পদ্মার পাড়ে বাড়ি তার, জানতাম না, জানাশোনার ও বেশিদিন না, তবুও ভালোলাগে। ভালোলাগে তার কথাবলা, তার চলে যাওয়া,সব।
পরিচয় LinkedIn -এ, একটা মেসেজ, মেইল চেক করার পর দেখলাম, কেউ একজন, অপরিচিত, রিপ্লাই দিলাম, আবার মেসেজ, আমার আবার রিপ্লাই.... চললো মেসেজ এর আদান প্রদান। তারপর মেইল অ্যাড্রেসে মেইলে চালাচালি।
আমার কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেইল চেক করা, তারও কাজের মাঝে আমাকে লেখা। কাজগুলো আমার আর একঘেয়ে লাগেনা। বড়ো ভালোলাগে।
ফেসবুকে নাই শুনে বোধহয় বিশ্বাস করলেন না তিনি, পরে বুঝলেন হয়তো আসলেই নাই। মেইল হয়ে যায় অনেক,কিভাবে চ্যাট করা যায়? google talk । অবশেষে তাই হলো, নতুন ইউজার, ফোন দিলেন, আমার কথা শুনলেন, আমার শোনা হলোনা, বলছেন না। কয়েকবার বললাম, বলছেন না। রাগ লাগলো।
একসময় বললেন। আমার অবাক লাগছিলো, এরকম কেন স্বরটা? বাচ্চাদের মতো?
ছবি দেখতে চাইলেন, চিনতে পারছেন না, একটা ছবি দেখে বলছেন, তোমাকে খুব পরিচিত লাগছে।
দেখলাম তার ছবিও, আমার তখন মনে হলো, না,উচিত হয়নি দেখা, তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হতো, হয়তো সেই, তবে আমি নিশ্চিত না। এই অনুভুতিটা বোধহয় ভালো লাগতো।
মেসেজ- কি করো?
- লিখি,আপনি?
-ঘুমাবেনা?
-ঘুমাবো,এখন না। আপনি?
-পরে।
কদিন গেলো, এরকম।
------------------------------
একদিন খুব রাগ লাগলো,ফোন দিলাম, ধরলেন না, রেগে আর দেইনি।
সন্ধায় একটা অপরিচিত কল এলো,ধরতে পারলাম না, রাতে আবার এলো, তিনি ফোন দিলেন। কোথায় আপনি?
-হসপিটালে।
-কেন? কি হয়েছে? কেমন আছেন?
-ছোটখাটো একটা অ্যাক্সিডেন্ট। ল্যাব-এ।
-ভাইয়া,এরকম কেন হলো?আমি আর রাগ করবোনা।কোনদিন না।
-রাগ করেছো কেন?
-কেমন আছেন? আপনি ফোন ধরেন নাই, ফোন দেন নাই, তাই রাগ করেছি। সাবধানে কাজ করবেন না? এটা কেমন কথা?
-হুম, করবো।
-আচ্ছা। .....
রাতে ঘুমাবার আগে অনেক্ষন অপেক্ষা করে তবে ঘুমাতে যাই, যদি ফোন দেন, আমি না ধরতে পারি? উনার খারাপ লাগে...
কেন যে এত সাত-পাঁচ ভাবি!
-কি করো?
-কিছুনা। আপনি?[আমার হাতের কাজ ফেলে রেখে তার প্রতি আগ্রহ দেখাই]
-শুয়ে আছি।
-এই দুপুরে?
-হুম। কি করছিলে?
-স্নান থেকে এলাম, চুল শুকাই।
-ও,তবে শুকাও।
-আচ্ছা।
-রাখি?
-আচ্ছা।
-এভাবে 'আচ্ছা' বলতে নেই।এত সহজে মেনে নিতে নেই।
-আচ্ছা।
-কোথাও যাবে?
-বের হবো, একটা মাউস কিনবো।
-শুক্রবার?খোলা পাবে দোকান?
-আজ না হলে আর সময় নেই। বাকি দিনগুলোতে সময় পাওয়া যায়না।জানেনই তো।
-হুম। আমার জন্য একটা গ্লাস কিনে আনবে? আমার ওদিকে যাওয়া হচ্ছেনা।
-ভাবছিলাম জানতে চাইবো গ্লাস কিনবো কি না, বের হওয়ার সময় ফোন দিতাম।ওটা জরুরী।
-না না,কিনো না। আমিই কিনবো।
-আমি পারবো তো।দিতে পারবো।
-না,কথা শোনো।
-আচ্ছা।
-কখন বের হবে?
-একটু পর। রুমমেট ফোন দিলেই।
-আচ্ছা।সাজগোজ করো।
-না।
-কেন?
-ভালোলাগেনা।
-ও।
-রাখবো।
-রাখবা?
-হুম,যেতে হবে যে।
-আচ্ছা।
বেশ কিছু কিনলাম দুইজন মিলে,ফিরছিলাম। রিকশা থেকে নেমেই আমি আমার রুমমেট এর হাত ধরে একটা দোকানে যাচ্ছিলাম,নেমেই নিচে রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম, মুখ তুলেই দেখলাম, একটা মানুষ,তাকিয়ে।ঠান্ডা চোখ তাঁর। তিনি। দেখছিনা,অথচ আমার দিকে তাকানো একটা মানুষ,হাসলাম। তিনি হাসতে গিয়েও সেটা আটকে নিলেন।আমি চলে গেলাম।
আমার ভয় লাগছিলো। একসময় রাগ লাগলো, কেন এভাবে দেখা হলো? এরকম হওয়ার কথানা,কেন হলো? কেন হবে? কেন ওখানে দাঁড়াবেন?
মন খারাপ হলো প্রচন্ড।
ফিরে এসে ফোন দিলাম না।ভালো লাগছিলো না কিছুই।
রাতে কথা হলো,তার স্বভাব মতো কম কথা বললেন।আমি কেবল একটা মেইল করলাম।
ঘুমাচ্ছিলাম। ফোন এলো। বাসায় যাবেনা?
-যাবো। কাল। কাজ আছে। অনেক।
-ও। আচ্ছা।
-আপনি?
-কাল যাবো। বাসায় গেলে ফোন দিবেনা।
-অর্ডার?
-হুম।আমি না দেওয়া পর্যন্ত দিবেনা। মেসেজ না,ফোন না। মেইল ও না।
-কেন?
-তাই।
-আচ্ছা।
আজকে সে বাড়িতে, আমার সারাদিনের অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় তাঁর ফোন আসলো।যা তা বললো। বুঝলোইনা আমার খারাপ লাগছে।
একদম না। একটু পর রেখে দিলো,তাও ভালো দিলেন তো।
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে,খুব, ফোন দেওয়ার অনুমতি নাই।
আমার অপেক্ষা করতেই ভালো লাগে,সারাদিন ভাবি, কখন ফোন দিবেন,একসময় তো দিবেন, না দিলে তো পরদিন দিবেন,নাহলেও তার পরদিন। আমার এটা ভাবতেই ভালো লাগে।কেন যে!