রস ও রূপকে নিঃসংশয়ে পরিস্ফুট করেছে। এই গানগুলোতে গদ্যছন্দের মুক্ত পদপেক্ষ লক্ষণীয়। তথাপিও বলা যায় ১৮৪২ সালে প্রকাশিত হয় Aloysius Bertand -এর Gespard La nuit যা গদ্য কবিতাকে প্রথম স্বীকৃতি এনে দেয়। এর ছন্দোময় ও কাব্যিক ভাষা পরবর্তীতে অনেককে এই ফরমেটে কবিতা লেখাতে আগ্রহী করে তুলে। ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় Bandelaire-এর Petis poems en Prose. অন্য লেখকদের মধ্যে Rimbond এবং Oscar Wilde, Amy Lowell এই ধারায় লেখার প্রয়াস পান। Virginia Wolf কমপক্ষে একটি উপন্যাস এই ধারায় অনুসরণ করেন যেমন করেন Gertrnde Stien- Tender Buttons-এ। এর শুরু হয় ফ্রান্স থেকে এবং পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সাউথ আমেরিকায় Pablo Neruda এবং Borges, রাশিয়ার Turgenev, ইতালীতে Marinetti এবং ডেনমার্কে J. B. Jacobson, উত্তর আমেরিকায় Whitman, Robert Bly, W. S. Merwin প্রমুখ এই ধারার স্বার্থক ও প্রমাণিত কবি।

গদ্য কবিতা কি কবিতা?

এই বিষয়ে তর্কের শেষ নেই। কারো মতে গদ্য কবিতা একটি বিশেষ ধারার কবিতাই বটে কেননা এটা রূপক ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। অপর কারো মতে গদ্য কবিতা গদ্য। আধুনিকবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী T. S. Eliot গদ্য কবিতার বিপক্ষে জোড়ালো বক্তব্য তুলে ধরেন যদিও তিনি নিজে দু-একটি চেষ্টাও করেছেন এই ধারায়। বাংলা সাহিত্যের দিকনির্দেশক যিনি তার কর্মের মাধ্যমে বিশ্ব সাহিত্যে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রসঙ্গে বলেছেন -গদ্যকাব্য নিয়ে সন্দিগ্ধ পাঠকের মনে তর্ক চলছে। এতে আশ্চর্যের বিষয় নেই। ছন্দের মধ্যে যে বেগ আছে সেই বেগের অভিঘাত রসগর্ভ বাক্য সহজে হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করে, মনকে দুলিয়ে তোলে , এ কথা স্বীকার করতে হবে। তবে ছন্দটাই যে ঐকান্তিকভাবে কাব্য তা নয়। কাব্যের মূল কথাটা আছে রসে, ছন্দটা এই রসের পরিচয় দেয় তার আনুসঙ্গ হয়ে। সহায়তা করে দুই দিক থেকে। এক হচ্ছে স্বভাবতই তার দোলা দেবার শক্তি আছে, আর- এক হচ্ছে পাঠকের চিরাভ্যস্ত সংস্কার। এই সংস্কারের কথাটা ভাববার বিষয়।
একদা নিয়মিত অংশে বিভক্ত ছন্দই সাধু কাব্য ভাষায় একমাত্র পাঙ্ক্তেয় পদ্য ছিল। তখন ছন্দে মিল রাখাও ছিল অপরিহার্য। এমন সময় মধুসূদন বাংলা সাহিত্যে আমাদের সংস্কারের প্রতিকুলে আনলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ। তাতে রইল না মিল। তাতে লাইনের বেড়াগুলি সমানভাবে সাজানো বটে, কিন্তু ছন্দের পদক্ষেপ চলে ক্রমাগত বেড়া ডিঙিয়ে। অর্থাৎ এর বঙ্গি পদ্যের মতো কিন্তু ব্যবহার চলে গদ্যের চালে।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের মিলবর্জিত অসমতাকে কেউ কাব্যরীতির বিরোধী বলে কাজ মনে করেন না। অথচ পুর্বতন বিধানকে এই ছন্দ বহুদূর লঙ্ঘন করে গেছে। কাজটা সহজ হয়েছিল, কেননা তখনকার ইংরেজী শেখা পাঠকেরা মিল্টন , শেক্স-পিয়ারের ছন্দকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কী হতে পারে এবং হতে পারে না, তা হওয়ার উপরই নির্ভর করে, লোকের অভ্যাসের উপর করে না, এ কথাটা ছন্দই পূর্বেই প্রমাণ করেছে। আজ গদ্যকাব্যের উপর প্রমাণের ভার পড়েছে যে, গদ্যেও কাব্যের সঞ্চরণ অসাধ্য নয়।
