somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেশার কবলে পথশিশুরা?

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাখো পথশিশুর যেন একমাত্র বিনোদন মাদক
পথের ধারে জীবন তাদের
পথই খেলাঘর,
পথের ধুলোয় মাখামাখি
রোদ বৃষ্টি ঝড়..
পৃথিবীটা ধূসর কেবল
ছোট্ট চোখের মাঝে
হৃদয় ভরা ভালবাসা
দেয়ার কি কেউ আছে....?
সুন্দর এ পৃথিবীতে দুঃখ ও বেদনা নিয়ে যাদের জন্ম। কষ্ট ও সহিঞ্চু সংসারের সংগ্রামী যোদ্ধা যারা। মায়ের স্নেহ বাবার আদর সোহাগ বোঝার আগেই শুরু যাদের যুদ্ধ । বাসা বাড়ী,কল-কারখানা হোটেল-রেষ্টুরেন্ট,অফিস আদালত,মাঠ-ঘাট সবখানে যারা যুদ্ধ করে । এ যুদ্ধর নাম জীবন যুদ্ধ। তারা পথ-ঘাট ও রাজপথের রাজা। পথ-ঘাটই তাদের জীবনের শুরু ও শেষ এবং সেটাই তাদের কর্মক্ষেত্র তারাই পথশিশু। জীবন যুদ্ধে জীবিকার সন্ধানে যারা পথে পথে ঘুরে বেড়াই কাজের সন্ধানে,আধুনিক বিশ্ব তাদের নাম দিয়েছে শিশু শ্রমিক। বর্তমান পৃথিবীতে এরকম শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি (২৫০ মিলিয়ন)। বিশাল পৃথিবী হওয়া সত্তেও তাদের মাথা গোঁজার ঠাই থাকে না,একমুঠো ভাতের জন্য তারা যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত।বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ,দূর্বল অর্থনীতি,ঘুষ-দূর্নীতির রাজত্ব,ধ্বংসাত্বক রাজনীতি,কলুষিত সামাজিক পরিস্থিতি,বিষাক্ত সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এবং বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।
অথচ একটু সহানুভূতি আর ভালবাসা পেলে তারাও দেশের সম্পদে পরিনত হতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,তাদের প্রতি আমরা ভালবাসার বদলে ঘৃণা ও ধিক্কার ছুড়ে দেই। হতাশা ও অত্যাচার নির্যাতনে তারা অন্ধকার রাজ্যের রাজা হয়ে যায়। যা আমাদের সমাজ ও সভ্যতাকে তিলে তিলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজ তাদেরকে সহযোগিতার বদলে অন্ধকার রাজ্যে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে পথ শিশুরা মাদক নামক জীবন বিধ্বংসী নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছে। নেশার টাকা যোগাড় করার জন্য তারা লিপ্ত হচ্ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। নিন্মে বাংলাদেশের পথশিশুদের উপর মাদসক্তের প্রভাব সর্ম্পকে আলোকপাত করা হল।
বয়স তাদের ৮-১২ বছরের মধ্যে। সদরঘাট-ওয়াইজঘাট এলাকায় কয়েকটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে মহা ব্যস্ত তারা। আবার কয়েকজন একটি চটের বস্তা জড়িয়ে একযোগে ধোঁয়া ছাড়ছে যে কোউ এ চিত্র দেখলে মনে করবেন পথশিশুরা খেলছে। তবে এ শিশুরা খেলছে তাদের মুত্যু নিয়ে। মাদকের মৃত্যুনেশায় জড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর লাখো পথ শিশু। রাজধানীর ব্যস্ততম প্রতিটি এলাকায় এ ধরনের চিত্র এখন স্বাভাবিক। যারা টাকা বেশি খরচ করতে পারছে তারা সেবন করছে গাঁজা আর যারা পারছে না তারা ব্যবহার করছে ডান্ডি। আর বয়স একটু বেশি অর্থাৎ ১৩-১৫ বছরের শিশুরা নিচ্ছে নেশার ইনজেকশন।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মতে,রাজধানীতে প্রায় চার লাখ পথশিশূ রয়েছে । আর এদের বেশির ভাগই এখন নানা নেশায় আসক্ত। পথশিশুদের নেশার জগতে সবচেয়ে পরিচিত নাম ডান্ডি। মাত্র চার-পাঁচ টাকায় এ নেশা জোগাড় করা যায় বলে এ নেশা দিন দিন প্রসার লাভ করছে। একটি পলিথিন আর তার ভেতর সলিউশন(এক ধরনের রাসায়নিক আঠা যা জুতা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়) দিয়েই তাদরে নেশা চলে। পলিথিনের ভেতর সলিউশন ঢুকিয়ে নাক-মুখ দিয়ে তার গন্ধ নয়ে। এতে নেশা হয়।
অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পথশিশুদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,রাজধানীর প্রায় প্রতিটি পথশিশুই ডান্ডি নামের নেশার সাথে পরিচিত। সাধারণ মানুষ দখেলেও বুঝবে না পলিথিন মুখে লাগিয়ে শিশুরা কি করছে। হয়তো তাদের মনে হবে খেলার জন্য কিছু না পেয়ে তারা পলিথিন দিয়ে খেলছে। মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান,সাধারণত জুতায় যে সলিউশন (আটা) ব্যবহার করা হয় তা এখন অল্প বয়সী নেশাখোরদের কাছে খুবই প্রিয় । এই আঠা পলিথিনের ভেতর ঢোকালে তাতে বিশেষ গ্যাসের সুষ্টি হয়।
নিউ মার্কেট এলাকায় পথশিশু আব্দুল হাকিম (১০-১২ জানান,দিনে নেশার পেছনে খরচ হয় ১৫-২০ টাকা।তবে টাকা বেশি থাকলে বা আয় বেশি হলে পাশ্ববর্তী শাহনেওয়াজ হলের সামনে সড়কদ্বীপ থেকে গাঁজা কিনে সেবন করে। শুধু ডান্ডি নয়,এদর কাছে এক লোভনীয় মাদক হলো গাঁজা। বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি তারা এ নেশায় আসক্ত। হাকিম জানায়,অনেক পথশিশু ইনজেকশনের মাধ্যমেও নেশা গ্রহণ করছে।(তথ্যসুত্র-নিউজ ওয়েভ বাংলাদেশ ডট কম)
এ অবস্থা শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সারা দেশের শিশুশ্রমিকরা আজ নেশা নামক ভয়ংকর মাদকাসক্তে জড়িত। এক যুগ আগে পরিচালিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক সমীক্ষায় দেখা যায়,বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬৫ লক্ষ (৬.৬ মিলিয়ন) যা পৃথিবীর মোট শিশু শ্রমিকের ২.৬ অংশ। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ ই শিশু,যাদের বয়স ষোল বছরের কম। সমীক্ষায় দেখা যায়,এদের প্রতি ১০০জনে ১৯ জন শিশু শ্রমিক। আমরা কি পারি না তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে? আমাদের প্রত্যকের এ একটু সহানুভূতি এদেরকে আলোর জীবন দিতে সহায়তা করবে। আসুন না আমরা
বিজয়ের এ মাসে শপথ নিই শিশু শ্রমিকদের প্রতি সহাযোড়িতার হাত বাড়াবার,আমরা বেচেঁ থাকতে স্বাধীন এ দেশে আর একজনও শিশু শ্রমিককে নষ্টের কীট হতে দেবো না। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করব।। তাদের আলোকিত হাসিতে আমরা স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×