somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা কিছু সেরা ছবি - ৭

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিনেমা পারাদিসো


দৈর্ঘ : ১৫৫ মিনিট [ইতালি], ১২১ মিনিট [যুক্তরাষ্ট্র], ১৭৪ মিনিট [ডিরেক্টর্স কাট]
রঙ : রঙিন
দেশ : ইতালি
ভাষা : ইতালিয়ান
পরিচালনা : গুইসেপে টোরানটোরে
প্রযোজনা : ফ্রাঙ্কো ক্রিস্টালডি, গিওভানা রোমাগনোলি
চিত্রনাট্য : গুইসেপে টোরানটোরে
অভিনয় : সালভাতোরে কাসকিও, মার্কো লিওনার্দি, ফিলিপ্পে নইরেট, জ্যাকুয়াস পেরিন, এন্টনেলা আত্তিলি
সঙ্গীত :এন্নিও মারিকোনে
চিত্রগ্রহণ : ব্লাসকো গুইরাটো
সম্পাদনা : মারিও মোরা

কাহিনী সংক্ষেপ : জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক সালভাতোর দেরীতে ঘরে ফিরে বান্ধবীর কাছে শুনতে পায় তার মা ফোন করেছিলো এবং আলফ্রেডো মারা গেছে এ সংবাদটি দিতে বলেছে। সে যখন জানতে চায় আলফ্রেডো কে সালভাতোর তখন তার ছেলেবেলার গল্প বলে। ছবির মূল অংশ এই ফ্লাশব্যাক।
বিধবা মায়ের ছয় বছরের ছোট্ট সালভাতোর খুবই বুদ্ধিমান। তার ডাক নাম তোতো। তোতোর বেশির ভাগ সময় কাটে নিকটবর্তী স্থানীয় সিনেমা হল সিনেমা পারাদিসোতে। এ হলের প্রজেক্টর যে চালায় পিতার বয়সী সেই আলফ্রেডোর সঙ্গে তার রীতিমতো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আলফ্রেডো শুধু যে তাকে প্রজেকশন রুমে বসে সিনেমা দেখতে দেয়, তাই নয়, এমনকি তাকে প্রজেক্টর চালানোও শিখিয়ে দেয়। হঠাৎ একদিন এ সিনেমা হলে আগুন ধরে যায়। তোতো আলফ্রেডোকে বাঁচাতে পারে, কিন্তু তার আগেই ফিল্মের বিস্ফোরণে তার মুখ পুড়ে যায় এবং সে অন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, সে সময় ফিল্ম তৈরী হতো দাহ্যশীল নাইট্রোসেলুলস দিয়ে। চিচিও নামে এক ব্যক্তি আবার সিনেমা পেরাদিসো চালু করে। পুরো শহরে একমাত্র সালভাতোর প্রজেক্টর চালাতে জানে বলেই সেখানে তার চাকরী হয়ে যায়।
এরপর ছবির গল্প একলাফে প্রায় এক দশক এগিয়ে যায়। সালভাতোর বর্তমানে হাই স্কুলে পড়ে এবং এখনও সে প্রজেক্টনিস্ট। অন্ধ আলফ্রেডোর সঙ্গে তার হৃদ্যতা আরও বেড়েছে। সালভাতোর প্রায়শই তার উপদেশ নেয়। আলফ্রেডো তাকে পুরনো ধ্র“পদী ছবি বিষয়ে বলে। এদিকে একটা হোম মুভি ক্যামেরা নিয়ে সালভাতোর শ্যূট করা শুরু করে। এমনকি শহরের এক ধনাঢ্য ব্যাঙ্কারের কন্যা এলেনা’র ছবি তোলে, তার সাথে প্রেমও হয়। কিন্তু এলেনার বাবার কারণেই তাদের সম্পর্ক টেকে না। এলেনা শহর ছেড়ে চলে যায়। সালভাতোরও তার বাধ্যতামূলক আর্মিতে কাজ করার জন্যে বেরিয়ে যায়। সে বারবার এলেনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আর্মির দায়িত্ব শেষ করে সালভাতোর আবার ঘরে ফেরে। এবার আলফ্রেডো তাকে বলে, এই শহর তার স্বপ্ন ও আকাঙ্খার জন্য খুব ছোট। তার উচিত বেরিয়ে পড়া। এবং অতীতের দিকে ফিরে না-দেখা।
সেই যে বাড়ি ছেড়েছিলো তারপর আলফ্রেডোর মৃত্যুতে সে শহরে ফেরে। কিন্তু এ শহর অনেক বদলে গেছে। এমনকি সে এসে দেখে তার প্রিয় সিনেমা পারাদিসোটিও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আলফ্রেডোর বিধবা স্ত্রী জানায়, তার জন্যে দুটো জিনিস সে রেখে গেছে। একটি পুরনো ফিল্ম-রিল আর সেই ছোট্ট টুলটি যেটির উপর দাঁড়িয়ে তোতো প্রজেক্টর চালাতো। তিনি আরও জানান, সালভাতোরের সাফল্যে আলফ্রেডো সদাই গর্বিত ছিলো। সালভাতোর রোমে ফিরে যায়, এবং পুরনো বন্ধুর রেখে যাওয়া রিলটি দেখে।

