somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী।(১)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের যাদের জন্ম পঞ্চাশের দশকে তাদের সামনে রাজনৈতিক ভাবাদর্শ হিসেবে বামপন্থা অনেকটা জায়গা জুড়ে। আমাদের যাদের যৌবনের সাথে সত্তরের দশক জড়িত তাদের বেশীরভাগেরই কোনো না কোনো ভাবে বামপন্থার সাথে হাত মিলিয়ে নিজেকে চেনার নানা ছোট বড় অধ্যায় আছে। আছে মৃত্যু জেলখানা অত্যাচার উচ্ছেদ----আছে স্বপ্নভঙ্গ হতাশা নেশা ----আছে ডুবে যাওয়া----আছে হারিয়ে যাওয়া--ইত্যাদি। অস্বীকারের উপায় নেই পাথেয় হিসেবে যে মূল্যবোধ-- আমাদের মধ্যে যারা পরবর্তীতে বেঁচে ছিলাম বা আছি তারা তা ঐ বামপন্থার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।

কিন্তু সময় বড় নির্মম এবং গতিময়।

প:বঙ্গে বামপন্থার কার্যকরী সূত্রপাত কম্যুনিস্ট পার্টির হাত ধরে । কিন্তু পন্থা অনুযায়ী প্রাক্‌স্বাধীনতা যুগে এই উপমহাদেশে জনপ্রিয়তার নিরিখে কংগ্রেসের সংগে কখনোই তার তুলনা করা যায়নি। খুব সীমিত জনভিত্তি নিয়েই তাদের ঐ যুগে কাজ করতে হয়েছিলো । ভারতবর্ষের মত বিশাল ব্যাপক এবং বিচিত্র একটা দেশে একটা মতবাদ নিয়ে কাজ শুরু করার আগে তার যে পরিমান তৃণমূল পর্যায়ের জরিপ সন্ধান এবং গবেষণার প্রয়োজন ছিলো তা তখন বা পরেও কখনো হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। একটি উপনিবেশে তখন কোন্‌ লড়াই প্রাধান্য পাবে তা নিয়ে ব্যাপক স্ববিরোধিতা দেখা গেছে । সম্ভবতঃ তা থেকে এখনো আজকের অসংখ্য কম্যুনিষ্ট দলগুলোর কেউই মুক্ত নয়। ফলতঃ তাদের কার্যকলাপ মাঝে মাঝে বুমেরাং হয়েছে বইকি।

সত্তরের দশক যেন দ্বিধা দ্বন্দ্ব বিদীর্ণতার দশক । যাকে বলা হয় নক্সাল আমল।

আমরা তখন সদ্য দাড়িগোফ গজানো তরুণ। কলেজে পড়ি। সকালে বিকেলে পাই মৃত্যুর খবর ।--- এই ওদিক দিয়ে যাস্‌ না ওখানে একটা বডি পড়ে আছে----হৈ হৈ করে হয়ে গেল কলেজ বন্ধ ---কাছাকাছি মার্ডার হয়েছে---ইত্যাদি। কে মরল, কোন দলের , কারা মারল----আমরা ভেতরে ভেতরে কাঁপতে থাকা পশুর মতো কিছুটা তৃপ্তি অথবা দুঃখ পাওয়ার চেষ্টা করতাম যখন শুনতাম কম্যুনিষ্টপার্টির কেউ মরেনি বা মরেছে। আমাদের মত ভাসমান শ্রেণীটি বুঝে উঠতে পারতামনা কীভাবে আত্মরক্ষা করা যায় । বিপদ চারপাশে--বোমা গুলি শ্রেণীশত্রু পুলিশ খোচর । রাত শুরু হতে না হতেই বোমায় কাঁপছে শহর। তার মধ্যে মানুষের আত্মরক্ষা করে করে ঘরে ফেরা---পুলিশের ধারালো চোখের সামনে দিয়ে নেহাতই অপরাধীর মতো। আমরা সাধারণতঃ পুলিশের মুখোমুখি হতে চাইতামনা। কারণটা আমাদের বয়স। তখন ঐ বয়সটাকেই যেন সন্দেহ করে বসেছে । তা ছাড়া আত্মরক্ষার তাড়নায় আমাদের অনেকের পকেটেই ছোট বড় চাকু থাকতো। পুলিশের মুখোমুখি বাধ্যত কখনো হয়ে গেলেই দেখা গেছে যে সারা গা টিপে টিপে সার্চ করতে। কখনো ইচ্ছা হলে তুলে নিত ভ্যানে। তারপর থানায় নিয়ে গিয়ে------। ফলে শহরের রাস্তায় পুলিশ দেখলেই গলি দিয়ে পালানো ছিলো আমাদের অভ্যেস। কেড্‌স জুতো পায়ে আমাদের অতর্কিত হরিণ গতির সংগে ভারী পুলিশের পারার কথা না। শহরে মধ্যে এটাই আমাদের সুবিধে ছিলো।

