somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি কখনই দায়িত্বশীল হব না ?

১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি-আপনি সকলেই আমরা অন্যের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরন আশা করি। আশ করি সুশিল,সভ্য ও নম্র আচরন। আমরা যে যে শ্রেনী থেকেই উঠে আসি না কেন, অপরের কাছ থেকে এইটুকু পাবার অধিকার আমাদের সকলের এববং আমরা সবাই তা প্রত্তাশা ও করি।

ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্ট-ইন্ডিয়া কম্পানী উপমাহাদেশ শাসন করেছে তাদের বিখ্যাত 'ডিভাইড এন্ড রুল' নীতি প্রয়োগ করে। শুধুমাত্র ধর্মিয় বিভেদকে পুজি করেই হাজার মাইল দূরে থেকে ও ২০০ বছর নির্বিগ্নে শোষন করেছে কোটি কোটি মানুষকে। অনৈক্য আর বিভেদ এতটাই প্রকোট ছিল যে সংখালঘু হওয়া সত্যেও এরা চরম প্রতাপে সংখ্যাগুরুদের শাসন করতে পেরেছে।

৪৭ এ ইস্ট-ইন্ডিয়া কম্পানী উপমাহাদেশ ছাড়লেও তাদের বিখ্যাত 'ডিভাইড এন্ড রুল' নীতি উপমাহাদেশে বটবৃক্ষের ন্যায় শিকড় গেড়ে আছে। ধর্মের সাথে যোগ হয়েছে অন্ধ দলীয় আনুগত্ব ও পরমত অসহিশ্নুতা।

দেশ হিসেবে গত ৩৮ বছরে বাংলাদেশের সাফল্য কম নয় কিন্তু আমাদের এর চেয়ে ও বেশী কিছু করার সামর্থ ছিল। প্রায় একই সময়ে স্বাধীন মালয়শিয়া, কম্বডিয়া, লাউস, ভিয়েতনামের সাথে নিজেদের তুলনা করলেই মাথা নুয়ে আসে।

আমি ইতিহাসবিদ বা সমাজবিশারদ নাই, তবে আমার যা মনে হয় তা কোন ভাবেই আশাব্যান্জ্ঞক নয়। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতি হিসেবে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াই এর মূল কারন। আমাদের রাজনৈতিক দলগুল বেশ ভাল ভাবেই ব্রিটিশদের 'ডিভাইড এন্ড রুল' -এর মডিফাইড ভার্শন চালু করতে সক্ষম হয়েছে। এক দল মুক্তিযুদ্ধকে দলিয় প্রডাক্ট বানিয়ে বিরোধীদেরকে দেশদ্রহী আর পাকিস্তানী দালান বলছে। অপর পক্ষ ভারতের দালালদের কাছ থেকে দেশ বাচার ডাক দিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। অন্য পক্ষ ধর্মের আশ্রয়ে দেশ সেবার গান গাইছে, অথচ ৭১ -এর নরঘাতক গুলকে আগলে রেখেছে।

মুখশ আলাদা হলেও এরা সবাই আবার নিজ স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ। ক্ষমতা পাকা-পোক্ত করার জন্য যে কার সাথে এরা নিমিশেই গাটছাড়া বাধছে। আবার বলছে 'রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই'। একমাত্র নীতিহীনদেরই শেষ বলে কিছু থাকে না।

আর আমরা জনগন ও ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত এদের কথায় লাফাচ্ছি। যাকে চিনি না জানি না তাকে রাস্তায় পিটিয়ে লাশ বানাচ্ছি, অপরের দিকে বৃষ্টির মত ইট মেরে বলছি 'বাচলে গাজী মরলে শহীদ'।

হ্যা আমরা অকাতরে ওহাদের কথায় শহীদ ও হচ্ছি। প্রবল মেধা-যুদ্ধ পার করে সুযোগ পাওয়া শ্রেষ্ঠ জাতিয় মেধাবিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুবার আগেই অস্ত্র হাতে সহপাঠির মাথা ফাটাতে উদ্ধত।

আমরা ব্লগাররা হচ্ছি আরও উন্নত সংস্করন। আমরা কীবোর্ড মাউস নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি। শুধু মাত্র ভিন্ন মতাদর্শের কারনে কাউকে লেজ কাটা 'জামাত-শিবির' বলে আখ্যা দিচ্ছি। আথচ নিজের লেজটা ও যে কেটে অন্য কোন দলে জমা দিয়ে দিয়ে দিচ্ছি, সে ব্যাপারে বেমালুম-বেখবর।

ওরা চায়না আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, আমাদের সমস্যা সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করি, ঐক্যবদ্ধ ভাবে পথ চলি।আর আমরাও জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভাবে ব্লগে ধিরে ধিরে সেই পুরন অন্ধকার পথেই পা বারাচ্ছি। আমাদের সবার ধারনা ব্লগে শুধু নিজের মতামত প্রকাশ করাই শেষ কথা। কিন্তু এটা যে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে অন্যকে প্রভাবিত করছে, সে ব্যাপারে আমরা কতটুকু সচেতন?

যাকে চিনি না জানি না তাকে কি অবলিলায় কুকুর-বিড়ালের সাথে তুলনা করছি। শ্লিল-অসশ্লিল ভাষায় গালি দিচ্ছি, অন্যের ধর্মিয় বিশ্বাসকে উপহাস করে মজা লুটছি! আমাদের লেখা ও মন্তব্য যে আর ও অনেকেই পড়ছে, সে ব্যাপারে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই, এর আউটপুট যাই হোক নিশ্বই ভাল কিছু হবে না।

আমরা যারা ব্লগার তারা যে সমাজের সুবিধা প্রপ্ত ও দেশ-সমাজ নিয়ে চিন্তাশীল জনগষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করছি তা ভুলে যাচ্ছি। আমাদের আচার-আচরন ও মত অন্যকে কমবেশি প্রভাবিত করছে, সুতরাং আমাদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া একান্ত কাম্য।

ব্যাক্তি আপনি যে কোন দলের সমর্থক হতেই পারেন, তাই বলে অন্ধ দলীয় আনুগত্যের নিল্লজ্ব প্রদর্শনি, যুক্তিহিন পক্ষপাতিত্ব ও ভিন্ন মতের প্রতি সহিংশ আক্রমন কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয় এবং ব্লগে তার প্রকাশ ঘটানও উচিত নয়।

জানি অনেকেই তা মানেন না বা মানা উচিত বলে বিশ্বাস করেন না। আপনারা আমার কাছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদাউদ্ধত, মারামারি রত কেডারদের মতই। মানষিক ভাবে একই শ্রেনীর পার্থক্য একটাই ওরা অস্ত্র হাতে কেম্পাসে আর আপনি সভ্য জগতের মুক্ত মাধ্যম 'ওয়েব' -এর সামনে বসে পড়েছেন কীবোর্ড-মাউস হাতে। কেডারদের রড,ছুরি, কাটা রাইফেল থেকে যেমন তার সহপাঠিরা মুক্ত নয় ঠিক তেমনি আপনার ভাষা ও আচরন থেকে ও আমরা মুক্ত নই।

আমরা সবাই, অপরের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরন আশা করি কিন্তু আমরা নিজেরা কি দায়িত্বশীল আচরন করছি ?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×