somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***আশুরাঃ বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস***

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশুরা কি এবং কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে আমাদের অনেক মুসলিম ভাইদের মাঝে সঠিক এবং স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। আশুরা নিয়ে পত্রিকাতে বিশেষ সংখ্যা বের করা হয় আর তাতে ঘুরে ফিরে কারবালার কাহিনীটাই প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে লক্ষ্য করা যায়। আশুরা এমন একটি দিন যেই দিনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও গুরুত্ব দিয়েছেন কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় সেই সময় কিন্তু কারবালার ঘটনাটি ঘটে নি। অর্থাৎ, কারবালার ঘটনা আশূরার সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয় নয়। তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোন ঘটনাটি আশুরার সাথে সম্পৃক্ত?

“হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদীরা আশুরা’র দিনে রোজা পালন করতো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ এই দিনে রোজা রাখার তাৎপর্য কি? তারা বললোঃ এই দিনটির অনেক বড় তাৎপর্য রয়েছে, আল্লাহ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদের বাঁচিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তাঁর অনুসারীদের ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ রোজা রাখতেন আর তাই আমরাও রাখি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো বেশী নিকটবর্তী সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমাদের রোজা রাখার অধিকার বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরা’র রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকে এই রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন” (Muslim :: Book 6 : Hadith 2520)

ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনা পৌছালেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা রাখতো। তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এর জবাবে বলেছিলঃ “এইদিনে আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এবং ইসরাঈলের অধিবাসীদের ফেরাউনের উপর বিজয়ী করেছিলেন, তাই এই বিজয়ের সম্মানে আমরা এই দিন রোজা রাখি”। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুসার অধিক নিকটবর্তী”। এরপর তিনি এইদিনে রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (Bukhari :: Book 5 :: Volume 58 :: Hadith 279)

ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় পৌছালেন, ইহুদীরা আশূরা’র (১০ মহররম) রোজা রেখেছিল, তারা বললঃ “এই দিনে ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিজয়ী হয়েছিলেন,” এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, “মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয় উৎযাপনের অধিকার ইহুদীদের চেয়ে তোমাদের (মুসলিমদের) বেশী, তাই এই দিনে রোজা রাখ”। (Bukhari :: Book 6 :: Volume 60 :: Hadith 202)

এই হাদীসগুলোর আলোকে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি আর তাহল, আশুরা’র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয়। এই দিন (১০ মহররম) আল্লাহ তাআলা নাস্তিক ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিজয় দান করেছিলেন। যে ঘটনার বিবরণ আমরা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে পাই, যেমন: ফেরাউন নিজেকে রব বলে দাবি করেছিল আর আল্লাহকে অস্বীকার করেছিল, সে হামানকে নির্দেশ দিয়েছিল উচু স্তম্ভ বানাতে আর তাতে আরোহন করে দাম্ভিকতার সাথে বলেছিল কই আমরা তো মুসা’র (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহকে খুজে পেলাম না। সে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথে যে গোত্রগুলো ছিল তাদের সমুলে ধ্বংস করতে চেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিজয় দান করেছিলেন।

“ফেরাউনের সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্ববর্তীদের ধারা অনুযায়ীই তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন আর আল্লাহর আযাব অতি কঠিন।” (সূরা ইমরানঃ ১১)

“আমি ফেরাউনকে আমার সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে” (সূরা ত্বহাঃ ৫৬)

“ফেরাউন সে ছিল সীমালংঘনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়”। (সূরা দুখানঃ ৩১)

নাস্তিক ফেরাউন দাম্ভিকতার সাথে বলেছিল:
“ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি?” (সূরা আশ শোয়ারাঃ ২৩)

যার উত্তরে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেনঃ
“মুসা বলল, তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মর্ধবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা যদি তোমরা বিশ্বাসী হও” (সূরা আশ শোয়ারাঃ ২৪)

যদি তোমরা বিশ্বাসী হও – বিশ্বাস করাটা মানুষের স্বভাবজাত একটা বিষয়। বিশ্বাস ব্যতীত সে বেচেঁই থাকতে পারবে না। যেমনঃ সে মানুষকে মানুষ বলে বিশ্বাস করে, গরুকে গরু হিসেবে বিশ্বাস করে, গাড়িকে গাড়ি হিসেবে বিশ্বাস করে অর্থাৎ মানুষকে বিশ্বাস করতেই হবে যদি সে বিশ্বাস না করে তাহলে সে মানুষই নয়। ফেরাউনও এর ব্যতিক্রম ছিল না, যদিও সে দাম্ভিক, অহংকারী ছিল কিন্তু একদম ভিতরে সে আল্লাহ অস্বীকার করতে পারে নি। যার প্রমাণ আমরা পাই নিম্নোক্ত আয়াত থেকেঃ

