somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও ইসলাম

১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং রাজনীতির অঙ্গনে যে শব্দগুলো খুব বেশি শোনা যায় তার ভেতরে একটি হচ্ছে "ধর্মভিত্তিক রাজনীতি"। সত্যি কথা বলতে কি, "ধর্মভিত্তিক" শব্দটার ভেতরেই একটু গলদ আছে। দুই কলম পড়াশোনা আছে কিন্তু 'ইসলাম' সম্পর্কে ধারণা ধোঁয়াটে এরকম যেকারোই "ধর্মভিত্তিক রাজনীতির" বিপক্ষে অবস্থান থাকা স্বাভাবিক। এর কারণ অনুসন্ধান করতে হলে ধর্মের নামে যে অত্যাচার আর সন্ত্রাস খ্রিস্টানরা করে গিয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। "মৌলবাদ" শব্দটার উৎপত্তি কোথা হতে তাও জানতে হবে। সেসব ইতিহাস লব্ধ জ্ঞান "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি"-তে আমাদের উৎসাহ দেয়া তো দূরের কথা, বরঞ্চ রাষ্ট্র পরিচালনা বা রাজনীতিতে ধর্মীয় মতবাদের প্রধান্য দেয়ার পথে বাঁধা হিসেবে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় ধর্ম ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার যেকোন অধ্যায় বিশেষ করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা ভাবতেই অন্ধকার আর খারাপ একটি ব্যবস্থার চিত্র ভেসে ওঠার উপক্রম হয়। কোন একটি ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের ধর্ম থেকে বহুযোজন সরে এসে মনগড়া বিধানের দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে কি অনাচার সৃষ্টি করেছিলো তা দিয়ে অনেক কিছু যেখানে বিচার করা হচ্ছে সেখানে ধর্মীয় মতাদর্শ থেকে দেশ পরিচালনা তো দূরের কথা ধর্মগুরুদের প্রাধান্যের কথা ভাবাটাই কষ্টকর। অথচ এই আমরা যদি জ্ঞান আহরনের পথে আরেকটু উদার হতে পারতাম, আরো অধিক জ্ঞান পিপাসা আমাদের থাকতো তা হলে নিঃসন্দেহে এক দলের সীমাবদ্ধতা ও ইতিহাস দিয়ে সামগ্রিক ভাবে ধর্মকে বিচার করতে যেতাম না। কোন এক ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী ও বিকৃতকারীদের সৃষ্ট নৈরাজ্য থেকে ধর্মভিত্তিক জুজুর সৃষ্টি হতো না।

ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে আবার ফিরে আসি। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করা যাবে কি যাবে না এই আলোচনা করার আগে ইসলামের সাথে রাজনীতির সম্পর্কে তা বুঝতে দুইকলম জ্ঞান আহরণ করা উচিত। রাজনীতির সাথে ইসলামের সম্পর্ক জানতে হলে যে জ্ঞান প্রথমেই অর্জন করতে হবে সেটি হচ্ছে, "ইসলাম একটি পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা"। জীবনের এমন কোন দিক নেই যে-বিষয়ে ইসলামের দিক্‌-নির্দেশনা পাওয়া যায় না। প্রতিদিন সকালে ঘুমভাঙার পর থেকে ঘুমানো পর্যন্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে পরিষ্কার গাইডলাইন প্রদান করা জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। রাজনীতি যেহেতু জীবনের বাইরের কোন বস্তু নয় সেহেতু পরিপূর্ন এই জীবন ব্যবস্থা রাজনীতিতেও আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করে। কিন্তু এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত না জানার ফলে অজ্ঞদের কাছ থেকে আসা সিদ্ধান্তগুলো ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। কোন কিছু সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসা ও ইতিহাসের কিছু চিত্র দিয়ে সমগ্র মানবজাতির ইতিহাস ও ঘটনাকে মূল্যায়ণ করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য হোক আর নিজেদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থেকেই হোক আমরা বরাবরই এই বোকামী করে আসছি।

বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ না করলে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে অনেক যুক্তিই দাঁড় করানো সম্ভব। আমাদের ভেতরে বেশির ভাগই যেখানে নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনার উপরে ভরসা নেই, অন্যদের দেখে ও অন্যদের মাথাকে নিজের মাথা ভেবে তাদের কথাকে কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করেই মেনে নেয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠেছে সেহেতু এটা খুব স্বাভাবিক যে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে রায় দিচ্ছে এবং দিবে। আগেই বলেছি, ইসলামী রাজনীতি কেন নিষিদ্ধ হওয়া উচিত না তা বোঝার জন্য ইসলাম আসলে কি এবং ইসলামের ব্যাপ্তি কতটুকু সেটা জানা জরুরি। আর যেহেতু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকারীদের মিছিলের বেশিরভাগই হয় ইসলাম বিদ্বেষী অথবা ইসলাম সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞ সেহেতু তাদের পক্ষে সত্যিকার অর্থেই বিষয়টা অনুধাবন করা কষ্টকর। খুব সহজ ভাষায় বিষয়টি তাদেরকে বোঝানোর জন্য বলা যেতে পারে যে- কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম এবং আরো বিভিন্ন ধরনের মতবাদের ভিত্তিতে যেমন রাজনীতি হতে পারে তেমনি ইসলামি সিস্টেমেও তা করা যেতে পারে, কারণ ইসলাম একটি পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং অন্যসকল মতবাদের পাশাপাশি ইসলামি মতবাদও উপস্থান করার সুযোগ রাখতে হবে। মানুষের তৈরি বিভিন্ন মতবাদ যেখানে রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে তা হলে 'পরিপূর্ন জীবন বিধান' ইসলামও এই রাস্তায় তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারে, পারা উচিত। রেসের ময়দানে কমিউনিজম আর সেক্যুলারিজমের ঘোড়ার সাথে ইসলামের ঘোড়াও পাল্লা দেয়ার অধিকার আছে । কোন ঘোড়া রেসে কেমন পারফর্ম করছে বা কোন ঘোড়া অধিকতর উপযোগী ও কার্যকরী সেটা রেসে নামার পর বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু রেসের আগেই প্রতিপক্ষের ঘোড়াকে ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়াটা অবশ্যই সুস্থ্য চর্চা নয়।


--
বিশেষ আপডেটঃ
ইসলাম বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবেই যে মানুষ ইসলামি রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে তার অনেক নমুনা বই-পত্র, পত্রিকা, ব্লগ এবং আরো নানা যায়গা দেখতে পাওয়া যায়। প্রয়োজনের সময় এগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্লগে এধরনের অজ্ঞতাপ্রসূত লেখাগুলো এখন থেকে চোখে পড়লেই এখানে লিঙ্ক জড়ো করবো।
১) Click This Link

(আরো আপডেট হবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৪৮
৬০টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×