বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম মোবাইল কোম্পানী ওয়ারিদ টেলিকম তার ব্যবসার ৭০% ষ্টেক ভারতের ভার্তী এয়ারটেলের কাছে বিক্রীর সিদ্বান্ত নিয়েছে। আবুধাবি ভিত্তিক ধাবি গ্রুপের এই সিদ্বান্ত এমন একটা সময় আসল যখন দেশে এন্টি ভারতীয় সেন্টিমেন্ট এক্সপোনেন্টাল গতিতে বেড়ে চলছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন আগামী মাসে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আশাকরছে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের ফলে দু’দেশের মধ্যে বানিজ্য ঘাটতি, পানি বন্টন সহ যুগ যুগ ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোর একটা সন্তোষজনক সমাধান পাওয়া যাবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচকরা বলছে, এ সফর আসলে ট্রানজিট সহ ভারতীয় দাবীসমূহের কাছে বাংলাদেশের দাসত্ব চূড়ান্ত করার সফর। ঠিক এ সময় ভারতী টেলিকমের কাছে ওয়ারিদের স্টেক বিক্রী সাধারণ বাংলাদেশীদের মনে ভারতের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে তুলতে ক্যাটালিষ্ট হিসাবে কাজ করতে বাধ্য। বাংলাদেশের ওয়্যারলেস মার্কেটে ওয়ারিদের আগমনও বিতর্কের বাইরে ছিলনা। অভিযোগ আছে জিয়া পরিবারের অন্যতম কর্নধার আরাফাত রহমান ককো এবং তাদের পারিবারিক বন্ধু মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর যৌথ স্পনসরে বহুমূখী লোভ দেকিয়ে ওয়ারিদ টেলিকমকে বাংলাদেশে আনা হয়, যার বিনিময়ে এই দুই মধ্যসত্ত্বাভোগী হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ ডলার। বলা হয়ে থাকে রাজনীতির এই দুই শক্তিশালী লবিষ্ট বিনিময়ে ওয়ারিদকে দেয় সরকারের উচু পর্য্যায় হতে ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার নিশ্চয়তা। যেহেতু ককো-ফালু চক্র এখন ক্ষমতার বাইরে, প্রশ্ন উঠতে পারে এ জন্যেই কি কোম্পানী তার ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে? বাংলাদেশের ওয়্যারলেস মার্কেট বিশ্ব বিনিযোগ বাজারে খুবই আকর্ষনীয় বাজার, যাতে প্রবেশের জন্যে আগ্রহী পার্টির সংখ্যাও কম নয়। ঠিক এ মুহুর্তে এ ধরনের একটা লাভজনক বিনিয়োগ হতে নিজদের গুটিয়ে নেয়ার কারণে ওয়ারিদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগতে বাধ্য। কারণ যাই হোক না কেন একটা বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে, অর্থনীতির নয়া ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় খুবই কমন এবং লেজিটিমেট পদক্ষেপ। বিশ্ব অর্থনীতির ব্যারোমিটার ওয়ালষ্ট্রীটকে যারা খুব কাছ হতে মনিটর করেন তাদের জানা থাকার কথা আন্ত-কোম্পানী মার্জার, স্টেক ক্রয়-বিক্রী পূঁজিবাদী সমাজের বৈধ এলিমেন্ট। এ বিচারে ওয়ারিদের শেয়ার বিক্রী আমাদের মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়। কিন্তূ না চাইলেও মাথা ব্যথার প্রসংগটা আসতে বাধ্য অন্য কারণে, কারণ যাদের কাছে বিক্রী করা হয়েছে তারা ভারতীয়। বাংলাদেশের বয়স ৩৮ বছর, সময়ের ব্যাপ্তিতে বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক জায়ান্ট ভারত তার প্রতিবেশীদের কাছে তার ব্যবসায়িক সততা প্রমান করতে পারেনি। বাংলাদেশের সাথে এই দেশটির বানিজ্য ঘাটতি আকাশচুম্বি, পাশাপাশি সীমান্ত সূবিধা নিয়ে দেশটি বাংলাদেশকে বানিয়েছে তার চোরাই মাল বিপননের স্বর্গভূমি। বাংলাদেশের ভারী এবং হাল্কা শিল্পের ফাউন্ডেশন গুড়িয়ে গেছে ভারতীয়দের অন্যায়, অবৈব ও অসম বানিজ্য নীতির কারণে। এ মুহুর্তে আমাদের টেলিকম্যুনিকেশন মার্কেটে ভারতীয়দের প্রবেশ কেবল পূঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখার অবকাশ নেই।
মন্ত্রীসভার সদস্য এবং নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন কথিত বিনিয়োগের সন্ধানে। এমন একটা সন্ধানী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটা কোম্পানী কেন এ দেশ হতে লাভজনক ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছে তা তদন্তের দাবি রাখে। কথিত আছে প্রধানমন্ত্রীর তনয় বিদেশে বসে বাংলাদেশ সরকারের মাসিক বেতন-ভাতা ভোগ করে লবি করছে সরকারের হয়ে। অভিযোগ আছে তার লবির মূল লক্ষ্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করা। ওয়ারিদ-ভার্তী ডিলে অদৃশ্য কোন ভূতের হাত ছিল কিনা তা যাচাই পূর্বক এই ডিল এপ্রুভ করার জন্যে বাংলাদেশ টেলিকম্যুনিকেশনস্ রেগুলেটরী কমিশনকে অনুরোধ করব।
Visit: http://www.amibangladeshi.org