somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরণ কামড় !!!(ধারাবাহিক*-৩ও৪)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩য় পর্ব:

রিফাতের একটাই মেয়ে, নাম পৃথুলা......একদিন ভাবী সহ অফিসে এসেছিল...তখন মেয়েটা দেড়বছরের মতো ..একটু আধটু কথা বলতেছিল...শুধু সালাম বলতে পারতো..।আমার ডেস্কের চেয়ারে বসে কী বোর্ড ও মাউস নিয়ে খেলছিল...।ভাবী আমাদের অফিসের সব মেয়েদের সাথে কথা বললেন...বিশেষ করে সাথী'র সাথে অনেকক্ষন কথা বললেন......। ভাবী কে যা দেখলাম খুবই আন্তরিক তবে একটু বেশি অভিমানী মনে হলো।

সাথী আমাদের কলিগ।রিফাতের সাথে সাথী'র ইন্টেমেসিটা সবার চোখে লাগতো ।সবসময় সে মেয়েটার সবকিছুতে নাকগলাতো...।অফিসে ঢুকতেই...'আরে সাথী,আপনার ড্রেসটাতো খুব সুন্দর,আপনার ডেস্কের ছোট টবে রাখা অকির্ডটা আমার চাই.আর ও কত কী',........একটা ছেলে ফেইকলী একটা মেয়েকে ইমপ্রেস করার জন্য যা যা দরকার সে সব কিছুই ট্রাই করতো। কথার ফাঁকে ফাঁকে 'আই লাভ ইউ' বলে ফেলতো। অনেক মানুষকে দেখেছি 'আই লাভ ইউ' বলার জন্য প্রায় তৃত্বীয় মহাযুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলতে ..অবশেষে ইতিহাসের অংশবিশেষ হতে না পেরে আক্ষেপ করতে......সেখানে রিফাত প্রায় অবলীলায় উক্ত বাক্যব্যয় করত।এসব কিছু নিয়ে সাথীও খুবই বিরক্ত ছিলো। একবার রিফাত, সাথীকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেলে..।পিএবিএক্স এ আমি সবাইকে পড়ে শুনায় ....সবাই খুব প্রশংসা করেছিলো ..তবে আমি আশ্চর্য্য হয়েছিলাম সাথী'র অভিব্যাক্তি দেখে।

রিফাতের এই অতি ন্যাকামী বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তাদের এই কাহিনী অফিস অতিক্রম করে ডিলারদের কানে ও বেশ মুখরোচক পান মসালায় পরিনত হলো..।অত:পর সাথী চাকরি ছেড়ে দিল।অফিসের সবাই একটু প্রতিবাদ জানাচ্ছিল..।তবে সাথীর অনুরোধে সবাই ব্যাপারটা চেপে গেল.।

রিফাতের পরিবার,চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা স্বনাম ধন্য পরিবার।সে বামপন্থি প্রগতিশীল রাজনীতি'র সাথে যুক্ত..তবে তার খালাত ভাই ও মামাত ভাইরা কিছুটা সুবিধাবাদী ও ডানপন্থি দলের ডাকসাইটে নেতা।যেহেতু আমাদের প্রশাসনে ডানপন্থিরা বেশ সক্রিয়...তাই রিফাত পারিবারিক সূত্র ধরে দুদিকের সুবিধাদি বেশ চতুরতার সাথে উপভোগ করত।
তাদের পৈত্রক বাড়ী চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গি বাজারে.....।পুরো সদরঘাট ও পাথরঘাটা এরিয়াই সে অতন্ত্য পরিচিত এক মুখ.......।'আমি একবার বাসায় দুটো টিভিতে ডিস এন্টেনার কানেকসনের জন্য একটা জ্যাক আনতে গেছিলাম তার ভটভডি চড়ে সিটিকলেজের সামনে,দোকানদার তার নাকি দুলা ভাই , অনেক খাতির করল,এবং বিনাপয়সায় জ্যাক প্রদান ও এর ব্যাবহারাদি শিখাইয়া দিল।

এরকম আর ও অনেক নমুনা আছে যা দিলে হয়তো পাঠককুল বিরক্ত বোধ করবেন আর আমাকে লক্ষচ্যূত বলে সম্মানিত করবেন..।তারপর ও বলি..ফিরিঙ্গি বাজারের প্রতিটা ফলের আড়ত,গাছের দোকান সহ সবাই রিফাতকে বেশ সমীহ করে........।

