টিউশনির সুবাদে আমাকে রেগুলার ধানমণ্ডি যেতে হয়।আমি গাড়িতে উঠি আজিমপুর থেকে।তারপর নীলক্ষেত,নিউমার্কেট,সায়েন্সল্যাব হয়ে ধানমণ্ডি।দুরত্ব খুব বেশি না।তারপরেও আমাকে বের হতে হয় আধাঘণ্টা আগে।কারন আজিমপুর-নীলক্ষেত জ্যামে থাকতে হয় দশ মিনিট,সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে দশ মিনিট আর বাকি দশ মিনিট রাস্তায়।এভাবে দিনের পর দিন রাস্তায় কাটাতে হয় প্রচুর সময়।তাও আমার কোন সমস্যা নাই।আমি ভাবি তাদের কথা যাদের আমার চেয়েও আরো দূরে যেতে হয়।তাদের যে জীবনের বেশিরভাগ সময় গাড়িতেই কাটাতে হয়।আমি জানি, আমাদের দেশের সরকার অনেক চেষ্টা করে এই যানজট নিরসনের।অন্তত তাদের কথা শুনে তাই মনে হয়।আমি তাদের এই প্রচেষ্টা কে স্বাগত জানাই।
একদিনের কথা বলি।আমি টিউশনি থেকে ফিরছি।গাড়িতে উঠেছি।দুই-তিন মিনিট এগোতেই খেয়াল করে দেখি সামনে বিশাল জ্যাম।জতদূর দেখা যায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি।আমি চুপচাপ বসে এফ.এম. রেডিও শুনছিলাম।পাশ থেকে কেউ যেন বলল,প্রধানমন্ত্রী আসছেন।তাই এইদিকের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।তিনি চলে গেলে খুলে দেওয়া হবে।আমি ভাবলাম এ আবার নতুন কী।ওয়েট করতে থাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গমনের জন্য।
রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি।অনেকক্ষণ পরে আমার ঘুম ভাঙ্গে।দেখি এখনো জ্যামে।খেয়াল করে দেখি আগের জায়গাতেই আছি।মোবাইল সেট বের করে টাইম দেখি।পাক্কা পৌনে একঘণ্টা এখানেই আছি।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে জানলাম,প্রধানমন্ত্রী এখনো যাননি।আর মাত্র পাচ মিনিট পরেই তিনি এদিক দিয়ে যাবেন।তারপরেই আমাদের রাস্তা খুলে দেওয়া হবে।উফফফ…..আমি হাফ ছেড়ে বাচি।তবে মনে মনে একটা কারনে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল।কারনটা পরেই বলি।তার আগে আরেকদিনের কাহিণীটা বলি।
সেদিন ঢাকা কলেজের সামনে বাসে।অনেক্ষণ ধরে জ্যামে আটকে আছি।আজ আধাঘন্টা এখানেই কেটে যাবে মনে হয়।শুনলাম কোন এক মন্ত্রী যাবেন।তো কী আর করা।আগের মতই ধৈর্য ধরে বসে থাকলাম।
সেদিওনও প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত আটকে থাকতে হয়েছিল।
এমনিতেই দৈনিক জ্যামে থাকতে হয়,তার উপর এইভাবে অকারনে আটকে রাখার কোন মানে আমি বুঝতে পারলাম না।
ও,আমার সেই মনে মনে হাসার কারণটা বলি।তা হল,আমার যদি সেই ক্ষমতা থাকত তবে আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর যোগাযোগ মন্ত্রী মহোদয়কে কোন একদিন আজিমপুর থেকে গাবতলি যেতে বলতাম।উনারা নিজেদের গাড়িতেই যাবেন,কিন্তু কেউ জানবে না।সুতরাং তাদের যাবার জন্য ট্র্যাফিক পুলিশ অন্য রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে রাখবে না।তাহলে উনারা হয়ত বুঝতে পারবেন জ্যামে আটকে থাকলে কতটা খারাপ লাগে,অকারনে নষ্ট হয়ে যাওয়া সময়ের প্রতি কতটা মায়া জন্মায়।
তখন হয়ত তারা বুঝতে পারবেন আমাদের ঢাকার জ্যাম কতটা ভয়ঙ্কর,মানুষ কতটা ভোগান্তির মাঝে আছে।
(আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর যোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই লেখাটা লিখেছি)