somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবারো কোকো!!!

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামে বিদেশে লেনদেন হওয়া ঘুষের অর্থের আরও প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা দেশে এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর ফলে তৃতীয়বারের মতো কোকোর পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনল প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুদক আয়োজিত ‘পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারবিষয়ক’ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের কাছে একটি ‘প্রতীকী চেক’ হস্তান্তর করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আহমেদ খান ও তাঁর প্রতিষ্ঠান অকটোখানকে সহযোগিতা পুরস্কার হিসেবে এই অর্থেরও ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, ১৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর ওভারসিস ব্যাংক থেকে নয় লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৭ মার্কিন ডলার বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরে ১৮ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় এ অর্থ দুদকের ‘স্টোলেন রিকভারি অ্যাসেট’ হিসাবে জমা হয়। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ সাত কোটি ৪৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ টাকা। এ অর্থ বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স থেকে ঘুষ হিসেবে নিয়েছিলেন কোকো।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে প্রথম দফায় ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার দেশে ফেরত আনে দুদক। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরপর দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ওই অর্থের (১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা) মুনাফা ২৩ হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার, বাংলাদেশি প্রায় ১৫ লাখ টাকার সমান, দেশে ফেরত আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন দফায় এল ২০ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা।
স্থানীয় একটি হোটেলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘আইনি জটিলতা কাটিয়ে এ টাকা দেশে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’ চেক হস্তান্তরের পর তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় যেসব লেনদেন সন্দেহজনক হবে, তার প্রতিটি যাচাই করা হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আরও বহু রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
মুদ্রা পাচার মামলা: মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০০৫ সালে কোকো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ নেন। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে অর্থ গ্রহণ করেন। পুরো অর্থই সিঙ্গাপুরে লেনদেন হয়। এ ঘটনায় দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ বাদী হয়ে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ আরাফাত রহমান ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেনকে আসামি করে কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। এরপর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে ২০১১ সালের ২৩ জুন মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে আদালত কোকোর ছয় বছরের কারাদণ্ডসহ ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন এবং একই সঙ্গে বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
অকটোখানকে আবার কমিশন: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ফেরদৌস আহমেদ খান ও তাঁর প্রতিষ্ঠান অকটোখানকে সহযোগিতা পুরস্কার হিসেবে ফের ১০ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জমান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি বা তাঁর প্রতিষ্ঠান যতবার দেশে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সাহায্য করবে, ততবার কমিশন পাবে।
এ সময় দুদক কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আসার পর তা সরকারের নয়, দুদকের। এ অর্থ আমরা আমাদের হিসেবে খরচ করব। দুর্নীতি প্রতিরোধে যেদিকে প্রয়োজন হবে সেদিকে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।’
চলতি বছরের গত ২৫ জুলাই কোকোর পাচার করা অর্থের প্রথম দফায় ফেরত আসা মোট অর্থের ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার ২১৩ টাকা পুরস্কার হিসেবে অকটোখানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এদিকে অকটোখান বা ফেরদৌসকে কমিশন দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
দুদক আইনে এ ধরনের কোনো নীতি বা বিধি নেই স্বীকার করে কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, এটি দুদক আইনের বিষয় নয়, এটি দুর্নীতি প্রতিরোধে সময়ের প্রয়োজনীয়তা। উল্লেখ্য, আইন অনুযায়ী যে ধরনের আর্থিক পুরস্কার বা প্রণোদনার উল্লেখ রয়েছে, তা শুধু কমিশনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, অকটোখানকে দুদকের পক্ষ হয়ে বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে কাজের সম্মানী হিসেবে ১০ শতাংশ অর্থ প্রতিষ্ঠানটি পাবে। তিনি জানান, অকটোখানের ফেরদৌস আহমেদ এর আগে সম্মানী হিসেবে ৩০ শতাংশ এবং প্রতিবার বিভিন্ন দেশের আদালতে হাজির থাকার জন্য আলাদা অর্থ দাবি করেছিল। দুদক কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এখন সমঝোতায় পৌঁছেছে।
দুদকের প্রশাসনিক সূত্র জানায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধূরীর নির্দেশে এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম এ মতিনের অধীনে গঠিত গুরুতর অপরাধ দমন টাস্কফোর্সে কাজ শুরু করেন ফেরদৌস আহমেদ খান। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফেরদৌস ‘পরামর্শক’ হিসেবে টাস্কফোর্সে যোগ দেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা অনিয়ম খুঁজে দেখার পাশাপাশি তৎকালীন দুদক পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
দুদক সূত্র জানায়, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে শুধু যুক্তরাজ্য (লন্ডন) ভিত্তিক অকটোখানের সঙ্গেই চুক্তি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ কার্যালয় গুলশানে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা গেছে সেখানে বাংলাদেশ কার্যালয় ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই।
দুদকের রক্ষিত নথি অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে অকটোখানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরলেই, তার ১০ শতাংশ পুরস্কার হিসেবে অকটোখান পাবে। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×