সে ব্যাক্তি জীবনে একরোখা টাইপের ছেলে।পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী দুজনই জেদী হলে যা যা ঘটে তার কিয়দংশ ও কম ঘটে নাই রিফাতের সাংসারিক জীবনে।

৪র্থ পর্ব: রিফাত'রা তিন ভাই দুইবোন।হঠাৎ স্ট্রোকে মেজভাই মারা যাওয়ার পর তার মা অসুষ্থ হয়ে পড়ে...প্রথমে তেমন কিছু ধরা পড়ে নাই..।প্রায় দুবছর যাবৎ নিয়মিত অসুখে ভোগার পর ডাক্তার ডিটেক্ট করলো 'থ্রোট ক্যান্সার'। চার - পাঁচ বার ক্যামো দেওয়া হল..তেমন কোন উন্নতি হয় নাই..বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী।তাঁর এই খারাপ সময়ের সাহায্যকারী হিসাবে দুইছেলের বউরা যথেস্ট কিন্তু ভাগ্য দুষ্ট হওয়ার কারনে বড় বউ কে সামান্য পাইলেও ছোট বউকে তেমন পায় নাই।
দুর সম্পর্কের খালাত বোন 'শায়লা' স্বামী পরিত্যাগা, সেই খালাম্মা'র সব খেয়াল রাখত।তার বিশ্বাস খালাম্মা'র দোয়ায় টার স্বামী আবার ফিরে আসবে......।

এক কথায় মেয়েটা খুব ভালো.।সে রিফাত ও তার বড় ভাইকে খুবই সম্মান করে।রিফাত ও শায়লাকে বোনের মর্যাদা দিয়ে তার অভাব, অনুযোগ, আবাদার গুলো সর্বাগ্রে পূরণ করে..।শায়লা ও পরিবারের যাবতীয় প্রয়োজনের মধ্যমণি হয়ে উঠে..।

অফিসের সর্বমহলে রিফাতের বাড়তি খাতির ।প্রথম ও প্রধান কারন হলো তার রাজনৈতিক পরিচয়, আমাদের চেয়ারম্যান স্যার ও তাকে খুব স্নেহ করেন এমন কী বাসায় ফোন করে ভাবী'র সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা খবর নিতেন।
আমার সাথে রিফাতের কখনো তেমন মনোমালিন্য ঘটে নাই..।তবে মেয়েদের ব্যাপারে তার হ্যাংলামিকে শাসন করার পর্যাপ্ত সাহস বোধহয় আমার নাই তবে এনকারেজ করতাম না..।তাকে স্মরণ করে দিতাম সে যা করছে তা ঠিক না , তার মেয়ে আছে..মেয়েটা বড় হচ্ছে..।একদিন ' আমার এক ক্লাইন্ট অভিযোগ জানাতে এসে আমাদের অফিস সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করায়, রিফাত তাকে ধরে বেদম মার দেয়.....।এজন্য আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম, ও তার সাথে প্রায় এক সপ্তাহ কথাবার্তা হয় নাই।

ইতিমধ্যে দেশীয় রাজনীতিতে উথ্থান পতনের খেলায় রিফাতের ব্যাবসা পাতিতে ও কিছুটা ভাটা পরে,তার উপরে সাংসারিক ও ব্যাক্তি জীবনে অশান্তির কারনে সে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে ফলে তার 'নারী প্রিতি' বদ অভ্যাসটার গন্ডিটাও বেশ বাড়তে লাগল।কোন মেয়ে একটু যেচে কথা বললেই সে কুপোকাত, এ প্রকৃতিতে মেয়েরা ষষ্ঠ সেন্সের অধিকারী হওয়াতে অতি সহজে রিফাতের এই দুর্বলতা বুঝত,মায়াবাণে'র মোহে ঘায়েল করত। আর রিফাত সেই রঙ্গ-রসে হাত তুলে ডু্বত।একই ফ্লোরে চাকরি করি বিধায় দেখেছি...অনেক মেয়েই তাকে চরম ভাবে ব্যবহার করে যার কিছুটা ভাবী ও জানতে পারে..তাই মাঝে মাঝে অফিসে ফোন করে রিফাতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইত।রিফাত আর মেয়েগুলোর বেহায়াপনায় অফিসে সবাই খুব বিরক্ত ছিলো..এই অবস্থার মাঝেই রিফাতের পরিবারের বারটা বাজে..................................

চলবে ............
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×