somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে ছিলো ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোন প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করিবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।’

তবে ১৯৭৭ সালে আনা সংশোধনীতে বলা হয়, ‘ জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যোক নাগরিকের থাকিবে।’ এছাড়া, ৭২ এর সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বলা ছিলো ‘ ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কতৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে। পঞ্চম সংশোধনীতে এ অনুচ্ছেদটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

১৯৭২ সালের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে আমাদের জাতীয় পরিচিতির ব্যাপারে বলা ছিল ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ তবে পঞ্চম সংশোধনীতে এ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধনীতে বলা হয় ‘(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। (২) বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবে।’

২.
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ‌'র লালসালু উপন্যাসের একটা লাইন আছে- ধর্মের চাইতে আগাছা বেশি, শস্যের চাইতে টুপি বেশি। এখানে ধর্মের সাথে আগাছার তুলনা আর ফসলের চাইতে টুপির প্রসঙ্গ উপস্থাপনের একটা তাৎপর্য আছে। আমাদের ধর্মকে এখানে লেখক ধানগাছে প্রোথিত করেছেন। ধানগাছ অথবা যে কোন শস্যই তার বীজ অবস্থা থেকে বিকশিত হবার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পদ্ধতি মেনে চলে। তার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন পারিবেশের প্রয়োজন হয়। ধর্মও তাই। আমাদের ভূখন্ড ধু ধু মরুভূমি অথবা হু হু ঠান্ডার দেশ নয়। ফলে এখানকার ধর্ম তার বৈশিষ্ট্যে আলাদা হবে। সেই ধর্মকে বাদ দিয়ে আগাছার চাষ করবার চেষ্টার সমালোচনা-নিন্দা করেছেন লেখক। কারণ ধর্ম মানুষের জন্যই এবং তা মানুষের জীবন যাপনের একটা অংশ। সবার আলাদা এবং নিজস্ব ধর্ম থাকবে। সেই ধর্মকে আগ্রাসী করে তোলার আয়োজন চলছে-যা আসলে ধর্মের মূলভাবকেই ধ্বংস করে ফেলছে। আর ফসল হচ্ছে অন্ন। সেই অন্নের সংস্থান-সবার জন্য অন্নের নিশ্চয়তা-সেই অন্নের যথাযথ বন্টনই ধর্ম। কিন্তু তার চাইতে টুপি বেশি। যার অন্ন নাই-ফসল নাই তার মাথায়ও টুপি আছে। আমাদের সমাজের চিত্রটা তা-ই। এর শুরু কবে থেকে সেই আলোচনা অনেক লম্বা হবে, কিন্তি বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম এখন কেবল পোশাকে আর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ধর্ম যে কেবলই আচার অথবা জীবন দর্শন তা আর রইলো না। ধর্ম প্রতিপক্ষ তৈরির মাধ্যমেই নিজেকে জাহির করতে শুরু করলো। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শেকড় বাকড় এখন বহুদূর বিস্তৃত। জনগণের একটা বিশাল অংশ এই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত।

৩.
আমাদের ভূখন্ডের ইতিহাসে ধর্ম আছেই। ধর্মীয় পরিচয় শাসকদের প্রধাণ হাতিয়ার এবং স্ব স্ব ধর্মের বিস্তার প্রধাণ উদ্দেশ্য ছিল। দীর্ঘ একটা সময় ধরে ইংরেজ শাসন এই বিষয়টিকে বুঝতে পারে এবং তাকে উস্কে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল এই ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করবার সংগঠিত প্রয়াস। সে জন্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করাবর পরবর্তী সময়ের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ মনন গড়ে তুলবার পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন-আয়োজন না থাকায় গোকূলে আবার সেই ধর্ম নয় আগাছাই বেড়ে উঠতে থাকে। সেই আগাছা এখন মহিরুহু আর তার বিষ বাতাস অথবা গন্ধম ফল খেয়ে অসংখ্য মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত-অসহায় এবং হিংস্র হয়ে উঠছে। আইন করে এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন-বাতাবরণ না থাকলে সমূলে এই আগাছা উৎপাটন করা সম্ভব হবে না। টুপি নয় অন্নের নিশ্চয়তা হোক আগে-এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কোন মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র প্রার্থণার জন্য নয়, তা সামাজিক কল্যাণেও ব্রত হোক। সিডরের মতো, অথবা ক্ষুৎপিড়ীত শিশুর অন্নের সংস্থানও করুক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার আমাদের ইতিহাসে কেবলই রক্ত, হিংসা আর কান্না বয়ে এনেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৩
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×