বিশেষত্ব : সিনেমা পারাদিসো একাধারে বাণিজ্যিক সাফল্য এবং দেশ-বিদেশের সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। আবেগ, নস্টালজিয়া, শৈশবের উৎসাহ, আনন্দ, যৌবনের আনন্দ-বেদনা, শিল্পীর মুগ্ধতা Ñ এ সব কিছুই এ ছবিতে আছে। ইতালীর সিনেমা এ ছবি আবার চাঙ্গা করে তুলে। ১৯৮৯ সালে এ ছবি অস্কারে সেরা বিদেশী ছবির পুরস্কার পায়। কানে এ ছবি স্পেশাল জুরি পুরস্কার পায়। নিঃসন্দেহে এটি অন্যতম জনপ্রিয় বিদেশী ছবি। সমালোচক জেমস বেরানডিলি বলেছেন, ‘যদি তুমি চলচ্চিত্র ভালবাস তাহলে সিনেমা পারাদিসোকে ভাল না বলে পারবে না।’

বিশেষ তথ্য : ১. ইতালীতে এ ছবি ১৫৫ মিনিটে মুক্তি দেয়া হয়েছিলো। সেখানে এ ছবি তেমনভাবে গৃহীত না-হওয়ায় পরে বিদেশের জন্য দৈর্ঘ কমিয়ে ১২১ মিনিট করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই এটি চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ১৭৩ মিনিটের ডিরেক্টর্স কাট মুক্তি দেয়া হয়।
২. এ ছবির শেষ দৃশ্যটি কিংবদন্তী তুল্য। সালভাতোরের জন্য আলফ্রেডো সেই সব দৃশ্যই জোড়া দিয়ে রেখে গেছেন যেগুলো সে সময় তিনি হলে দেখাতে পারেননি। কারণ সে সময় চার্চ সিনেমা হলকে নিয়ন্ত্রণ করতো। এবং কোন চুম্বন বা প্রেমের দৃশ্য এলেই কেটে দিতে হতো। সালভাতোর যখন আলফ্রেডোর রিলটি দেখতে থাকে তা আসলে চলচ্চিত্র মন্তাজের এক অনবদ্য উদাহরণ। এক কথায় এই রিলটি সংক্ষেপে রোমান্টিক সিনেমার ইতিহাসকেই তুলে ধরেছে। বাদ দেয়া সব চুমুর দৃশ্যই সালভাতোরের প্রতি আলফ্রেডোর শেষ উপহার।
৩. আদতে এ ছবি বানিয়ে গুইসেপে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলগুলির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছেন। কিন্তু ছবি অর্থনৈতিক এবং শৈল্পিকভাবে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করার পর তিনি সে উদ্দেশ্যের কথা আর উচ্চারণও করেননি।
৪. সালভাতোরের জন্য তৈরি করা আলফ্রেডোর ছবিগুলো চালানোর জন্য যে লোকটি প্রজেক্টর চালায় সে স্বয়ং পরিচালক গুইসেপে।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×