somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় আমাদের প্রজন্মের গৌরব

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজয় আমাদের প্রজন্মের গৌরব
সৈয়দ আফসার
না-কিছুই বলবো না। কথা বলার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। ওই যে আমি দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছি সকলের হেঁটে যাওয়া, আলোছায়া। হেঁটে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু পথ আমাকে ছুঁতে পারেনি, ওই যে হেঁটে যাবাব পর আমি যা পেলাম সারি-সারি গাছের প্রেম, পাতাদের আসক্তি… চারপাশ নিয়ে উড়ছে যে বাতাস, গাছপালার শ্বাস তাকে কি আমরা ধরতে পেরেছি? আমাদের শত আর্তনাদ নীরব সাক্ষী। শুধু জেনেছি গাছের নিচে বসে গাছপাতার গান শুনলে নাকি কানের অসুখ সারে।যাবার রাস্তা ধরে কেউ যদি যেতে চায়, দেখতে চায়, জানার আগ্রহ দেখায় আর কতদূরে… আর কতটুকু গেলে দেখা পাবো ‘বাড়ি নাম্বার ৩২’ তাঁকে যাবার রাস্তা বাতলে দেবে সব পথিকের আগে…

জানি বাকি পথ হাঁটলে সেও মনে মনে এঁকে ফেলবে সবমায়াজাল, থাকবে না পা-হাঁটা পথের গ্লানি…। চারপাশে ‘সামাজিক দুঃখ আছে’ জেনে দীর্ঘশ্বাস টেনে সামলাচ্ছি গ্লানি… তোমরা কি বলতে পারো, আমার গ্লানিমুক্তির শব্দগুলো কোথায় বাজে? নীরবতার শৃঙখল পরে যেখানে আত্নচিন্তার ঘ্রাণ পাওয়া যায়, সেখানেই হায়ানের থাবা। আজো আমার মনের দরজা জানালা একা একা কষ্ট পায় গোপনে। সকলেই চায়, নিজের মতো হউক সুখের নগর।

পূর্বসূরীদের বলা-কওয়ার ব্যবধান যেন মৃত আত্নার গান। দীর্ঘশ্বাস বিগত দিনের মতো উড়ে যাচ্ছে না, ছায়া হয়ে নিজের সাথে মিশে আছে আত্নগরিমায়। অনুতাপ পরিতাপের ভাষা জপে আস্থায় ছানিপরা চোখে। তখন যদি জন্ম হত আমার, আমি কি লিখতে পারতাম সময়ের যত ভয়, যত অশুভ ব্যবধান? আবার যখন টেনে নেই শ্বাস, সব শ্বাসেরই থাকে আলাদা আলাদা মুগ্ধসঞ্চারণ, লেগে যায় আঘাত। ডিসেম্বর মাস ইংরেজি বছরের শেষ মাস। এই মাসকে খিষ্টানরাও ভাবে তাদের প্রিয় একটি মাস। ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস।একটি ধর্মকেন্দ্রীক।অন্যটি জাতীয়কেন্ধীক। ডিসেম্বর এলেই গর্বে ভরে ওঠে মন, ঠোটের ফাঁকে ফাঁকে জমে জমানো উচ্ছ্বাস। এইমাসেই চলে আসে মৃদুশীতের আমেজ দূর্বাঘাসে ফুটে হালকা জলফল, হাট বাজারে মিশে থাকে শীতসবজিরঘ্রাণ। সেসবই একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে ভাবায়। গাছ-লতাপাতা, নদী-জল-ডোবা সবই এক, তবু মানুষের মাঝে এতো ব্যবধান… একই আবহাওয়া থেকে মানুষ, একই পৃথিবীর অক্সিজেন গ্রহণ করে, তবু মানুষই মানুষের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে। বাঙালির এই মাস ব্যবধান ভাঙার মাস, বিজয়ের মাস। এই দিন যে আনন্দ নিতে জানে না কবির ভাষায় সে আজন্ম কৃতদাস থেকে যায়। সমস্ত শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাঁরা এই দিনটি আমাদের
সামনে হাজির করেছিলেন, তাঁরাই মহিয়ান হয়ে উঠেছেন। আমাদের অহঙ্কার হয়ে উঠেছেন। আর অনেক কিছু না-পাবার বেদনা তো আমাদের আছেই।

সেসব গোপনকথা, দাহকথা, প্রেম-প্রকৃতি-কথা কেউ লিখেন কবিতায়, কেউ গানে গানে বলে যায় মনের হাজারো অস্ফূটকথা, আর যে জন জনতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন খেটে খাওয়া মানুষের কবিতা, কাজ থেকে ছাঁটাই করা মানুষের কবিতা, আত্নবোধের কবিতা, বাঙালি জাতির ভেদাভেদের কবিতা, বাঙালি জাতির মুক্তির কবিতা, সুষমা-সমতার কবিতা…‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ তিনিইতো হাজার বছরের বাঙালির শ্রেষ্ঠ কবি। যার আহবানে সাড়া দিয়ে পুরো বাঙালি জাতি তাঁর ধর্ম-বর্ণ-বৈষম্য ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ছিল! কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য মরণপণ লড়াই করেছেন, শহীদ হয়েছেন, যে মা-বোনেরা সম্ভম হারিয়েছেন তারাতো সেই কবিতাটিরই অংশ। সে সব ভাবলেই মনভরে উঠে।

