২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা
:
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী এ দিন
সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪
ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান
দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের
সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের
মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান
জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র
হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে।
বিভিন্ন অনুষদের ডীন
এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঐ সময়
উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার
দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা
ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ
কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের
সতর্ক করে দেয়। কিছু ছাত্র
ঐ সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের
দিকে দৌঁড়ে চলে গেলেও বাদ-
বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাঙ্গনে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ
হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের
বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।
উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস
নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানান
এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়
এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু
ছাত্ররা
ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময়
কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের
অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার শুরু
করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক
ছাত্রকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও
নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায়
ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় তাদের
বিক্ষোভ শুরু করে।
বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের
সদস্যরা আইনসভায় যোগ
দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাঁধা দেয়।
কিন্তু পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন
ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয়
তারা আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন
করবে। ছাত্ররা ঐ উদ্দেশ্যে আইনসভার
দিকে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ
দৌঁড়ে এসে ছাত্রা বাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল
জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ
ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া আব্দুস
সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সেসময়
নিহত হন। ঐদিন অহিউল্লাহ নামের
একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত
ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার
উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত
অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ
হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন
সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক
সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান
করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত
অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে।
ঐ সময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর
প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর
জানতে পেরে
মাওলানা তর্কবাগিশসহ
বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন
কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান।
গণপরিষদে মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার
দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ
দত্ত-সহ ছোট ছয়জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী
নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের
দেখতে যাবার জন্যে অনুরোধ করেন
এবং শোক প্রদর্শনের লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন। কোষাগার
বিভাগের মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ,
শরফুদ্দিন আহমেদ, সামশুদ্দিন আহমেদ
খন্দকার এবং মসলেউদ্দিন আহমেদ এই
কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও
নুরুল আমিন অন্যান্য নেতাদের অনুরোধ
রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার
বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
(উইকিপিডিয়া থেকে)