রাতের পর রাত কোনো শোক মৃত্যু দুঃস্বপ্ন এক জায়গায় বসে থাকেনি ।

আমরা আর কত দৌড়বো---আমাদের কি আর বাঁচা নেই---দম নেয়ার মতো বাতাস যে ক্রমে কমে আসছে ।---আর আমাদের স্বপ্নেরই বা কী হলো ? বিপ্লবের স্বপ্ন---কত জন যে কত ভাবে সেই স্বপ্ন দেখিয়েছে---তারা ছিলো আমাদের আদর্শ ---তাদের কথা কি মিথ্যে হবে! খুব করুণ মনে হলেও আমাদের মাথায় বাসা বাঁধা সরল সাদাসিদে স্বপ্নের খুব দ্রুত জলাঞ্জলী হয়ে গেল। রাষ্ট্রের সাঁড়াশী আক্রমনে সব ছত্রখান । এক কথায় প:বঙ্গের সক্রিয় নকসাল যুগের শেষ মোটামুটি ৭২এই । এই বিপ্লবের ডাক দেয়া হয়েছিলো যে ইস্তাহারের ভিত্তিতে তা চাক্ষুষ করতে আমার অন্ততঃ সময় লেগেছিলো পরের দুইটি দশক। কলকাতার ফুটপাতে পাওয়া গিয়েছিলো সেই তখনকার নিষিদ্ধ বস্তুটি। কিনে এনেছিলাম সেই মূল্যবান দলিলটি। সেটি পড়তে পড়তে বুঝতে পারছিলাম একটা ভয়াবহ মন্দার সুযোগ বুঝে একজন/বা কয়েকজন মানুষ কত হাজার হাজার মানুষের ক্ষতির কারণ হয়েছিলেন। হ্যাঁ উনি চারু মজুমদার। সংক্ষেপে "সি এম"। রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন সশস্ত্র না সংসদীয় --৪৭এর আগের ধারা চলবে, না ৪৭এর পর নতুন ধারা প্রয়োজন---কৃষি বিপ্লব না শ্রমিক কৃষক ঐক্যের বিপ্লব--বিপ্লবের জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজনে দা কুড়োল খুন্তি তীর ধনুক বর্শা বল্লম---এসব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে । তাতে প্রাণ যাবে। আর এইসকল মৃত্যু হবে শহীদের এবং তা অবশ্যই ঐতিহাসিক । ধর্মের যেমন পরজন্ম তেমনি রাজনীতির এই অমরত্ব। দলিলটি পড়ার পর আমার একটি দীর্ঘশ্বাস আমাকেই ব্যঙ্গ করে চলে গেল। আর হাজার হাজার বিদেহী মানুষের নিঃশব্দ আর্তনাদে ভারী চরাচর ছেড়ে আমি প্রকৃতই নিজের কাছ থেকে পালাতে চাইছিলাম।

যাক্‌ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের কম্যুনিষ্টদের ইতিহাস লিখতে বা বলতে চাইনা। তবে শিরোনাম যেহেতু "পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী"আমি ক্রমশঃ এই বঙ্গের তাদের শাসনে ফিরে আসবো। অবশ্য ভারতে কম্যুনিষ্টদের মধ্যে বঙ্গীয়রা একাই প্রায় ৮০ শতাংশ। ফলে-----।(ক্রমশঃ)





সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×