একবার দল বেধে এক ক্লাসমেটের বাসায় গেলাম। সেখানে ওর পিসিতে একটা মজার গেইম দেখলাম। পেপার বয় সাইকেল চালিয়ে চালিয়ে পেপার ছুড়ে মারে। পেপারের বাড়ি খেয়ে একেকজনের একেকদশা । দেখতে অনেক মজা লাগত। কিন্তু ধরতে সাহস পেতামনা কারণ কম্পিউটার নিয়ে আমার কোন জ্ঞানই ছিলনা। যদিও স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা নামে একটা ক্লাস ছিল, কিন্তু সেই ক্লাস গুলা খেলার মাঠেই কাটত। তাই যখন বন্ধুরা কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া করত, তখন ওদেরকে অনেক জ্ঞানী আর নিজেকে অনেক মূর্খ মনে হত (এখনও মনে হয়)।
যাই হোক অনেক চিল্লাচিল্লীর পরে আব্বু বলল আমার এসএসসির পরে একটা কম্পিউটার কিনে দিবে। এর পিছনে অবশ্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল আমাদের এক আংকেলের, যিনি আব্বুকে বর্তমান যুগে কম্পিউটার জ্ঞানের অপরিসীম গুরুত্বের কথা সাফল্যের সাথে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর পরোক্ষ ভূমিকা ছিল আমার আপুর এইচএসসিতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষা নেওয়া।
অবশেষে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পরে একদিন আইডিবি ভবনে গিয়ে অর্ডার দিয়ে এলাম। ইউপিএস সহ সব মিলিয়ে ৪৫০০০টাকা লাগলো (২০০১ সালের ঘটনা)। পরদিন বাসায় পিসি এনেই আর তর সয়না। অনুমানের উপর ভিত্তি করেই সবগুলো ক্যাবল লাগিয়ে ফেললাম। কিন্তু স্টার্ট বাটনে পুশ করলে কিছু হচ্ছিলনা। রাতে চারতালার খোকন ভাইয়াকে ডেকে আনলাম। উনি কানেকশন চেক করে দেখলেন সব ঠিকই আছে। কিন্তু ইউপিএসের সুইচ অন করা হয় নাই। খোকন ভাইয়া এমএসওয়ার্ডের একটা পেজ ওপেন করে কি বোর্ডের উপর খালি আংগুল গুলা একটু উঠানামা করতেই দেখি কি সুন্দর লেখা হয়ে গেল ।
আইডিবি ভবনের ঐদোকানটাতে পিসি কিভাবে অন , অফ করতে হয় আর কিভাবে ফোল্ডার/ফাইল ওপেন/ক্লোজ করতে হয় তাই শিখিয়ে দিয়েছিল। ঐ টুকু জ্ঞান নিয়েই আমি বাসার সবার উপর মাতবরী করতে লাগলাম । নতুন পিসির ঝকঝকে পর্দায় রোড র্যাশ খেলতে অসাধারণ মজা লাগত। ফার্স্ট হই আর না হই, পুলিশ কে মারার মধ্যেই সবচেয়ে মজা পেতাম। এনএফএস ২ খেলতে গিয়ে বাক নিতে নিতে আমি নিজেও কাত হয়ে যেতাম। এইজ অফ এম্পায়ার তো অনেক দিন বুঝতেই পারিনাই। মানুষ নিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ বাঘ/সিংহ ধরে খেয়ে ফেলত। আর ভার্চুয়াল কপ, হাউজ অব ডেড খেলতে গিয়ে তো উত্তেজনায় কাপতাম। ভিডিও সং গুলা প্লে করে অবাক হয়ে দেখতাম যে একটা জিনিসে কত কিছু করা যায়।
আমার সেই পিসিটা এখনও আছে তবে নতুন র্যাম আর গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো হয়েছে। হার্ডডিক্স এখনও সেই ৩০ জিবিই চলছে। মাঝে অবশ্য ঐটার উপর দিয়ে অনেক ঝড় বৃষ্টি বয়ে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা বলি, বাসায় সারাদিন গেম খেলতাম বলে একবার আব্বু মনিটর ধরে আছাড় দিয়েছিল। তেমন কিছু হয়নাই শুধু স্ক্রীনের মাঝে একটা ছোট দাগ পড়ছে।
বিদ্র: ছবিটে অফিসের পিসি (এখন যেটাতে ব্লগিং করি )
লেখা অনেক বড় হয়ে গেল, তাই দুঃখিত