সবশেষে এই একটি কথা বলবার আছে, কাব্য প্রত্যহিক সংসারের অপরিমার্জিত বাস্তবতা থেকে যতদূরে ছিলো এখন তা নেই। এখন সমস্তকেই সে আপন রসলোক উত্তীর্ণ করতে চায়, এখন সে স্বর্গারোহন করবার সময়ও সংগের কুকুরটিকে ছাড়ে না। বাস্তব জগৎ ও রসের জগতের সমন্বয় সাধনে গদ্য কাজে লাগবে; কেননা গদ্য সুচিবায়ুগ্রস্ত নয়।

আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্যে গদ্যে কাব্য রচনা ওয়াল্ট হুইটম্যান।
তিনি ১৮১৯ সালের ৩১ মে নিউ ইয়র্কের ওয়েষ্ট হিলে জন্মগৃহণ করেন। তার মা ছিলেন ডাচ্ বংশদ্ভোত কোর্য়াকার (জর্জ ফান কর্তৃংক প্রতিষ্ঠিত খ্রিষ্টধর্ম সম্প্রদায় বিশেষ) বিশ্বাসী ও ধর্মের প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা ছিল, আর ছিলেন স্বল্প- শিক্ষিত, হুইটম্যানের মা তাঁর কবিতা কখনো পড়েননি কিন্তু তিনি তাকে দিয়েছেন শর্তহীন ভালোবাসা। পিতা কাঠ ও রাজমিস্ত্রি ছিলেন। সন্দেহ কারার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, হুইটম্যানের পিতা কখনো তার কবিতা পড়েছেন কিনা কিম্বা পড়লেও বুঝতেন কিনা। তিনি নয় সন্তানের জনক ছিলেন এবং সংসার নিয়ে বিব্রত ছিলেন।
নয়জনের দ্বিতীয়, বালক ওয়াল্ট হুইটম্যান এগারো বছর বয়সে ছাপার জগতের সাথে যুক্ত হন উপার্জনের তাগিদে এবং লিখা ও ছাপার অক্ষরের প্রেমে পড়ে যান। তিনি মূলত ছিলেন স্ব-শিক্ষিত এবং ক্ষুধার্ত পাঠক। জীবনের শুরুতেই তিনি হোমার, দান্তে, শেক্সপিয়ার ও স্কট প্রমুখের লেখার সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি বাইবেল বিস্তারিত অধ্যয়ন করেন এবং ঈশ্বর-প্রেমিক কবিদের মতো ধর্ম ও মানবতার বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ রচনা করতে চাইতেন।
সম্পূর্ণভাবে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়ার পূর্বে তিনি ভিন্ন ধারার শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। Brooklyn Free man নামে বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় -মুক্ত মানবের ছোট নদী- একটি পত্রিকা তিনি প্রকাশ করেন। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫৫ সালের মধ্যে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম Leves of gress-এর কবিতাগুলো প্রকাশ করেন। তার দ্বারা পাবলো নেরুদা ব্যাপকভাবে আলোড়িত হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন তার -শেষ সপ্তক--এর গদ্য কবিতাগুলো লিখছিলেন তখন তার দ্বারা প্রভাবিত হন বলে ধারনা করা যায়। তিনি Leves of gress কাব্যের I saw in Lonisiana a Live-oak growing কবিতা অনুবাদ করেন। তরজমাটা নিম্নরূপ-
লুইসিয়ানাতে দেখলুম একটি ওকগাছ বেড়ে উঠছে;
একলা সে দাঁড়িয়ে, তার ডালগুলো থেকে শ্যাওলা পড়ছে ঝুলে।
কোন দোসর নেই তার, ঘন সবুজ পাতায় কথা কইছে তার খুশিটি।
