somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব ইজতেমার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট!!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইজতেমা আরবি শব্দ; এর বাংলা অর্থ হচ্ছে সমাবেশ বা সম্মেলন। ধর্মীয় কোনো কাজে বহুসংখ্যক মানুষকে একত্রিত করাকে ইসলামী পরিভাষায় ইজতেমা বলে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সমগ্র পৃথিবীর বহুসংখ্যক দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যেখানে সমবেত হন তাকে বিশ্ব ইজতেমা বলা হয়।

তোমার কাছে যদি কোন বাণী থাকে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। এই শাশ্বত বাণীকে আকড়ে ধরে সমগ্র বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ থেকে আগত হাজার হাজার তাবলীগী অনুসারী দ্বীনদার মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় মিলিত হন।

তাবলীগ অর্থ প্রচার করা, ইসলামের দাওয়াত দেয়া। ধর্মের ব্যবহারিক দিকগুলো অনুশীলনের জন্য দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ সত্যকে ধারণ করে তাবলীগী জামায়াত যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী তাদের দাওয়াতের কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। কালিমা, নামায, রোযা, এলেম ও যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, সহী নিয়ত এবং দাওয়াতে তাবলীগ এই ছয়টি উসূল বা মূলনীতিকে সামনে রেখে তাবলীগ জামায়াত তাদের কাজ চালাচ্ছেন। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ধর্মের দাওয়াত নিয়ে গ্রাম-গঞ্জ, শহরে-বন্দরে সারা বছর ঘুরে ঘুরে বেড়ান। শুধু বাংলাদেশে নয় আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া ইউরোপসহ প্রায় প্রত্যেক দেশেই তাবলীগীদের এই দাওয়াতের মেহনত চলছে।

তাবলীগ জামায়াতের মারকায তিনটি-পাকিস্তানের রাওয়াল বন্ড, ভারতের নিযামুদ্দিন এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদ। বিশ্বব্যাপী তাবলীগী জামায়াতের কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ার ফলে তাবলীগীদের কথাবার্তায় আরবি-ফারসি-উর্দুর সংমিশ্রণে এক পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে মুসলমানগণ উপমহাদেশের তিনটি দেশে প্রায়শ তাবলীগী জ্ঞানার্জন ও বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য আগমন করেন। জানা যায়, দাওয়াতে তাবলীগী জামায়াতের পুনর্জাগরণ করেন বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাধক মওলানা ইলিয়াস আখতার কান্ধলভী (র.) (১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি: )। তাঁরই নির্দেশে হযরত মওলানা আব্দুল আযীয (র.) এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তাবলীগ জামায়াতের মেহনত শুরু হয়। তাবলীগী জামাতের প্রথম ইজতেমা ১৯৪১ সালে দিল্লীর নিযামউদ্দীন মসজিদের ছোট এলাকা মেওয়ার নূহ মাদ্রাসায় আয়োজন করা হয়। এই ইজতেমায় প্রায় ২৫০০০ তাবলীগ দ্বীনদার মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। এভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে মেওয়াতের বিভিন্ন শ্রেণীর কিছু মানুষের কাছে দ্বীনের কথা প্রচারের মধ্য দিয়ে আজকের এই বিশ্বব্যাপী তাবলীগী জামায়াতের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে তাবলীগী জামায়াতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে; ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন তাবলীগী জামায়াতের মারকায কাকরাইল মসজিদে। এরপর ১৯৪৮ সালে ইজতেমা হয় চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজী ক্যাম্পে, ১৯৫৮ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু প্রতি বছর ইজতেমার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আশাতীতভাবে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে ইজতেমা টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে আয়োজন করা হয়। ঐ বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশগ্রহণ করায় বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৬৭ সাল থেকে বর্তবান অবধি বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর উত্তর-পূর্ব তীর সংলগ্ন তৎকালীন ডিআই বর্তমানে রাজউকের হুকুম দখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল খোলা মাঠে।

প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০/৫৫টি দেশের তাবলীগী দ্বীনদার মুসলমান জামায়াতসহ প্রায় ২৫/৩০ লক্ষাধিক মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে। সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুক্রবারবাদ জুম্মা থেকে বিশ্বইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু পবিত্র রমযান মাসের কারণে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। এই কারণে ১৯৯৬ সালে দু’টি বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে কোন ইজতেমা হয়নি। আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ হবে এর ৪৬তম বিশ্ব ইজতেমা। এ আয়োজনকে ঘিরে বিশ্বইজতেমার কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে এর জোর সম্মেলন ও অঞ্চলভিত্তিক প্রস্তুতিমূলক ইজতেমা শেষ হয়েছে এবং দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ আসতে শুরু করেছেন।

লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজেতামার আয়োজনকে অনেকের কাছে রহস্যঘেরা এবং বিস্ময়কর বলে মনে হয়। টঙ্গীর বিশ্বইজতেমার বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর শৃঙ্খলা। লাখ লাখ লোকের কয়েকদিনব্যাপী অবস্থানকে শৃঙ্খল করার জন্য ইজতেমার মাঠকে অনেকগুলো খিত্তায় ভাগ করা হয়। যার একেক খিত্তায় একেক অঞ্চল থেকে আগত মুসল্লিগণ অবস্থান করেন। তারা বিশাল সামিয়ানার নিচে আল্লাহর প্রেমে পাগল হয়ে নবীর প্রেমের প্রেমিক হয়ে ঘর-বাড়ি, আরাম-আয়েস ত্যাগ করে ৩ দিনের জন্য মিলিত হন। কিন্তু কোনরকম বিশৃঙ্খল হয় না।

আরো বিস্ময়কর হচ্ছে-বিশ্বইজতেমায় এই যে, প্রায় ২৫/৩০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়, তার জন্য কোন প্রচার ব্যয় নেই। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং কিছুই নেই। নেই কোন কেন্দ্রীয় তহবিল, নেই কোন আনুষ্ঠানিক অফিস, টেলিফোন, যানবহান ইত্যাদি। এ বিশাল আয়োজনে কোন শ্রমিক নিয়োগ করা হয় না। কোন দ্রব্য-সামগ্রী কিনতে হয় না। সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে যা কিছু প্রচারিত হয় বা যে সব সহযোগিতা পাওয়া যায় তাও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা- প্রণোদিত। এটাও বিশ্বইজতেমার এক অনন্য-সাধারণ বৈশিষ্ট্য যার কোন তুলনা নেই।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×