“আর বনী ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া, যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত” (সূরা ইউনুসঃ ৯০)

দাম্ভিক, অহংকারী ফেরাউনের এই আকুতি তখন আর গ্রহণ করা হয়নি কারণ এর আগে তাকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে দাম্ভিকতার সাথে শুধু অস্বীকরই করে নি বরং যারা তাকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছিল তাদের হত্যা করার জন্যও সে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

ফেরাউনের এই কথার জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
“এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করেছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে”। (সূরা ইউনুসঃ ৯১)

আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে রেখেছেন যাতে করে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অবিশ্বাস করে তাদের জন্য নিদর্শন হিসেবে।
“আজ আমি তোমাকে (অর্থাৎ) তোমার দেহকেই বাচিঁয়ে রাখব, যাতে করে তুমি (তোমার এ দেহ) পরবর্তী (প্রজন্মের লোকদের) জন্যে একটা নিদর্শন হয়ে থাকতে পরো; অবশ্য অধিকাংশ মানুষই আমার (এসব) নিদর্শনসমূহ থেকে সম্পূর্ণ (অজ্ঞ ও) বেখবর। (সূরা ইউনুসঃ ৯২)

নিদর্শন দেখে মানুষ বুঝতে পারে আসল ঘটনা কি। যেমনঃ একটি খোলা মাঠে গরুর গোবর দেখে একদম অশিক্ষিত মানুষও বিশ্বাস করে এই মাঠে গরু ঘাস খেতে আসে। মহান আল্লাহ তাআলা নিদর্শন সমূহের বর্ণনা দিয়ে খুব সহজ করে মানুষকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির নিদর্শন দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয়কে আল্লাহ তাআলা একটি নিদর্শন হিসেবে রেখে দিয়েছেন যাতে করে মানুষ এথেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। অবশ্য অধিকাংশ মানুষই আমার (এসব) নিদর্শনসমূহ থেকে সম্পূর্ণ (অজ্ঞ ও) বেখবর – আজ আমাদের দিকে লক্ষ্য করলেই একথার তাৎপর্য একদম পরিস্কার ও স্পষ্ট হয়ে উঠে। আশূরার প্রকৃত তাৎপর্য হলো আল্লাহতে অবিশ্বাসী নাস্তিকদের পরাজয় আর আল্লাহতে বিশ্বাসীদের বিজয়ের দিন অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আকারে বললে বলা যায় আশুরা হচ্ছে বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস। অথচ আশুরার এই প্রকৃত তাৎপর্য থেকে আমরা সম্পূর্ণ (অজ্ঞ ও) বেখবর হয়ে রয়েছি। আশুরার এই ঘটনা থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পর কারবালার ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু নাজানার কারণে আশুরা আসলেই আমরা কারবালার ঘটনা বিশ্লেষণ করতে লেগে যাই। অথচ এই দিনটি যে বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস আর নাস্তিকদের পতন দিবস সে সম্পর্কে আমাদের কোন বোধদয়ই হয় না।
“মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ রোজা রাখতেন” আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারা সাহাবীদের বললেন, “মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয় উৎযাপনের অধিকার ইহুদীদের চেয়ে তোমাদের (মুসলিমদের) বেশী, তাই এই দিনে রোজা রাখ”

আশূরার এই প্রকৃত ঘটনা মুসলমানদেরকে আরো শক্তিশালী করবে, তাদের বিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে দিবে আর আল্লাহকে অবিশ্বাসকারীরা নিদর্শন থেকে শিক্ষা নিবে। তবে আশুরাকে কারবালার ঘটনা দিয়ে যেভাবে শোক পালন করা হয় আর কিছু গোষ্ঠী যেভাবে মাতম করে যা সুস্পষ্ট বিদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবীরা এভাবে আশুরা পালন করেন নি। আর যে কোন শোক তিনদিনের বেশী পালনের অনুমতি ইসলামী শরীয়া দেয় নি। অর্থাৎ যেদিন মারা যাবে সেদিন থেকে নিয়ে তিনদিন শোক পালন করা কিন্তু এই তিনদিনের মধ্যেও শোকে মাতম করে জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা, রক্ত বের করা ইসলাম শিক্ষা দেয় নি।

