দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ পাস করেছে। এ পরীক্ষায় মোট ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এতে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, দ্বিতীয় বিভাগে ৩৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং তৃতীয় বিভাগে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল ঘোষণা করে।
গত ২১, ২২ ও ২৪ নভেম্বর বিদেশে ৫ টি কেন্দ্রসহ সারাদেশে ৫ হাজার ৩৫৭টি কেন্দ্রে থেকে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ১৮০ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৮৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬ জন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৯ জন ছাত্র এবং ৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৫ জন ছাত্রী।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ধর্ম, পরিবেশ পরিচিত বিজ্ঞান ও পরিবেশ পরিচিতি সমাজ- এ ৬টি বিষয়ে পরীক্ষা হয়। ১৬লাখ ২০ হাজার ৫৪ জন সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৭ লাখ ৫১ হাজার ৪৬৫ জন ছাত্র এবং ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৯ জন ছাত্রী। প্রথম বিভাগে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৭ জন, দ্বিতীয় বিভাগে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ জন এবং তৃতীয় বিভাগে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৯৮৭ জন উত্তীর্ণ হয়।
সর্বোচ্চ পাসের হার বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায়। এখানে ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ পাস করেছে। সর্বনিম্ন পাসের হার ব্রাক্ষ্মণবাডিয়ার সরাইল উপজেলায়। এখানে ৬০ দশমিক ৯৭ শতাংশ পাস করেছে।
সারাদেশে ৬ টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার মনোহরদী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া শিকদার, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৯৩। দ্বিতীয় হয়েছে ঝিনাইদাহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আড়াপাড়া শিবনগর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বীপান্বিতা তিথি, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৯২। আর তৃতীয় হয়েছে টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার এক মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাসিন তানভির, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৮৯।
পিটিআই সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৯ দশমিক ২১ শতাংশ, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ব্রাক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়ে পাসের হার ৬২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, আনন্দস্কুলে হার ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং অন্যান্য বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে পাসের হার ৮৯ দশমিক ০২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৯১ দশমিক ৩২ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৮৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সারাদেশে ছয়টি বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকার স্কুলগুলো ভালো ফলাফল করেছে। শীর্ষ দশের মধ্যে প্রথম থেকে চতুর্থ স্থানেই রয়েছে এ বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিভাগের প্রথম স্থানে রয়েছে ভিকারুন নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এখান থেকে প্রথম বিভাগে পাস করেছে ১৫১৬ জন শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় বিভাগে ৫ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম বিভাগ পেয়েছে ১১২৬ জন একং দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছে ৩৩ শিক্ষার্থী। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এখান থেকে প্রথম বিভাগ পেয়েছে ৯৬২ জন একং দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছে ৩ শিক্ষার্থী। চতুর্থ স্থানে রয়েছে মতিঝিলের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল। এই বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগ পেয়েছে ৪৯৮ জন এবং দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছে ৯ শিক্ষার্থী। পঞ্চম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল ও কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম বিভাগ পেয়েছে ৪২৫ জন এবং দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৩ শিক্ষার্থী। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ষষ্ঠ, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা মডার্ণ স্কুল সপ্তম, একই বিভাগের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অষ্টম, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নবম এবং খুলনার খুলনা জিলা স্কুল রয়েছে ১০ম স্থানে।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৩৭ স্কুলে কেউ পাস করেনি। এদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৯ টি, রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯০টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২০টি, ব্রাক বিদ্যালয় ৩৩টি, শিশুকল্যাণ বিদ্যালয় ৮টি, আনন্দস্কুল ১০৩৬টি এবং অন্যান্য স্কুল ২৯১টি।