তার কড়া খাড়া তেজালো চেহারা মনে করিয়ে দিলে আমারই নিজেকে।
আশ্চর্য লাগল কেমন করে এ গাছ ব্যক্ত করছে খুশি-ভরা
আপন পাতাগুলো যখন না আছে ওর বন্ধু, না আছে দোসর।
আমি বেশ জানি আমি তো পারতুম না।
গুটিকতক পাতাওয়ালা একটি ডাল তার ভেঙে নিলেম,
তাতে জড়িয়ে দিলেম শ্যাওলা।
নিয়ে এসে চোখের সামনে রেখে দিলেম আমার ঘরে;
প্রিয় বন্ধুদের কথা স্মরণ করাবার জন্যে সে তা নয়।
(সম্প্র্র্রতি ঐ বন্ধুদের ছাড়া আর কোন কথা আমার মনে ছিল না।)
ও রইল একটি অদ্ভুত চিহ্নের মতো,
পুরুষের ভালোবাসা যে কী তাই মনে করাবে।
তাই যাই হোক, যদিও সেই তাজা ওকগাছ
লুইসিয়ানার বিস্তীর্ণ মাঠে একলা ঝল্মল্ করছে,
বিনা দোসরে খুশিতে ভরা পাতাগুলো প্রকাশ করছে চিরজীবন ধরে,
তবু আমার মনে হয় আমি তো পারতুম না।

কবিতাটি তরজমা শেষে রবীন্দ্রনাথ লিখেন- এক দিকে দাঁড়িয়ে আছে কঠিন বলিষ্ঠ সতেজ ওকগাছ, একলা আপন আত্মসম্পূর্ণ নিঃসঙ্গতায় আনন্দময়, আর একদিকে একজন মানুষ, সেও কঠিন বলিষ্ঠ সতেজ, কিন্তু তার আনন্দ অপো করছে প্রিয় সঙ্গের জন্য এটি কেবলমাত্র সংবাদরূপে গদ্যে বলবার বিষয় নয়। এর মধ্যে কবির আপন মনোভাবের একটি ইশারা আছে। একলা গাছের সঙ্গে তুলনায় একলা বিরহী-হৃদয়ের উৎকন্ঠা আভাসে জানানো হল। এই প্রচ্ছন্ন আবেগের ব্যঞ্জনা, এই তো কাব্য; এর মধ্যে ভাব বিন্যাসের শিল্প আছে, তাকেই বলব ভাবের ছন্দ।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি প্রতিভা পাবলো নেরুদা। কবিতা-নির্মাণ-কুশলতায় কবিতার বিষয়-বৈচিত্র্য এবং নিসর্গ এবং ঐতিহ্যের চেতনায় বলীয়ান হয়ে তিনি যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আন্তর্জাতিক কবিতা অঙ্গনে এ আজ পরম বিস্ময়ের বিষয়। এই কবির জন্ম ১৯০৪ সালে চিলিতে এক রেলশ্রমিক ও স্কুল শিক্ষিকার ঘরে। তার শৈশব কেটেছে কোন্সেপ্সিওন্ প্রদেশে দক্ষিণে। বন্যা, প্রবল বর্ষণ, নিসর্গ, নদী, ঘন বন এই অঞ্চলের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। শৈশবের নদী, নিসর্গ ও জীববৈচিত্র্য তার জীবনচর্যায় প্রভাব বিস্তার করেছিল।
কুড়িটি প্রেম এক্ষং একটি বিরহের গান- নামক কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের সাথে সাথেই সমঝদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করল চিলির এক অখ্যাত লেখকের দিকে, ইনি নিজের পরিচয় দিতেন পাবলো নেরুদা রূপে।
কুঁড়িটি................গান বইখানিতে কোন আড়ম্বর ছিলনা, কিন্তু যারা এই বইটি পড়ল তারাই বুঝল যে, এমন একজন কবির জন্ম হয়েছে, তিনি বাঁধাধরা নিয়ম থেকে নিজেকে মুক্ত করবেন, নিজের পথ খুঁজে বের করে নিতে পারবেন।
পাবলো নেরুদা এমন মহৎ কবি যিনি জীবদ্দশায় হয়ে উঠেছিলেন নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই কিংবদন্তিতুল্য। ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পান। আর সেই বছর তিনি যে নোবেল ভাষণ দেন তাতে তাঁর কবিতা রচনার জন্য যে ভেতরমুখী তাগিদ কাজ করছিল, তার উল্লেখ আছে। সেই বক্তৃতায় তিনি বলেন-
ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, আমি কোন বই পড়ে কবিতা লিখতে শিখিনি। কাউকে আমি শিখাতেও পারবো না কি করে কবিতা লিখতে হয়। আজকের এই পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন সেই দিনটার কথা মনে করলে কিছু ভাবনার সৃষ্টি হয়। সেই ভাবনাগুলো আমি ভেজাল শব্দ দ্বারা প্রকাশ করিনা, কিন্তু নিজের কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। তাই আমার পথ চলার কাহিনী দিয়ে একটি কবিতা তৈরী হয়ে যায়। তাতে আমি মাটি থেকে উপাদান নেই। আমার কাছে একাকীত্ব, ভাবনার বিশ্বস্ততা, আবেগ ও গতি, নিজের কাছে আসা, মানুষের কাছে আসা, প্রকৃতির গোপনীয়তা প্রকাশ, আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি মানুষ তার ছায়ার সাথে, আচরনের সাথে কবিতার সাথে যে আটকে আছে, মানুষের যে সমাজবদ্ধতার চেতনা, তা সম্ভব হয়েছে কারণ মানুষের প্রচেষ্টা আছে স্বপ্ন আর বাস্তবকে একসাথে মেলাবার। কবিতা এই স্বপ্ন আর বাস্তবকে মেলাবার কাজটা করে।

হুইটম্যানকে তিনি মিলিয়ে নিয়েছিলেন গভীরভাবে তাঁর সত্ত্বার সাথে। সে কথা বারবার বলেছেন নানা সাক্ষাৎকারে। হুইটম্যানের কাব্যকৃতিকে তিনি মান্য করতেন। ১৯৯৬ সালে ১২ জুলই নিউ ইয়র্কে নেরুদা এক সাক্ষাৎকারে রবার্ট ব্লাইকে বলেন--
দক্ষিন আমেরিকার কবিতা কিন্তু পুরোপুরি অন্যরকম ব্যাপার। জানেনইতো আমাদের দেশগুলোয় এমন অনেক নদী আছে যাদের কোন নাম নেই, আছে এমন অনেক গাছ যাকে কেউই জানেনা, আছে এমন অনেক পাখি যাদের কেউই কখনো বর্ণনা দেয়নি। আমাদের পক্ষে বরং পরাবাস্তবিক হয়ে উঠাই সহজ, কারণ আমরা যা যা জানি সবই নতুন। আমরা যেভাবে বুঝেছি, আমাদের কাজ তাই মনে হয় যার কথা কেউ কখনও শোনেনি তারই কথা শোনালেন। সবকিছুই আঁকা হয়ে গেছে ইউরোপে, সবকিছুই গান গাওয়া হয়ে গেছে ইউরোপে কিন্তু আমেরিকায় তা নয়। সেই অর্থে, হুইটম্যান ছিলেন মহান শিক্ষক। কারণ হুইটম্যান আসলে কী বা কে? তিনি শুধু প্রখরভাবে সচেতনই ছিলেন না, ছিলেন দুচোখ খোলা মানুষ। তাঁর ছিল বিশাল ডাগর দুই চোখ, সবকিছু দেখার জন্য উৎসুক তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন কেমন করে কিছু দেখতে হয়। তিনি আমাদের কবি।
তাছাড়া অনেক মার্কিন কবি শুধু এলিয়টকে অনুসরণ করেই ভেবেছিলেন হুইটম্যান ছিলেন বড্ড গেঁয়ো, বড্ড আদিম, অথচ তিনি আদপেই কিন্তু সহজ সরল কিছু নন। হুইটম্যান-তিনি ছিলেন আন্তর্গূঢ় জটিল মানুষ, আর যেখানেই তিনি সেরা সেখানেই সবকিছু জটিলতায় ভরা। তার চোখ ছিল জগতের দিকে খোলা, আর তিনিই আমাদেরকে কবিতা সম্বন্ধে শিখিয়েছেন, আরো কতোকিছু শিখিয়েছেন। আমরা তাকে খুব ভালোবাসতাম। আমাদের উপর এলিয়টের প্রায় কোন প্রভাবই পড়েনি। হয়ত তিনি খুবই বুদ্ধিবাদী বলেই, আর আমরাতো খুবই সেকেলে, আদিম। তাছাড়া প্রত্যেককেইতো নিজের নিজের পথ বেছে নিতে হয় -সে কি হবে সূক্ষ্ম, বুদ্ধি নির্ভর পথ, নাকি অনেক খোলামেলা, ভাই-বন্ধুতে ভরা, সাধারণ মানুষের পথ, যে চেষ্টা করেছে তার চারপাশের জগৎটাকে বুকে টেনে নিতে, নতুন জগৎটাকে আবিস্কার করতে?

চলবে.... আশা করি সাথেই পাব।
ধন্যবাদ।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×