ফিরতে চাই গর্বে তিনক্রোশ হেঁটে দূরপাহাড়ের চূড়ায় তুলে রাখি বিজয়ের সুখ, মুঠো ভরে তুলে আনি ধুলো; নাক বরাবর রেখে অনুভব করি প্রতিটি কণা যেন ডাকছে... বলছে গায়ে মেখে দেখ কি অনুভূতি জাগে তোর প্রতিটি শিরায়। জানিস্ আমি উড়তে পারি, আমি পায়ে পায়ে হেঁটে যেতে পারি; ‘আমি রোদে পুড়ি বৃষ্টিতে ভিজি’ যখন তোদের স্পর্শ আমার গায় ছুঁয়ে যায়; আমার ভালো লাগে খুব যেন ‘ফুরফুরে থাকে মেজাজ শরীফ’ আমার শরীরে বাঁধা সব প্রাণির সহজজীবন। আমার শরীর ছিঁড়ে-খুঁড়ে উৎপাদন হয় তোদের বেঁচে থাকার সকল আয়োজন। এই বিদেশ-বিস্তৃইয়ে এমনই কথা কয় জন্ম-ভূমি, আমাদের কানে কানে

সব আশ্চর্য কথা আমার কানে বাজে; কাঁচামাটির ঘ্রাণে কোন অস্পষ্টতা নেই, আছে সুখ আর সুখ। না-বলা যত কথা যেন অগ্নিবীণা থেকে হয়ে যায় বিনীত আরজ। জন্মের পর যা কেটে দিলেই বাঁচি, দাদীমাই এই মাটিতে পুঁতে রেখেছেন আমার নাড়ি, এই মাটিতেই একদিন হবে চিরস্থায়ী আবাস। তখনই ড. ভূপেন হাজারিকার একটি গান কথা আমাকে আলোড়িত করে, ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে গেয়ে যাই গান— ‘মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি(আমি) মানুষ পেতে পারে না...।’

মানুষ আছে, থাকবে, প্রকৃতি যেভাবে চায় ঠিক সেভাবেই। আমার মরে যায় প্রকৃতির নিয়ম মেনে, মরার সাধ হয় না কারোই; তবুও সে স্বাদ নিতে হবে সবার। পালানোর যে কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু সব মৃত্যু যে মেনে নিতে পারে না সবাই। কোন মৃত্যু একটি জাতির ললাটে কলঙ্কের দাগ লেগে যায়। যে কবি অমর কবিতার মন্ত্রে বাঙালি জাতি পেল তাঁর বাক্ স্বাধীনতা, ভূখণ্ড, লালসবুজ পতাকা, পেল শহীদের রক্তে ভেজা বিজয়ের মালা। কিন্তু জাতি আবার দেখল ৭৫-এর ১৫ই আগষ্ট ইতিহাসের নির্মম ঘটনাই ঘটল। তখনও জন্ম হয়নি আমার! কলঙ্কের ভাগ নিয়েই জন্ম হল আমার। কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে নিস্পাপ রাসেলসহ সপরিবারে খুন হলেন হাজার বছরের কাঙ্খিত পুরুষ, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেইদিন থেকে বাঙালি জাতি পূর্ণ বিজয়ের স্বাদ হারিয়ে ফেললো। দীর্ঘ ২১ বছর পর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ডিঙিয়ে (গত ১৯শে নভেম্বর ২০০৯) দীর্ঘ ৩৪বছর অপেক্ষার পর জাতির জনকের বিচার পেল জাতি। তাই এবাবের বিজয় দিবস আমাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিজয়। আজ এই বিজয়ের মাসে আরো একটি বিজয় আমাদের অর্জন করার প্রতীজ্ঞা করতে হবে; যারা আমাদের বাকশক্তি কেড়ে নিতে চেয়েছিল, পতাকা কেড়ে নিতে সাহায্য করেছিল, যারা আমাদের পরাধীন রাখতে চেয়েছিল, বুদ্ধিজীবি হত্যায় সাহায্য করেছিল, সেই সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলার মাটিতে যে দিন শেষ হবে; সেদিন বাঙালি জাতি পাবে তাঁর পূর্ণ বিজয়। আমরাও পাবো পুরো বিজয়ের স্বাদ। তখনই এ বিজয় হবে আমাদের পূর্ণ গৌরবের বিজয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৮
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×