উম্মে আতিয়া কর্তৃক বর্ণিত, মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদেরকে তিনদিনের বেশী শোক করতে নিষেধ করা হয়েছে শুধুমাত্র স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের জন্য চার মাস দশদিন শোক পালন করতে হয়। (Bukhari :: Book 7 :: Volume 63 :: Hadith 254)

আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহ’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী আল্লাহ এবং শেষবিচারের দিনের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন মৃত ব্যক্তিদের জন্য তিনদিনের বেশী শোক পালন না করে তবে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর শোক ব্যতীত (Muslim :: Book 9 : Hadith 3549)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত বর্ণিতঃ “যে ব্যক্তি গালের উপর চপেটাঘাত করল এবং পকেট ছিঁড়ে ফেললো এবং জাহিলিয়াতের ডাক ডাকল সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। (বুখারী, ফতহুল বারী ৩/১৬৩)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বিলাপকারিণী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে তাহলে কিয়ামতের দিন যখন তাকে উঠান হবে তখন তার গায়ে আলকাতরার পাজামা এবং পিচের জামা পরান থাকবে।” (মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৪)

মৃত ব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশী শোক পালন করা নিষেধ আর বিলাপকারীদের প্রতি এই বলে সতর্ক করা হয়েছে যে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। হযরত উমর (রা) শহীদ হয়েছিলেন আর তাঁর মর্যাদা অনেক বেশী কিন্তু আমরা কোন শোক পালন করি না কারণ এটা সুন্নাহতে নেই। উসমান (রা), আলী (রা) শহীদ হয়েছিলেন তাদের জন্যও আমরা শোক পালন করি না অথচ তাঁদের মর্যাদাও অনেক বেশী। ইসলামী শরীয়াতে মৃত ব্যক্তির মারা যাওয়ার দিন থেকে নিয়ে তিন দিন পর্যন্তই শোক এরপরে কোন শোক নেই। মুসলিম জাতি শোকের জাতি নয়, এরা সাহসী জাতি, বিশ্বাসী জাতি। শোক পালন করার জন্য আমাদের দেশে যতপ্রকার পন্থা চালু আছে সবই বিদআত। আর কারবালার ঘটনাটিকে আশুরা’র সাথে সম্পৃক্ত করে যা করা হয় তা মোটেই ঠিক নয়। কারবালার ঘটনার সাথে আশুরা’র কোনই সম্পর্ক নেই। কাজেই এই বিষয়ে যদি কেউ ভুল ধারণায় নিমজ্জিত হয় তার ভুল ভেঙ্গে দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আশুরা’র দিন বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস আর নাস্তিকদের পতন দিবস। এই বিজয় দিবস উৎযাপনের সুন্নাহ হলো দুইটি রোজা রাখা। নয় মহররম এবং দশই মহররম দুইটি রোজা রাখাই হচ্ছে সুন্নাহ। তবে এই রোজা দুইটি বাধ্যতামূলক নয়, কেউ ইচ্ছা করলে রাখতে পারে আবার কেউ ইচ্ছা করলে নাও রাখতে পারে। আর রাখলে তাতে অনেক তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।

“আয়শা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। কিন্তু যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়ে গেল তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন যদি কেউ রাখতে চায় রাখতে পারে আবার কেউ যদি রাখতে নাও চায় নাও রাখতে পারে।”(Muslim :: Book 6 : Hadith 2502)

আশুরা’র রোজাটি যেহেতু ইহুদীরাও রাখতো তাই তাদের সাথে ব্যতিক্রম করার জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় এবং দশ মহররম রোজা রাখার নিয়ত করেছিলেন,
“আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যদি আমি পরবর্তী বছর জীবিত থাকি তবে আমি অবশ্যই নয় তারিখের(মহররম) রোজাটিও রাখব।” (Muslim :: Book 6 : Hadith 2529)

ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয়ের আশুরার এই ঘটনাটি মহাগ্রন্থ কুরআনের বড় বড় অনেক সূরা গুলোতে মহান আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন। তাই আশুরার ঘটনাটিকে কারবালার সাথে সম্পৃক্ত করা কোনভাবেই উচিত নয় বরং তা কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী। কারবালার ঘটনাটি নিয়ে আমরা অন্য সময় আলোচনা করতে পারি কিন্তু আশুরাকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে নয়।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের অজ্ঞ ও বেখবর হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমরা যেন প্রকৃত সত্য অনুধাবন করে সেই মোতাবেক জীবনকে গড়ে তুলতে পারি সেই তৌফিক, মহান আল্লাহ আমাদের দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৩২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×