somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাই নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক সমাজের অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রতিফলন ঘটে তার সংস্কৃতিতে। পুরাতন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করে পুরাতন রাজনীতি ও অর্থনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা অসম্ভব। যতক্ষন সমাজ শ্রেণী বিভক্ত থাকবে, সংস্কৃতি কোনো না কোনো শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করবে এবং শ্রেণী দৃষ্টি ভঙ্গি ও মূল্যবোধকে জোরদার করতে সহায়তা করবে। অন্যান্য ব্যাপারগুলোর মতো নতুন সংস্কৃতির পুরাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চুল্লির মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে, এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধগুলোর বিস্তার ঘটে। এই সংস্কৃতি বিপ্লবের মতাদর্শগত ক্ষেত্র তৈরি করে এবং বিপ্লবী জনমত সৃষ্টিতে এবং জনগণকে জাগ্রত করতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরাতন সমাজের ছিদ্রপথে নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ইতিমধ্যে আবির্ভুত হচ্ছে: এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি হচেছ যাতে রয়েছে বিদ্রোহের চেতনা জোরদার করা, জনগণের প্রতি ভালবাসা জাগ্রত করা, সামন্তীয় শ্রেণীর ভূমিকার প্রতি ব্যঙ্গ করা, উগ্র জাতীয়তা ও বিদেশের দালালীর ভুমিকার প্রতি ব্যঙ্গ করা, পুরাতন অভ্যাস এবং প্রতিক্রিয়াশীল রীতি-নীতিগুলোর সমালোচনা করা, নারী মুক্তি ও সমতার নীতি উর্ধ্বে তুলে ধরা, উগ্র জাতীয়তা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতনের নিন্দা করা, বিপ্লবী সহিংসতার উচ্চ প্রশংসা করা, নিপীড়িতদের মধ্যে আশার সঞ্চার করা এবং তাদের লক্ষ্য চিত্রায়িত করা।
নতুন সংস্কৃতি প্রাধান্য বিস্তারকারী আধা-সামন্তবাদী, সম্প্রসারণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী সবধরনের উপাদানের সম্মিলনে গঠিত প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করবে। সাম্রাজ্যবাদের সাথে আপোষ ও খোসামোদী, শ্রমজীবী জনগণকে হেয় দৃষ্টিতে দেখা, উগ্র জাতীয়তা ও জাতিগত সংখ্যালঘুদেরকে অবজ্ঞা করা, পিতৃতন্ত্র ও পুরুষতন্ত্র, আর ভাববাদ এবং ধর্মীয় ও অবৈজ্ঞানিক মতবাদগুলোর বিরোধিতা করে নতুন সংস্কৃতি।নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সকল রূপের নিপীড়ন ও শোষনের বিরুদ্ধে সচেতন বিদ্রোহের প্রেরণা যোগাবে। এই সংস্কৃতি আধা-সামন্তবাদী, প্রতিক্রয়াশীল, সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী ধ্যান-ধারনা ও আচরন গুলোর বিরোধিতা করবে যা জনগণের বিভক্তি সৃষ্টি করে, এবং ঐসব ধ্যান-ধারনা ও আচরন তুলে ধরবে যা জনগণের মধ্যে অধিকতর সংহতি ও ঐক্য সৃষ্টি করে। এই সংস্কৃতির একটা বৈজ্ঞানিক চরিত্র রয়েছে, এটা মাথাগুলোকে অতি প্রাকৃতিক মোহগুলো থেকে মুক্ত করে এবং সক্রিয়তার সাথে বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণকে উর্ধ্বে তুলে ধরে।
নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হচ্ছে জনগণের সংস্কৃতি এবং এটা শহর ও গ্রামাঞ্চল উভয় এলাকার জনগণের বিপ্লবী স্বার্থসমূহ রক্ষা করে। এই সংস্কৃতির বিকাশ ও বৃদ্ধি নির্ভর করছে বছরের পর বছর ধরে নিপীড়িত ও অবদমিত জনগণ ও জাতিগুলোর সংস্কৃতির মুক্ত বিকাশের উপর। নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এই সংস্কৃতির বিপ্লবী উপাদানগুলোকে আত্মস্থ করে নেবে এবং বিষাক্ত আধা-সামন্তবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল উপাদানগুলো যা জাতীয় সংস্কৃতি, বাঙ্গালী সংস্কৃতি, লোক সংস্কৃতি ইত্যাদি নামে বিশেষ মর্যাদার সাথে রক্ষা করা হচ্ছে এবং উর্ধ্বে তুলে ধরা হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে। নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রধানতঃ দেশের সীমান্তভ্যন্তরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত পরস্পরের ওপর প্রভাববিস্তারকারী জাতি ও জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা এবং সংস্কৃতি ও সাহিত্য কর্মগুলো থেকে এর উপাদানগুলোর অর্জন করবে। একই সাথে নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী অগ্রসর ও বিপ্লবী সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ও পারষ্পরিক প্রভাব রয়েছে এবং সম্মিলিতভাবে একটা নতুন বিশ্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। সাম্রাজ্যবাদী এবং নিপীড়িত দেশগুলোর জনগণের সৃষ্ট প্রগতিশীল সংস্কৃতি ব্যবহার করে নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নিজেকে সমৃদ্ধ এবং আরো বিকশিত করবে। বিভিন্ন জাতীর বিভিন্ন রূপের বিপ্লবী সংস্কৃতি রয়েছে। এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব এবং একই সাথে মর্মে সাদৃশ্যের অস্তিত্ব বিভিন্ন জাতির জনগণকে বিশ্বব্যাপী তাদের একই বিপ্লবী স্বার্থ সমূহের জন্য সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করবে।
নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক সমালোচনা সংগঠিত করা এবং এটাকে জনপ্রিয় করে তোলা, প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধগুলোকে উন্মোচিত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ। নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে প্রতিক্রিয়াশীল শিল্পকর্মগুলোকে উর্ধ্বে তুলে ধরা হবে না এবং যেসব শিল্পীর কাজগুলো প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী ও সামন্তীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধগুলোকে উর্ধ্বে তুলে ধরে সেগুলো হবে জনগণের মধ্যে ব্যাপক মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক সমালোচনার বিষয়বস্তু। প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কাদির বিস্তার প্রতিক্রয়াশীল শিল্পকর্মগুলোর সমালোচনার গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিচেছ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×